ইউনেস্কোর ‘বিশ্ব ঐতিহ্য ক্ষেত্র’ বা ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’-এর স্বীকৃতি পাওয়া শান্তিনিকেতনের ‘কোর জ়োন’ সংলগ্ন জায়গায় কেন রেঁস্তোরা খোলার অনুমতি দেওয়া হল, সেই প্রশ্ন তুলে বোলপুর পুরসভাকে চিঠি দিল বিশ্বভারতী।
বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনের ‘দ্বিজবিরাম’ বাড়িতে দীর্ঘকাল বসবাস করেছিলেন। জীবনের শেষ দিনগুলি এই বাড়িতেই কাটিয়েছিলেন তিনি৷ এই বাড়ি থেকে কিছুটা এগিয়ে গেলেই দেখা যাচ্ছে, একটি কংক্রিটের নির্মাণ হচ্ছে৷ পুরসভা সূত্রের খবর, এই নির্মাণকাজ করাচ্ছেন প্রাক্তন পুরপ্রধান সুশান্ত ভকতের ছেলে বিকাশ। ইতিমধ্যে বোলপুর পুরসভা সেই নির্মাণের অনুমতিও দিয়েছে৷ সেই অনুমতি অনুযায়ী জানা যাচ্ছে, সওই জায়গায় রেস্তোরাঁ খোলা হবে।
২০২৩ সালে ইউনেস্কো শান্তিনিকেতনকে 'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ' তকমা দেয়। এই 'হেরিটেজ' রক্ষা করতে একাধিক পদক্ষেপ করেছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। তাই শান্তিনিকেতনের চরিত্র ‘নষ্ট’ করে কোথাও বড় নির্মাণকাজ করা যাবে না বলেও নিয়ম ছিল। প্রশ্ন উঠেছে, বিশ্বভারতী ক্যাম্পাস ও ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের কোর জ়োন সংলগ্ন জায়গায় কী ভাবে রেস্তোরাঁ নির্মাণের অনুমতি দিল পুরসভা।
এই নির্মাণকাজ ছাড়াও বেশ কিছু বিষয় জানতে চেয়ে বোলপুরের পুরপ্রধান পর্ণা ঘোষকে বুধবার চিঠি দেন বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব অশোক মাহাতো। তিনি বলেন, “এখানে অমর্ত্য সেনের সম্পর্কে মামা ধীরেন্দ্রমোহন সেনের বাড়ি ছিল। তাই বাড়িটির ইতিহাস রয়েছে। পরে ওই জায়গাটি অন্য জন কিনে নেন। এটি ব্যক্তি মালিকানাধীন। তবে, আমরা জানতে পেরেছি এখানে রেস্তোরাঁ খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তাই আমরা পুরসভার কাছে বেশ কিছু তথ্য জানতে চেয়েছি।’’ কর্মসচিব জানান, এই নির্মাণের তিন দিকেই বিশ্বভারতী ক্যাম্পাস রয়েছে ৷ ফলে এতে ক্যাম্পাসে যানবাহন, আইন-শৃঙ্খলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের সমস্যাও হতে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা।
পুরপ্রধান পর্ণা ঘোষ বলেন, “এখনও বিশ্বভারতীর চিঠি আমি হাতে পাইনি। তবে রবীন্দ্র আদর্শ বিঘ্নিত করে কোওন কাজ যাতে না হয়, সেই চেষ্টাই করব। এর অনুমতি আগের পুরবার্ড দিয়েছে কি না, তা-ও আমায় খতিয়ে দেখতে হবে।” জায়গাটির বর্তমান মালিক বিকাশ ভকতের দাবি, “শান্তিনিকেতন হেরিটেজ তকমা পাওয়ার আগে ওই জায়গায় নির্মাণের অনুমতি আমাকে দেওয়া হয়েছে। এখানে রাবীন্দ্রিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে রেস্তোরাঁ হচ্ছে, এতে আপত্তি কোথায়?’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)