Advertisement
১৯ মে ২০২৪

প্রধান হবে কে, দড়ি টানাটানি তৃণমূলেই

দলের সদস্যরা তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের চিঠি করেছেন শুনে প্রধান নিজেই ইস্তফা দিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেই পুরুলিয়া ২ ব্লকের রাঘবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে দলের দ্বন্দ্ব চাপা থাকল না। এ বার সেই প্রধানের চেয়ার নিয়ে কাড়াকাড়িতে তৃণমূল সদস্যদের দ্বন্দ্ব নজিরবিহীন চেহারা নিল।

রাঘবপুর পঞ্চায়েতে পুলিশের টহল।—নিজস্ব চিত্র

রাঘবপুর পঞ্চায়েতে পুলিশের টহল।—নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৬ ০৮:৫২
Share: Save:

দলের সদস্যরা তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের চিঠি করেছেন শুনে প্রধান নিজেই ইস্তফা দিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেই পুরুলিয়া ২ ব্লকের রাঘবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে দলের দ্বন্দ্ব চাপা থাকল না। এ বার সেই প্রধানের চেয়ার নিয়ে কাড়াকাড়িতে তৃণমূল সদস্যদের দ্বন্দ্ব নজিরবিহীন চেহারা নিল।

পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে বৃহস্পতিবার রাতে শাসকদলের দুই জেলা পরিষদ সদস্যকে রাতে কিছু লোকজনের কাছে প্রবল হেনস্থার মুখে পড়তে হয়। শেষে তাঁদের একজনকে নিজের গাড়ি ফেলে পালাতে হল। শুক্রবার এই পঞ্চায়েতের নতুন প্রধান নির্বাচনের দিন ছিল। কিন্তু তাকে ঘিরে গত ক’দিন ধরে এলাকায় যা ঘটছে, তাতে বেজায় অস্বস্তিতে পড়েছে পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই পঞ্চায়েতে মোট ১৫টি আসন। তার মধ্যে একক ভাবে তৃণমূলের দখলে রয়েছে ১৪টি, একটি আসনে রয়েছেন নির্দল প্রার্থী। তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান মহাদেব মাহাতো নিয়মিত পঞ্চায়েতে আসেন না বলে অভিযোগ তুলে দলেরই ১০ জন ও এক নির্দল সদস্য প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন গত ২৫ মে। পরের দিনই প্রধান পঞ্চায়েত প্রধানের পদ থেকে ইস্তফা দেন।

তৃণমূল সূত্রের খবর, প্রধানের পদ পাওয়াকে ঘিরে দলের সদস্যেরা আড়াআড়ি দুই ভাগে ভাগ হয়ে যান। আগের প্রধান ইস্তফা দেওয়ার পরে এতদিন উপপ্রধান সারদা বাউরি পঞ্চায়েতের কাজকর্ম পরিচালনা করছিলেন। এই ব্লকে দলের তরফে দায়িত্বে থাকা পুরুলিয়ার পুরপ্রধান কে পি সিংহ দেওয়ের অনুগামীরা চাইছিলেন সারদাদেবী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিন। তাঁদের যুক্তি, দীর্ঘদিন রাঘবপুর থেকে কেউ প্রধান পদে বসেনি। অন্যদিকে দলের আর এক পক্ষ তাঁকে চাননি। প্রধান গঠন নিয়ে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসায় দলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোর নির্দেশে গত ২২ জুন পুরুলিয়ায় জেলা কার্যালয়ে পঞ্চায়েত সদস্যদের বৈঠকে ডাকা হয়। দলের জেলা কোর কমিটির সদস্য নবেন্দু মাহালি বলেন, ‘‘কে প্রধান হবেন তা নিয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছতেই এই বৈঠক ডাকা হয়েছিল। কিন্তু সে দিন মাত্র সাতজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।’’

এ দিকে প্রধান গঠন নিয়ে দল যেহেতু ঐক্যমত্যে পৌঁছতে পারেনি, তাই দলের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় শুক্রবার অনাস্থা প্রস্তাবের উপর ভোটাভুটি এড়ানো যাচ্ছে না। কে পি সিংহদেওয়ের অনুগামী বলে পরিচিত জেলা পরিষদ সদস্য হলধর মাহাতোর নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার থেকেই সারদাদেবীর পক্ষের সাত সদস্য এক জায়গায় ছিলেন। সে দিন সন্ধ্যায় হলধরবাবু ও এলাকার আর এক জেলা পরিষদ সদস্যা পুষ্প বাউরি পুরুলিয়া মফস্‌সল থানার গেঙাড়া গ্রামে এক সদস্যকে নিজেদের দিকে টানতে বোঝাতে যান। কিন্তু ওই সদস্যা বাড়িতে ছিলেন না। সেখানে কিছু লোকজন ওই দুই তৃণমূল নেতা-নেত্রীকে ঘিরে ধরে তুমুল বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে নিজের গাড়ি ফেলে হলধরবাবু দৌড়ে এলাকার একটি পেট্রোল পাম্পে গিয়ে আশ্রয় নেন। পুষ্পদেবী অন্য এক দলীয় কর্মীর বাড়িতে ঢুকে যান। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।

এ দিন হলধরবাবু বলেন, ‘‘ওই সদস্যার বাড়ির কাছে কিছু লো‌ক আমাদের গাড়ি ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। ওরা গাড়ির চাবি কেড়ে নেয়। অগত্যা আমি একটি পেট্রোল পাম্পে আশ্রয় নিই। হাতের কিছুটা কেটেও গিয়েছে।’’ পুষ্পদেবী অবশ্য বৃহস্পতিবারের সন্ধ্যার ঘটনা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, ‘‘যা বলার হলধরদাই বলবেন।’’

এই ঘটনার পরে এ দিন পঞ্চায়েতে প্রধান নির্বাচন নিয়ে ঝুঁকি নিতে চায়নি পুলিশ। দু’টি থানার ওসি-সহ পঞ্চায়েতের আশপাশে বেশি সংখ্যায় পুলিশ মোতায়েন ছিল। রাস্তার উল্টোদিকে দলেরই দুই গোষ্ঠীর লোকজনও হাজির হয়েছিলেন। প্রধান পদে দু’টি নাম উঠে আসে, একটি সারদাদেবী ও অন্যটি বুদ্ধদেব মাহাতোর।

শেষ পর্যন্ত গোপন ব্যালটে ভোটাভুটি করতে হয় প্রধান নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা যুগ্ম বিডিওকে। ফল বেরোতে দেখা যায়, বুদ্ধদেব মাহাতো ৮-৭ ভোটে পরাজিত করেছেন সারদাদেবীকে। প্রধান নির্বাচিত হওয়ার পরে বুদ্ধদেব বলেন, ‘‘আমাকেই বেশির ভাগ সদস্য চেয়েছেন। এ বার উন্নয়নের কাজ করব।’’

তবে তৃণমূলের রাঘবপুর অঞ্চল সভাপতি কীর্তন মাহাতো দাবি করেছেন, ‘‘এটা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নয়। কে প্রধান হবেন তা নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছিল।’’ কিন্তু দলেরই জেলা পরিষদ সদস্যকে গেঙাড়া গ্রামে হেনস্থার শিকার হতে হল কেন? কীর্তনবাবুর দাবি, ‘‘আমিও তাই শুনলাম। ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক। কী হয়েছিল খোঁজ নেব।’’

দলের জেলা কোর কমিটির সদস্য নবেন্দু মাহালি অবশ্য স্বীকার করেছেন, প্রধান গঠন ঘিরে দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ফের প্রকাশ্যে এসেছে। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘দলের বিষয়টি নিয়ে বসা উচিত।’’ জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘বিধানসভা চলছে বলে আমি কলকাতায় রয়েছি। কী ঘটেছে খোঁজ নেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Conflict
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE