Advertisement
E-Paper

এক রাতে থানার পাশে পাঁচ দোকানে চুরি, লুঠ গৃহস্থের বাড়িতেও

সোমবার রাতের জেলা সদর সিউড়ি শহরের এই ছবি আতঙ্ক বাড়িয়েছে বাসিন্দাদের। প্রশ্ন উঠেছে, শহরটা কি তবে চোর-গুন্ডাদের মুক্তাঞ্চল হয়ে গেল? শহরের মানুষের এই প্রশ্নের সরাসরি জবাব দিতে পারেননি জেলার পুলিশ কর্তারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৬ ০৪:৪৭
চুরি হয়েছে সিউড়ি থানা সংলগ্ন এই রাস্তার ধারে থাকা একাধিক দোকানে।

চুরি হয়েছে সিউড়ি থানা সংলগ্ন এই রাস্তার ধারে থাকা একাধিক দোকানে।

দিনের আলোয় শহরের গলিতে গুলি চালিয়ে ছিনতাই। তার ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই থানার একেবারে গা ঘেঁষে থাকা একের পর এক দোকানের তালা ভেঙে চুরি। একই শহরের অন্য প্রান্তে আবার জনবহুল এলাকার এক গৃহস্থ বাড়িতে লক্ষাধিক টাকার চুরি!

সোমবার রাতের জেলা সদর সিউড়ি শহরের এই ছবি আতঙ্ক বাড়িয়েছে বাসিন্দাদের। প্রশ্ন উঠেছে, শহরটা কি তবে চোর-গুন্ডাদের মুক্তাঞ্চল হয়ে গেল? শহরের মানুষের এই প্রশ্নের সরাসরি জবাব দিতে পারেননি জেলার পুলিশ কর্তারা। তবে, জেলার নতুন পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র বলেছেন, ‘‘বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগের। পুলিশ ঘটনাগুলির তদন্ত শুরু করেছে।’’

তদন্তের এই আশ্বাসে যদিও একদমই আশ্বস্ত হতে পারছেন না সিউড়িবাসী। তাঁদের ক্ষোভ, প্রতি বারই ঘটনা ঘটে যায়, আর পুলিশ তদন্তের দোহাই দিয়ে চুপ করে যায়। কিন্তু, দুষ্কৃতীরা ধরা পড়া দূর, নতুন কোনও অপরাধও আটকাতে পারে না এই শহরের পুলিশ। এই পরিস্থিতিতে শুধু রাতেই নয়, দিনভর শহরের মোড়ে মোড়ে টহলদারির দাবি উঠছে। পাশাপাশি জেলা সদরের নিরাপত্তা আরও জোরদার করার পক্ষেই সওয়াল তুলেছেন তাঁরা।

ঘটনা হল, সোমবার সকালেই ডাঙালপাড়ায় নিজের স্কুলে আসার পথে মোটরবাইকে সওয়ার দুই ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে সোনার হার খুইয়ে ছিলেন এক শিক্ষিকা। শুধু হার ছিনিয়ে নেওয়াই নয়, রিভলভার উঁচিয়ে গুলি চালিয়ে সদর্পে হাওয়া হয়ে গিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ফের দুষ্কৃতীরাজের সাক্ষী হলেন সিউড়িবাসী। সোমবার গভীর রাতে পাঁচটি দোকানের শার্টার, দরজা ভেঙে চুরির ঘটনা তো ঘটলই। চুরির চেষ্টা হল আরও কয়েকটি দোকানে। অবাক করা ঘটনা হল, সিউড়ি থানার ঠিক পাশেই দোকানগুলির অবস্থান। আর সব চেয়ে বড় চুরির ঘটনা ঘটল সিউড়ির রবীন্দ্রপল্লি এলাকায়। অত্যন্ত জনবহুল এলাকা, চার দিকে পথবাতিতে ঝলমলে এলাকায় এসে একটি দোতলা বাড়িতে ঢুকে টাকা-গয়না হাতিয়ে নিঃশব্দে বিদায় নিল চোরেরা। প্রশ্ন উঠেছে, সিউড়ি থানার পুলিশের ‘নিষ্ক্রিয়তা’র প্রতি কতটা ‘ভরসা’ থাকলে দুষ্কৃতীরা এতটা দুঃসাহসী হয়ে উঠতে পারে?

দোকানের শার্টার ভেঙে চুরি হয়ে গিয়েছে, মঙ্গলবার ভোরেই খবর পান রেডিমেড বস্ত্র ব্যবসায়ী মামণি দাস, মনোহারি দোকানদার সন্তোষ ঘোষ, প্রায় ৭৩ বছরের বইপত্রের প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং স্টেশনারি বিক্রেতা গৌতম ঘোষেরা। প্রতিটি দোকানের ভেতর ঢুকতে চোরের দল অন্তত খান চারেক করে তালা ভেঙেছে। তবে, জিনিসত্রের দিকে নজর ছিল না। প্রত্যেকটি দোকানের ক্যাশবাক্সই ছিল মূল টার্গেট। যদিও চোরেদের হতাশ হতে হয়েছে। কারণ, কেউ-ই চোরেদের জন্য বিশাল অঙ্কের টাকা ক্যাশবাক্সে ফেলে রাখেননি। শুধুমাত্র গৌতমবাবুর দোকান থেকে দু’বাক্স সিগারেট ও পাঁচ বালতি তামাক নিয়ে গিয়েছে চোরেরা। বাসিন্দাদের একটাই প্রশ্ন, ‘‘থানার পাশে কেন এমন ঘটনা ঘটবে? এতগুলো তালা ভাঙতে নিশ্চয় অনেক সময় লেগেছে। তার পরেও মাত্র ১০ মিটার দূরের পুলিশ কিছুই শুনতে পেল না?’’ একমাত্র ‘ঘুমিয়ে’ থাকলেই এমনটা সম্ভব বলে ওই এলাকার একটা বড় অংশের দাবি।

ভেঙে ফেলা তালা দেখাচ্ছেন এক দোকানদার।

এ দিকে, কোনও আওয়াজ পাননি রবীন্দ্রপল্লির বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী শশাঙ্কশেখর সাধু এবং তাঁর স্ত্রী শেফালিদেবীরাও। অথচ দোতলার ব্যালকনির গ্রিলের বাইরে থেকে কাচের জানালা লাগানোর ফাঁক গলে চোরেরা বাড়িতে ঢুকেছিল। মাথার পাশে থাকা আলমারি ও লকার খুলে গয়না এবং নগদ টাকা নিয়েছে চোরেরা। পাশের ঘরের একাধিক তালা ভাঙা হলেও বিন্দুবিসর্গ টের পাননি বৃদ্ধ দম্পতী।তাঁ দের এক ছেলে ভিন্ রাজ্যে কর্মরত। বিবাহ সূত্রে বাইরে থাকেন দুই মেয়েও। শেফালিদেবীর কথায়, ‘‘ভোর ৪টের সময় ঘুম ভেঙে দেখি সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে। বুড়ো-বুড়ি উপরে থাকি। নীচের তলায় দু’টি পরিবার ভাড়া রয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় তাঁরাও গত রাতে কেউ কোনও আওয়াজ পাননি।’’ ভোরে শেফালিদেবীর কান্না ও হাঁকডাক শুনে সকলের ঘুম ভাঙে। তা থেকেই সন্দেহ করা হচ্ছে, চোরেরা ঘরে স্প্রে করে ঘুমপাড়ানি জাতীয় ব্যবহার করে থাকতে পারে।

পুলিশ দু’টি ক্ষেত্রেই তদন্তে এসেছিল। ঘটনাগুলিতে জড়িত সন্দেহে এখনও পর্যন্ত চার জনকে আটকও করা হয়েছে। ওই পর্যন্তই। সাম্প্রতিক পরিস্থিতির জেরে শহরের নিরাপত্তা কী ভাবে নিশ্ছিদ্র করা যায়, তা নিয়ে কোনও দিশা দেখাতে পারেননি পুলিশ কর্তারা। এ দিকে, থানা ঘেঁষে চুরির ক্ষেত্রে একটি বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করছেন অনেকেই— শহরে নেশারুদের দাপাদাপি। বিশেষ করে ব্রাউন সুগারের নেশা। দু’দিন আগেই সিউড়ি থেকে এনে ব্রাউন সুগার পাচার করার সময়ে সাঁইথিয়ায় ধরা পড়েছে দুই যুবক। শহরের নেশাগ্রস্তদের কোনও দল টাকা হাতানোর জন্য এ কাজ করে থাকতে পারেন বলে অনেকেই মনে করছেন। কিন্তু, রবীন্দ্রপল্লির বাড়িতে চুরির ঘটনার পিছনে যে পেশাদার দুষ্কৃতীরা রয়েছে, ঘটনাক্রম দেখে মোটামুটি নিশ্চিত পুলিশ।

শহরে অপরাধের সংখ্যা বাড়তে দেখে উদ্বেগ লুকিয়ে রাখেননি সিউড়ি পুরসভার পুরপ্রধান উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়ও। তিনি বলছেন, ‘‘ঘটনার কিনারা করতে পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ করছি। পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে অনুরোধ করছি। এলাকায় সন্দেহজনক কিছু নজরে এলেই তাঁরা যেন সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের নজরে আনেন।’’

মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

Sheuri Thieft Police-station
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy