অতিবৃষ্টির জেরে স্রোত বাড়ায় ভেঙে গেল ব্রাহ্মণী নদীর পাড়ের রাস্তার একাংশ। দ্বারকা নদে জলস্ফীতির জেরে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল মল্লারপুরের ওলা গ্রামের বাসিন্দাদের। রামপুরহাট মহকুমাশাসক সৌরভ পাণ্ডে বলেন, ‘‘পরিস্থিতি নজরে রাখা হচ্ছে। পাড়ের বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয়েছে।”
মঙ্গলবার বিকেলে নলহাটি ১ ব্লকের বড়লা পঞ্চায়েতের রামপুর গ্রাম সংলগ্ন নদীর পাড়ের প্রায় ১০–১৫ ফুট অংশ জলের তোড়ে ভেঙে পড়ে। তার জেরে রদিপুর, মকরমপুর, বুজুং, পাখা, গোপগ্রাম-সহ একাধিক গ্রামে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সেচ দফতরের আধিকারিক, নলহাটি ১ ব্লকের বিডিও ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মঙ্গলবার এলাকায় যান। সন্ধ্যায় পৌঁছন রামপুরহাট মহকুমাশাসক সৌরভ পাণ্ডে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ঝাড়খণ্ডের বৈধরা জলাধারে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে সোমবার থেকে জল ছাড়া শুরু হয়। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ছাড়া হয় প্রায় ২২ হাজার কিউসেক জল। বিকেলে তা কমে দাঁড়ায় প্রায় ১৫ হাজার কিউসেকে। কিন্তু জলস্ফীতির কারণে নদীর বাঁধের তলায় গর্ত দিয়ে জল ঢুকতে থাকে। সেচ দফতরের আধিকারিকেরা গর্ত বন্ধের চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত জলের তোড়ে রাস্তার একাংশ ভেঙে যায়। মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘প্রয়োজনে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।’’
এ দিকে, দ্বারকা নদের জল বেড়ে যাওয়ায় প্রায় ২১ দিন ধরে জলবন্দি অবস্থায় বাস করছেন মল্লারপুরের ওলা গ্রামের বাসিন্দারা। তাঁরা জানান, গ্রামের কাছে দ্বারকা নদের উপর পারাপারের জন্য বছর তিনেক আগে গ্রাম্নের বাসিন্দারা নিজেরাই কজ়ওয়ে তৈরি করেছিলেন। সম্প্রতি জলের তোড়ে তা ভেঙে গিয়েছে। ফলে গ্রামবাসীরা গ্রাম থেকে যাতায়াত করতে পারছেন না।
ওলা গ্রামটি ময়ূরেশ্বর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের বাজিতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ছে। গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা আদিবাসী সম্প্রদায়ের। এ ছাড়া তফসিলি সম্পদায়ের মানুষজনও বসবাস করেন। সব মিলিয়ে প্রায় এক হাজারের উপর বাসিন্দা। তাঁদের দীর্ঘদিনের দাবি দ্বারকা নদের উপর স্থায়ী সেতু। প্রসাদ মণ্ডল, সঞ্জয় মণ্ডলরা বললেন, ‘‘গ্রাম থেকে মাঠে মাঠে আড়াই কিলোমিটার পথ হেঁটে গ্রামবাসীদের যাতায়াত করতে হচ্ছে। সেখানেও মাঠের জমি জলে ডুবে থাকায় কার্যত জলবন্দি অবস্থায় বাস করতে হচ্ছে।’’ নিমাই মণ্ডল, সনাতন টুডুদের ক্ষোভ, ‘‘কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে জল ভেঙে আড়াই কিলোমিটার পথ পেরিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হচ্ছে। নিত্য বাজারহাট করতেও গ্রাম থেকে বেরোতে অসুবিধে হচ্ছে।’’
পঞ্চায়েত প্রধান শুভেন্দু মণ্ডল বলেন, ‘‘দিন তিনেক আগে মাঠের পথ ধরে গ্রামে গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এলাকার কয়েকজন দুঃস্থ বাসিন্দাদের মধ্যে চাল ও শুকনো খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।’’ সেতু যে দরকার না মেনেছেন প্রধানও। ময়ূরেশ্বর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ওলা গ্রামের বাসিন্দাদের দুর্ভোগের কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে দ্বারকা নদের উপর সেতু বা কজ়ওয়ে নির্মাণের জন্য আবেদন জানান হয়েছিল। সম্প্রতি আদিবাসী উন্নয়ন দফতর থেকে ওলা গ্রামে একটি সেতু বা কজ়ওয়ে নির্মাণের অনুমোদন মিলেছে বলে তিনি জানান। ধীরেন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘তিন দিন আগে জেলা প্রশাসন এলাকা পরিদর্শন করা হচ্ছে। আনুমানিক দেড় থেকে দু কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু বা কজ়ওয়ে হবে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)