E-Paper

‘পথশ্রী-রাস্তাশ্রী’র অনুষ্ঠান জমায়েতে কি ভাটা, রিপোর্ট চাইল তৃণমূল

গ্রামীণ রাস্তার দুরবস্থা নিয়ে অধিকাংশ জায়গাতেই দিদির দূতদের এলাকাবাসীর কাছে অভিযোগ শুনতে হয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে যা মোটেই স্বস্তির নয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২৩ ০৭:৪৮
আড়শা ব্লকের পুয়াড়া পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূল আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভিড় কম ছিল বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র

আড়শা ব্লকের পুয়াড়া পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূল আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভিড় কম ছিল বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র

‘পথশ্রী-রাস্তাশ্রী’ প্রকল্পে পুরুলিয়া জেলার ৩২৮টি রাস্তার শিলান্যাসের প্রশাসনিক অনুষ্ঠানকে তৃণমূলের কার্যত দলীয় কর্মসূচিতে পরিণত করার অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধীরা। মঙ্গলবার প্রকল্পস্থলের আশপাশ দলীয় পতাকায় মুড়ে তৃণমূল কর্মীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গিয়েছিল। কিন্তু সর্বত্র সে ছবি দেখা যায়নি। তাতেই পঞ্চায়েত ভোটের মুখে উদ্বেগ বেড়েছে পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের। সে কারণে পথশ্রী-রাস্তাশ্রী প্রকল্পের প্রতিটি জায়গায় জমায়েত কেমন হয়েছিল, সে নিয়ে ব্লক নেতৃত্বের কাছে রিপোর্ট চাইলেন পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।

গ্রামীণ রাস্তার দুরবস্থা নিয়ে অধিকাংশ জায়গাতেই দিদির দূতদের এলাকাবাসীর কাছে অভিযোগ শুনতে হয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে যা মোটেই স্বস্তির নয়। তেমনই বেশ কিছু রাস্তা জেলার প্রস্তাবিত ৩২৮টি রাস্তার তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে। সে কারণে ২১ মার্চ জেলা তৃণমূলের বৈঠকে প্রতিটি ব্লক নেতৃত্বকে নির্দেশ দেওয়া হয়, বাসিন্দাদের দাবি মতো যে রাস্তাগুলি তৈরির কাজ সরকার করছে, তা ভাল করে প্রচার করতে হবে। সে জন্য প্রতিটি প্রকল্প স্থলে ন্যূনতম ৫০০ মানুষের জমায়েত করতে বলা হয়। যার মধ্যে মহিলাদের উপস্থিতি থাকতে হবে অর্ধেক। অনুমোদিত রাস্তায় কমপক্ষে ২৫টি দলীয় পতাকা রাখতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানিয়ে দলীয় প্রতীক-সহ ব্যানার লাগাতে হবে। তাতে মুখ্যমন্ত্রীর বড় ছবি থাকবে। একই সঙ্গে সরকারি অনুষ্ঠানের থেকে দূরত্ব বজায় রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। মন্ত্রী-বিধায়ক থেকে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধিদের বিভিন্ন জায়গায় কাজের সূচনায় থাকতে বলা হয়। সমস্ত ব্লক সভাপতি ও অঞ্চল সভাপতিদের প্রতিটি অনুষ্ঠান সফল ভাবে আয়োজন করার নির্দেশদেওয়া ছিল।

ইতিমধ্যে ‘দিদির সুরক্ষা কবচ কর্মসূচি’-ও এই জেলায় তেমন গতি পায়নি। কয়েক সপ্তাহ আগে পর্যন্ত রাজ্যের ২৩জেলার মধ্যে এই কর্মসূচিতে পুরুলিয়ার স্থান ২২ নম্বরে ছিল। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবারের কর্মসূচির মাধ্যমে পঞ্চায়েত ভোটের আগে ওই সব এলাকায় দলের সাংগঠনিক ভিত্তি কেমন, তা পরখ করে নেওয়া অন্যতম লক্ষ্য ছিল তৃণমূল নেতৃত্বের।

মঙ্গলবার পুঞ্চা ব্লকে জেলা স্তরের অনুষ্ঠানে ভিড় থাকলেও বেশ কয়েকটি ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় জমায়েতের ছবিতে দলীয় নেতৃত্ব সন্তুষ্ট নয়। সূত্রের খবর, আড়শা, পাড়া, হুড়া, পুরুলিয়া ১ ও ২, মানবাজার ২, বান্দোয়ান-সহ কয়েকটি ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় এমন ছবি দেখা গিয়েছে। তাহলে কি সংশ্লিষ্ট এলাকায় নেতাদের নেতৃত্বের রাশ আলগা হয়ে গিয়েছে— এই প্রশ্ন উঠেছে। না কি দলের প্রতি সমর্থন থাকলেও যে নেতারা জমায়েতে উদ্যোগী হয়ছিলেন, তাঁদের কারও কারও প্রতি বিরক্ত এলাকাবাসী?

তৃণমূলের এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘কোনও কোনও পঞ্চায়েতে কিছু নেতার উপরে যে মানুষ অসন্তুষ্ট তা নিয়ে দ্বিমত নেই। এতদিন তাঁরা স্থানীয় মানুষজনকে গুরুত্ব দেননি। এখন পাঁচশো লোকের জমায়েত করতে হবে বলে কে তাঁদের নির্দেশ শুনবে?’’ জঙ্গলমহলের এক নেতার অবশ্য দাবি, ‘‘ভরদুপুরে অনুষ্ঠান বলেই জমায়েত কিছুটা কম হয়েছিল। পঞ্চায়েত ভোটে অবশ্য এর কোনও প্রভাব পড়বে না।’’

জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ‘‘মানুষের চাহিদা মেনে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের তহবিল থেকে জেলার প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় রাস্তা তৈরির যে প্রকল্প নিয়েছেন, তা যাতে এলাকায় প্রভাব ফেলে, তা মাথায় রেখেই দলের তরফে আলাদা ভাবে প্রতিটি জায়গায় জমায়েত করা-সহ কয়েকটি নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিছু জায়গায় জমায়েত খুবই কম হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সেই কারণেই প্রতিটি ব্লক নেতৃত্বকে এই মর্মে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। প্রতিটি জায়গায় জমায়েত কেমন ছিল তা-ও জানাতেবলা হয়েছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

purulia TMC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy