Advertisement
E-Paper

বাজি ফাটল নানুরে, হতাশা সিউড়িতে

শেষ হাসিটা হাসলেন গদাধর হাজরাই। তাঁর প্রার্থীপদ নিয়েই বেশ কয়েক মাস ধরে টানাপড়েন চলছিল। প্রকাশ্যেই পরস্পরের বিরুদ্ধে কার্যত ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করেছিলেন তিনি এবং নানুরের দাপুটে নেতা কাজল শেখ।

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৬ ০২:৪৭
শুক্রবার নানুরে উচ্ছ্বাস গদাধর অনুগামীদের। ছবি- সোমনাথ মুস্তাফি।

শুক্রবার নানুরে উচ্ছ্বাস গদাধর অনুগামীদের। ছবি- সোমনাথ মুস্তাফি।

হাসছেন গদাধর

শেষ হাসিটা হাসলেন গদাধর হাজরাই। তাঁর প্রার্থীপদ নিয়েই বেশ কয়েক মাস ধরে টানাপড়েন চলছিল। প্রকাশ্যেই পরস্পরের বিরুদ্ধে কার্যত ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করেছিলেন তিনি এবং নানুরের দাপুটে নেতা কাজল শেখ। গদাধরকে হঠিয়ে তাঁর পছন্দসই কাউকে নানুর বিধানসভাকেন্দ্রে প্রার্থী হিসাবে চেয়েছিলেন কাজল। তা নিয়েই দু’পক্ষের দ্বন্দ্বে বারবার তেতে উঠেছে বিধানসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকা। খুন-পাল্টা খুনের অভিযোগে বারবার বেআব্রু হয়েছে শাসকদলের অন্তর্দ্বন্দ্ব। দু’জনকে এক টেবিলে বসিয়েও সেই দ্বন্দ্ব মেটাতে পারেননি খোদ জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলও। এলাকার বাসিন্দারা তাই ধরেই নিয়েছিলেন, এই দ্বন্দ্ব এড়াতে দলনেত্রী হয়তো বহিরাগত কাউকে নানুর কেন্দ্রে প্রার্থী করে আনবেন। শুক্রবার সব জল্পনার অবসান ঘটল। কাজল নিজে বলছেন, ‘‘দল ও দলনেত্রীর সিদ্ধান্তই শেষ কথা। এর বেশি কিছু মন্তব্য করব না।’’ আর দ্বন্দ্ব ঢাকতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন দু’দিন আগেও কাজলকে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দেওয়া গদাধরও। এ দিন তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘উন্নয়নের স্বার্থে সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই। দলের নির্দেশ পেলে কাজলের সঙ্গেও বসতে আপত্তি নেই।’’ স্বাভাবিক ভাবে খবর ছড়াতেই বাজি ফাটিয়ে উল্লাসে মেতে পড়েন গদাধরের অনুগামীরা। হয় মিছিলও। উল্টো দিকে, বিষন্ন দেখিয়েছে কাজল-গোষ্ঠীর লোকেদের। তাঁদের অনেকেরই বক্তব্য, নানুরের মতো এলাকায় দলকে শক্তিশালী করেও শীর্ষ নেতৃত্ব ‘দাদা’র কথা রাখলেন না। এই সিদ্ধান্তে তাঁরা অনেকেই তাই আহত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে কাঁটা কিন্তু রয়েই গেল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটাতে না পারলে অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। ‘‘গত পঞ্চায়েত ভোটে সব জায়গায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেও এলাকার জেলা পরিষদের আসনটিতে কিন্তু দলকে হারের মুখ দেখতে হয়েছিল। তার আসল কারণটা কিন্তু কারও কাছে গোপন নয়,’’—মনে করিয়ে দিচ্ছেন গদাধর ঘনিষ্ঠ এক নেতা।

‘বহিরাগত’ই

আঁচ করেই দু’দিন আগে নিজেদের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তাঁরা। তখনই জেলা সদরে ঘরের প্রার্থী চেয়ে পড়েছিল ক্ষোভের পোস্টার। ‘অধিবাসীবৃন্দ’ নামে থাকলেও দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেওয়া ওই পোস্টারই যেন শাসকদলের চির পরিচিত দ্বন্দ্বের ‘ছবি’ হয়ে উঠেছিল। সেই ক্ষোভকে অগ্রাহ্য করেই স্বপনকান্তি ঘোষের জায়গায় তৃণমূল প্রার্থী করল এক জন ‘বহিরাগত’কেই। কানাঘুসো যাঁর নাম শোনা যাচ্ছিল, রামপুরহাটের সেই চিকিৎসক অশোক চট্টোপাধ্যায়ই এ বার এই কেন্দ্রে শাসকদলের প্রার্থী। দলের তরফে অবশ্য যুক্তি দেওয়া হচ্ছে, অশোকবাবু কোনও ভাবেই ‘বহিরাগত’ প্রার্থী নন। তিনি রামপুরহাটের ভোটার হলেও আদতে সিউড়িরই ‘ভূমিপুত্র’। সেই যুক্তি মানতে নারাজ ‘বিক্ষুব্ধে’রা। অশোক নাম সরকারি ভাবে ঘোষণা হতেই হতাশা নামে শাসকদলের ওই বিরোধী অংশে। ঘটনা হল, ওই চিকিৎসক যে প্রার্থী হচ্ছেন, তা দলের কর্মীদের কাছে স্পষ্ট ছিল। তার পরেও যদি ‘বিরোধিতা’ জারি থাকে, তা হলে আসন্ন নির্বাচনে তৃণমূলের জন্য এই কেন্দ্রে একটা ‘কিন্তু’ থাকছেই। এ ছাড়া সিউড়ি ১ ব্লকে শাসকদলের অবস্থা মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়। কর্মী সম্মেলনে তা মেনেছেন দলীয় নেতৃত্বই। রয়েছে ‘স্বপন-কাঁটা’ও। সোজা কথায় সিউড়িতে লড়াইটা মোটেও সহজ হতে যাচ্ছে না ডাক্তারবাবুর জন্য। সে কথা মেনেই তৃণমূলের এক নেতা বলছেন, ‘‘এর সঙ্গে যদি বিপক্ষেরা (‌জোট) কোনও ভাল প্রার্থী দেয়, তা হলে সত্যিই কঠিন লড়াই!’’

নাম নেই নুরের

স্বচ্ছ ভাবমূর্তি। হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতির মতো পদে থাকা ব্যক্তি। গত নির্বাচনে মুরারই কেন্দ্রে, সেই নুরে আলম চৌধুরীকেই বাছা হয়েছিল কংগ্রেস-তৃণমূলের জোট প্রার্থী হিসাবে। তিনি হারিয়ে দিয়েছিলেন এলাকার দু’বারের জনপ্রিয় সিপিএম বিধায়ক কামরে ইলাহিকে। এলাকায় কংগ্রেসের দাপট ছিল বরাবরই। মাটিটা তৈরি করেছিলেন প্রভাবশালী প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক ও মন্ত্রী মোতাহার হোসেন। তৃমমূল সূত্রের খবর, জেতার পরে সংগঠন বাড়ানো বা কর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখায় তেমন উৎসাহ দেখাননি নুরে আলম। নিজস্ব কিছু পছন্দের মানুষের বৃত্তেই থাকতে পছন্দ করতেন। তৃণমূল পরিচালিত মুরারই ১ পঞ্চায়েত সমিতির সঙ্গেই হোক বা জেলার নেতাদের সঙ্গে, কারও সঙ্গেই তাঁর তেমন সুসম্পর্ক ছিল না বলে জেলা নেতৃত্বের একাংশের দাবি। একটি মহিলা কলেজের জমি নিয়ে বিতর্কের পরে নুরে আলমের সঙ্গে দলের দূরত্ব আরও বাড়ে। বলা যায়, নিজেকে প্রায় সমস্ত দলীয় কর্মসূচি থেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন প্রাক্তন বিচারপতি। অন্য দিকে, মন্ত্রীত্ব কেড়ে নেওয়ার পরে দলও তাঁকে এড়িয়ে চলেছে। পরবর্তী কালে পঞ্চায়েত, লোকসভা বা পুরভোট— কোনও ভূমিকাই ছিল না নুরে আলমের। এমনকী, জেলা সফরে বহুবার এলেও বিধায়ক নুরে আলমের দেখা মেলেনি মুখ্যমন্ত্রীর সভায়। তখন থেকেই যেন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এ বার বিধানসভা নির্বাচনে দল তাঁকে আর প্রার্থী করবে না। সেটাই হল।

সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুণ

শিকে ছিড়ল

গত লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হিসাবে তাঁর নাম আলোচিত হয়েছিল। কিন্তু দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত ঘনিষ্ঠ এই নেতা শেষ পর্যন্ত সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। ঠিক তখন থেকেই দুবরাজপুর বিধানসভার প্রার্থী হিসাবে বোলপুর পুরসভার উপ-পুরপ্রধান নরেশ বাউড়ির নাম নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত এ বার তাঁর শিকে ছিড়ল। তাঁরই প্রস্তুতি হিসাবে, গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দুবরাজপুর বিধানসভা এলাকার যে কোনও দলীয় কর্মসূচিতে তাঁকে দেখা গিয়েছিল। দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বোলপুরের বাসিন্দা হলেও নরেশও ‘ভূমিপুত্র’ই। ওই বিধানসভার হেতমপুর এলাকায় তাঁর জন্ম। কিন্তু যে আসনটি একবারের জন্যেও বামেরা খোয়ায়নি, সেখানে তাঁর লড়াইটা বেশ ‘কঠিন’ই। বিশেষ করে গত চার বছরে যে ভাবে দুই অশোক-গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বে এলাকায় তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব এতটা প্রকট হয়েছে। খুনের পর খুন দেখেছেন এলাকার মানুষ। তার উপরে রয়েছে জোট সম্ভাবনা। আবার একটানা ছ’বার ওই এলাকায় ঘাঁটি আগলে রেখেছেন ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক বিজয় বাগদিও। নরেশ কি পারবেন ইতিহাস বদলাতে? আশাবাদী দল।

নতুন মুখ

ময়ূরেশ্বরে অভিজিৎ রায়, সাঁইথিয়ায় নীলাবতী সাহা, মুরারই আবদুর রহমান এবং নলহাটিতে মঈনউদ্দিন শামস্।

১৯৯৮ সালে তৎকালীন জেলা যুব সভাপতির হাত ধরে তৃণমূলে এসেছিলেন অভিজিৎ। ২০০৯ সাল থেকে ময়ূরেশ্বর ১ ব্লক সভাপতির দায়িত্বে। নিজে কোনও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। তাঁর প্রার্থীপদ নিয়ে ময়ূরেশ্বর ১ ও ২ ব্লকে দড়ি টানাটানি চলছিল। ফের প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন ২ ব্লকের সভাপতি তথা গত বারের প্রার্থী জটিল মণ্ডল। জটিলের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির নালিশ ওঠার পরেই সক্রিয় ছিলেন অভিজিতের অনুগামীরা। জটিল অনুগামীদের আশাহত করে দল বেছে নিল সেই অভিজিৎকেই।

দু’-দু’বার তিনি ভোটে লড়েছিলে খোদ দলের জেলা পর্যবেক্ষকের বিরুদ্ধে। রাজনীতিতে তেমন অপরিচিত মুখ না হলেও জেলায় তাঁর আমদানি ‘নতুন’ই। ফিরহাদ হাকিমের বিরুদ্ধে লড়ে হারা ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী মঈনউদ্দিন শামসকেই এ বার প্রার্থী করা হয়েছে নলহাটিতে। তাঁর আরও একটি পরিচয় আছে ফব ছেড়ে দিদির হাত ধরা মঈনউদ্দিনের। তিনি ওই এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক তথা বামফ্রন্ট আমলে খাদ্যমন্ত্রী কলিমউদ্দিন শামসের পুত্র। ক্রমে ফিরহাদের কাছের লোক হয়ে উঠেছেন। এলাকায় থাকা ‘সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক’ তিনি জয় করতে পারবেন, এমনটাই শাসকদলের আশা। যদিও একেই ফব-র শক্তঘাঁটি, তার উপরে বাম-কংগ্রেস জোট হলে তৃণমূলের সেই আশা পূরণ হতে চাপ আছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

দিদির ‘চমক’ও পরীক্ষায় পাশ করাতে পারেনি গত বারের প্রার্থী পরীক্ষিৎ বালাকে। সাঁইথিয়ায় শাসকদল এ বার বেছে নিল আনকোরা এক বধূকে। তাঁর স্বামী অবশ্য একেবারেই অচেনা নন, পেশায় স্কুলশিক্ষিকা নীলাবতী সাহা এলাকার প্রভাবশালী নেতা দেবাশিস সাহার স্ত্রী। তবে, তেমন ‘রাজনৈতিক মুখ’ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ দলেরই একাংশ।

TMC candidate list election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy