নিবিষ্ট: চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। নিজস্ব চিত্র
‘ওই দেখা যায় তালগাছ/ ওই আমাদের গাঁ/ ওইখানেতে বাস করে/ কানাবগির ছা...।’ বাংলাদেশের কবি খান মহম্মদ মইনুদ্দিনের প্রচলিত ছড়ায় যে বর্ণনা, গ্রাম বললেই চোখের সামনে সেই তালগাছের ছবি ভেসে ওঠে। রবীন্দ্রনাথ ‘তালগাছ’ কবিতাটি শৈশবে পড়েননি, এমন বাঙালিও খুঁজে পাওয়া কঠিন।
গ্রামবাংলার সঙ্গে তালগাছও দৈনন্দিন যাপনের সঙ্গে সমান ভাবে জুড়ে। তালপাতার পুথি থেকে শিশুদের খেলনা, সিপাই বাঁশি আবার বাড়ির ছাউনি থেকে বর্ষাতি, রস থেকে নানা সুস্বাদু পদ— গোটা গাছটাই কাজে লাগে মানুষের। এখন বিকল্প সব উপায় এসে যাওয়ায় গ্রাম বাংলার এই সুপরিচিত গাছটির কদর ক্রমশ কমছে। কমছে তাল গাছের সংখ্যাও। এমন সময়ে দাঁড়িয়ে তাল-ঐতিহ্যকে ফিরে দেখতে উদ্যোগী হল খয়রাশোলের গ্রাম কদমডাঙা। গ্রামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আজ, রবিবার ‘তাল উৎসব-১৭’ নামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। তার উদ্বোধন করার কথা জেলাশাসক পি মোহন গাঁধীর।
গত বছর জেলার প্রথম প্লাস্টিক মুক্ত গ্রাম গড়ে ইতিমধ্যেই চর্চায় কদমডাঙা। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও গ্রামের মানুষ ঐকান্তিক চেষ্টায় এবং প্রশাসনের সাহায্যে প্লাস্টিকমুক্ত গ্রাম হিসেবে গড়ে তোলার পরের ধাপ, আদর্শ গ্রাম গড়ে তোলার শপথ নিয়েছে গ্রাম। পালিত হচ্ছে নানা জন-সচেতনতা মূলক কর্মসূচি। তাতে জেলা প্রশাসনের সাহায্যও পাচ্ছেন গ্রামের মানুষ। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও গ্রাম সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার গ্রামের নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল সংলগ্ন মাঠে আয়োজিত ‘তাল উৎসব’কে দু’ভাবে উপস্থাপিত করা হবে। এক দিকে থাকবে, তালের তৈরি নানা খাবারের সম্ভার। লুচি, কেক, মালপোয়া, পায়েস, জিলিপি, লাড্ডু রকমারি পিঠে, মালপোয়া-সহ নানা পদ। স্টলে থাকবেন গ্রামের ৩০টি স্বনির্ভর দলের শতাধিক মহিলা সদস্য।
অন্য দিকে চলবে তালগাছ সম্পর্কিত প্রদর্শনী। সেখানে থাকবে তালপাতা ও গাছের বিভিন্ন অংশ দিয়ে তৈরি মাথালি, মাছ ধারার ফাঁদ ঘুঘু, টুপি, পাখা, সাজি, তালাই সহ নানা কাজ। সঙ্গে তালের ইতিহাস, বাংলা ছাড়াও দেশের অন্য ভাগে ও বিদেশে তালগাছের নিয়ে নানা অজানা কথা। তালগাছ নিয়ে লেখা গল্প, কবিতা ছড়া। কী ভাবে এত দিন ধরে মানুষের কাজে লেগে এসেছে ওই গাছ, ভবিষ্যতেও জীবন-জীবিকাকে কী ভাবে আরও উন্নত করতে পারে তালগাছ, তার একটি মনোজ্ঞ প্রদর্শনীও থাকথে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হবে।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদক আব্দুর রহমান বলছেন, ‘‘আম উৎসব হতে পারে, ইলিশ উৎসব হতে পারে, কেন তাল উৎসব নয়?’’ গ্রামের আলি মহম্মদ, মিঠুন বাউড়িরা বলছেন, ‘‘শ্রাবণের শেষ থেকে ভাদ্রের প্রথম ভাগে গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে নানা তালের পদ হয়ে থাকে। সময়ের অভাবে সেই রেওয়াজ বন্ধ হওয়ার মুখে। বাচ্চারাও বোধহয় তাল কুড়িয়ে এখন আর ততটা মজা পায় না। নানা পদও হারাতে বসেছে।’’ সেই ভাবনা থেকেই কাজে লেগে পড়া। গ্রামের রিজিয়া সুলতানা, আঞ্জুমআরা বিবি, বিউটি মাজি, আজমিরা বিবিরা বলছেন, ‘‘সেরা পদ বানিয়ে নজর কাড়তে তৈরি আমরা। সুযোগ পেলে তালপাতার সামগ্রী তৈরি শিখতে চাই।’’ গ্রামের খুদের মেতেছে তালপাতার বাঁশি, ঘূর্ণি তৈরিতে। সাজসজ্জার দায়িত্ব সামলাচ্ছেন শিল্পী সৌম্যপ্রিয় পাল।
পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা প্রশাসনও। জেলাশাসক, মহকুমাশাসক-সহ একাধিক আমলা এবং স্থানীয় বিধায়কের আজ উপস্থিত থাকার কথা। মহকুমাশাসক কৌশিক সিংহ বলছেন, ‘‘তালের সঙ্গে ঐতিহ্য, জীবন-জীবিকার সম্পর্ক রয়েছে। এই ভাবনা সফল হলে অন্য জায়গাতেও তা করে দেখা যেতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy