E-Paper

ছুটেও বাবা-মা’র কাছে পৌঁছতে পারেননি অঞ্জন

সোমবার সন্ধ্যায় বোলপুর-শ্রীনিকেতন রাস্তার উপরে, বাঁধগোড়া এলাকায় একটি বহুতল আবাসনের মিটার বক্স থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে ওই বহুতলে।

বাসুদেব ঘোষ 

শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:৪৭
বহুতল আবাসনে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত দম্পতি স্বপনকুমার নন্দী ও অঞ্জু নন্দী সেন।

বহুতল আবাসনে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত দম্পতি স্বপনকুমার নন্দী ও অঞ্জু নন্দী সেন। —নিজস্ব চিত্র।

বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন মায়ের ওষুধ ও বাড়ির কিছু জিনিসপত্র আনতে। ফলে, প্রাণে বেঁচেছেন। আবাসনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, ফোনে সেই খবর পেয়ে ছুটে বাড়িতে ফিরেও কিছু করতে পারেননি অঞ্জন নন্দী! আগুন গ্রাস করে নিয়েছে বহুতল। তাতেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর বাবা-মায়ের।

সোমবার সন্ধ্যায় বোলপুর-শ্রীনিকেতন রাস্তার উপরে, বাঁধগোড়া এলাকায় একটি বহুতল আবাসনের মিটার বক্স থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে ওই বহুতলে। সেই সময় বহুতলের অধিকাংশ আবাসিক নিজেদের ফ্ল্যাটেই ছিলেন। প্রবীণ দম্পতি স্বপন কুমার নন্দী ও মা অঞ্জু নন্দী সেনও ফ্ল্যাটে ছিলেন। তাঁদের ছেলে অঞ্জন সেই সময় ওষুধ কিনতে বেরিয়েছিলেন। আগুনের খবর পেয়ে ফিরে এলেও আগুন তীব্র আকার নেওয়ায় আবাসনে ঢুকে বাবা-মায়ের কাছে পৌঁছতে পারেননি অঞ্জন। পরে দমকল কর্মীরা ওই দম্পতিকে উদ্ধার করে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠান। কিন্তু, চিকিৎসকেরা জানান, আগেই তাঁদের মৃত্যু হয়েছে।

পরিবার সূত্রে জানা যাচ্ছে, স্বপনকুমার খাদ্য পরিদর্শক পদে ছিলেন। চাকরি থেকে বেশ কয়েক বছর আগে অবসর নিয়েছেন। অবসর নেওয়ার পর থেকেই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে বাঁধগোড়ার এই আবাসনে থাকতে শুরু করেন। সোমবার সন্ধ্যায় সেই আবাসনেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ধোঁয়ায় ভরে যায় চারদিক। ধোঁয়া এবং আবাসনের বাকি আবাসিকদের হুড়োহুড়ি শুনতে পেয়ে ওই দম্পতিও প্রাণ বাঁচাতে আবাসন থেকে বাইরে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, তাঁরা পুড়ে যান।

মাত্র কিছুক্ষণের ব্যবধানে বাবা-মাকে এ ভাবে হারিয়ে কার্যত বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন অঞ্জন। সোমবার এবং মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমের কাছে কিছুই বলতে চাননি। তবে, মৃত স্বপনকুমারের ভাইঝি সঞ্চিতা সিংহ, নবনীতা দাস সেনরা বলেন, “প্রতিদিনই ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়। কাল ও ফোন না করায় মনটা কু'ডাকছিল। সংবাদমাধ্যমে এমন ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের খবর দেখতে পেয়ে রাতেই ছুটে আসি। তখন সবকিছু শেষ হয়ে গিয়েছে।”

সোমবার ওই আবাসনেই আগুন ও ধোঁয়ায় আটকে পড়েছিল এ বারের সিবিএসই বোর্ডের দশম শ্রেণির পরীক্ষার্থী পড়ুয়া যুবরাজ গুপ্ত ও তার পরিবার। তাদের কোনও রকমে সেখান থেকে উদ্ধার করে বোলপুরের একটি বেসরকারি অনুষ্ঠান ভবনে নিয়ে আসা হয়। পুরসভার তরফে সেখানেই তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার অভিঘাত সামলে কী ভাবে সে পরীক্ষায় বসবে, তা নিয়ে পরিবার সংশয়ে। যুবরাজের বাবা ওমপ্রকাশ গুপ্ত বলেন, ‘‘সামনে ছেলের পরীক্ষা রয়েছে। আবাসন সিল থাকায় ছেলের বইপত্র ঘরেই রয়ে গিয়েছে। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, দ্রুত আমাদের আবাসনে প্রবেশ করতে দেওয়া হোক। ছেলে যাতে পরীক্ষায় বসতে পারে, তার ব্যবস্থা করা হোক।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Deaths Fire Bolpur

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy