গত পঞ্চায়েত ভোটে সংবাদের শিরোনামে এসেছিলেন পুলিশকে বোমা মারার নির্দেশ দিয়ে। এ বারের পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি সম্মেলনে কার্যত সেই পুলিশেরই ‘পক্ষ’ নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর কটাক্ষের পাল্টা দিলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।
রবিবার সাঁইথিয়ার কামদাকিঙ্কর স্টেডিয়ামে ছিল জেলা তৃণমূলের যুব ও ছাত্র সংগঠনের বুথ ভিত্তিক সম্মেলন। তাঁর মঞ্চে উঠে বিরোধীদের তীব্র আক্রমণ করে অনুব্রত বলেন, ‘‘শিবপুরের মাঠে অধীরবাবু এসেছিলেন। জানি না, উনি সেখানে ডাংগুলি বা ক্রিকেট খেলতে এসেছিলেন কিনা। তবে মাঠে মাত্র ১১টা লোক ছিল। পুলিশের সংখ্যাই তার চেয়ে বেশি ছিল। তা-ও আপনাকে (অধীর) রক্ষা করার জন্য।’’ শনিবার শিবপুরে জমি আন্দোলনকারীদের ডাকে প্রতিবাদসভায় যোগ দিয়েছিলেন অধীর। সেখানেই পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে নাম না করে পুলিশকে তিনি ‘মুখ্যমন্ত্রীর পোষা কুকুর’ বলে সম্বোধন করেন বলে তৃণমূলের দাবি। সেই সূত্রেই অধীরের বিরুদ্ধে এ দিন ক্ষোভে ফেটে পড়েন কেষ্ট। তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘কাল তুমি (অধীর) নাকি বলে গিয়েছো পুলিশ সব কুকুর। পুলিশ যদি কুকুর হয়, তা হলে দুটো তো তোমার সঙ্গেও আছে। আমার সেই মানসিকতা থাকলে অধীরবাবুকে ঢুকতেই দিতাম না। কিন্তু, সেই শিক্ষা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের দেননি।’’
আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে গত কয়েক মাস ধরেই ময়দানে নেমে পড়েছে শাসকদল। তারই প্রস্তুতি হিসাবে দলের বিভিন্ন অংশের সংগঠনের সঙ্গে লাগাতার সভা-সম্মেলন করে চলেছেন অনুব্রত। ওই সব সভায় বারবারই পঞ্চায়েতে তৃণমূল ছাড়া কেউ থাকবে না, কোনও বিরোধীকে লড়তে দেবেন না বলে এখন থেকেও হুমকি দিতে শুরু করেছেন অনুব্রত। সাঁইথিয়ায় এ দিনের ওই সম্মেলনও পঞ্চায়েত ভোটকে মাথায় রেখে ডাকা হয়েছিল। ছাত্র ও যুব সংগঠনের সম্মেলন হলেও মধ্যমণি ছিলেন কিন্তু সেই অনুব্রতই। সকাল ১১টায় সভা ডাকা হলেও তিনি এলেন ১টার পরে। তার পরেই শুরু হয়ে সভার আসল কর্মকাণ্ড।
বক্তৃতায় শুরু থেকেই বিরোধীদের চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেন অনুব্রত। কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘জেলায় ১৬৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত। সবগুলো আমরা দখল করবো তো? কোনও সিপিএম থাকবে না। কোনও বামফ্রন্ট থাকবে না। কোনও কংগ্রেস থাকবে না। কোনও দাঙ্গার দল বিজেপি থাকবে না। তাই তো?’’ কর্মীরা চিৎকার করে তাতে সম্মতিও জানান। এর পরেই আরও স্পষ্ট করে তৃণমূলের দাপুটে নেতা বলেন, ‘‘জেলার ১৯টি পঞ্চায়েত সমিতি, ৪২টি জেলা পরিষদ। সব আসনেই যেন তৃণমূল থাকে। কীভাবে করতে হবে, আপনারা আমার চেয়ে তা ভাল জানেন। দরকারে আমাকে ফোন করবেন। গরমে ভোটে কষ্ট হয়। একটু কমিয়ে দেবেন। যাতে কষ্ট না হয়।’’
অনুব্রতর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় জেলার কংগ্রেস সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি বলেন, ‘‘সব রাজনৈতিক নেতাদেরই সভায় কথা বলার সময় বাক সংযম রাখার দরকার। আর সেই সংযম কেমন হবে, তা তৃণমূলের কাছ থেকে আমাদের শিখতে হবে? ওদের নেতারা কোন ভাষায় কথা বলেন, তা সাধারণ মানুষ জানেন।’’