পড়ুয়াদের সঙ্গে শিক্ষক পার্থপ্রদীপ সিংহ। নিজস্ব চিত্র
গত বছর পেয়েছেন রাজ্য সরকারের দেওয়া শিক্ষারত্ন পুরস্কার। এ বার জাতীয় পুরস্কার পেতে চলেছেন লাভপুরের কালিকাপুরডাঙা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পার্থপ্রদীপ সিংহ। শনিবারই তার কাছে এসে পৌঁছেছে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন দফতরের চিঠি। ওই চিঠিতে জানানো হয়েছে, ৫ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে শংসাপত্র-সহ ৫০ হাজার টাকার চেক তাঁর হাতে তুলে দেবেন রাষ্ট্রপতি।
লাভপুর বিরাম মন্দির পল্লির বাসিন্দা পার্থবাবু ২০০৯ সালে ওই স্কুলে যোগ দেন। আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার ওই স্কুলটি এক সময় পরিকাঠামো থেকে শুরু করে পড়ুয়াদের গড় হাজিরা, পড়াশোনা সহ প্রায় প্রতিটি বিষয়েই পিছিয়ে পড়ার দলে ছিল। সেই স্কুলটিকেই কয়েক বছরের চেষ্টায় খোলনলচে বদলে দেন পার্থবাবু। স্কুলবাড়ি, শৌচাগার, ফুলবাগান, খেলার মাঠ, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে শুরু করে কি নেই! স্কুলকে নিছক পড়াশোনার গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ না রেখে কচিকাঁচাদের কাছে আর্কষণীয় করে তুলতে সংস্কৃতি মঞ্চ, আর্ট গ্যালারি, খেলনা–মুখোশ এমনকি সিনেমা এবং তথ্যচিত্র দেখার জন্য নিজস্ব প্রোজক্টরের ব্যবস্থা পর্যন্ত করে ফেলেছেন তিনি।
এতে স্কুলে পড়ুয়াদের হাজিরা বেড়েছে। ইতিমধ্যেই স্কুলের কাজে সামিল করেছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের। এক সময় ওই গ্রামে ৩/৪টি সরস্বতী পুজো হত। গত বছর থেকেই সমস্ত পুজো কমিটিকে একত্রিত করে স্কুলে একটাই পুজো চালু করেছেন। সেখান গান, নাচ, নাটকে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে যোগ দেন বাবা-মায়েরাও। উদ্বৃত্ত টাকা লাগানো হয় স্কুলের উন্নয়নে। আর তারই ফলে সামনের সারিতে চলে আসে পিছিয়ে থাকা স্কুলটি। সেই সুবাদেই ২০১৬ সালে তাঁকে শিক্ষারত্ন পুরস্কার দেয় রাজ্য। শিক্ষারত্নের পুরস্কারে পাওয়া ২৫ হাজার টাকা দিয়ে স্কুলের ছাদে ইলেক্ট্রনিক্স প্যানেল বসিয়ে রাতের আকাশ দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বইয়ে পড়া সৌরমণ্ডল গ্রহ-গ্রহান্তরের বিস্তার সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের সম্যক ধারণা তৈরি করতে ওই ব্যবস্থা।
রাষ্ট্রপতি পুরস্কার বাবদ পাওয়া টাকাও স্কুলের উন্নয়নেই কাজে লাগানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন পার্থবাবু। স্কুলচত্বরে তৈরি হয়েছে মানুষের ক্রম-বিবর্তনের স্ট্যাচু। সেগুলো রোদে-জলে নষ্ট হচ্ছে। জাতীয় পুরস্কারের টাকায় শেড তৈরি করে স্ট্যাচুগুলি সংরক্ষণের পরিকল্পনা নিয়েছেন তিনি। নিজেদের স্কুল নিয়ে এখন রীতিমতো গর্বিত পড়ুয়ারা। চতুর্থ শ্রেণির সঞ্চিতা সোরেন, মাধবী হেমব্রম, বুদ্ধদেব মাড্ডিরা জানায়, আমাদের স্কুলে কত রকম জিনিস আছে। যখন পড়তে ভাল লাগে না, তখন ওই সব জিনিস নিয়ে খেলি কিংবা সিনেমা দেখি। তাই এখন স্কুলে না এলেই খারাপ লাগে।
অভিভাবক ফাল্গুনী হেমব্রম, স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য ধনু হাঁসদারা জানান, স্কুলটাকে এখন আমরা বাড়ির মতোই মনে করি। তাই যে যে ভাবে পারি শ্রম, অর্থ দিয়ে স্যারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি।
পার্থবাবু বলেন, ‘‘স্কুলের জন্যই এই স্বীকৃতি। তাই অর্থটা স্কুলের উন্নয়নেই লাগাতে চাই। স্কুলটা অন্য রকম করে গড়ে তোলাই আমার স্বপ্ন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy