হাতে ‘এনুমারেশন ফর্ম’ পেতেই আক্ষেপ বেড়েছে ভদু শেখ ও তাঁর স্ত্রী জোৎস্না বিবির। ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) কাজ শুরু হওয়ায় বীরভূমের পাইকর থানার দর্জিপাড়ার বাসিন্দা ওই দম্পতিকে বুধবারই ফর্ম দিয়েছেন ওই বুথের বিএলও। ২০০২-এর ভোটার তালিকায় ভদু ও তাঁর স্ত্রীর নাম রয়েছে। তবে দম্পতির যাবতীয় চিন্তা মেয়ে সোনালি বিবি, জামাই দানিশ শেখ ও নাবালক নাতিকে ঘিরে। কারণ, তাঁরা জানেন না, বাংলাদেশের সংশোধনাগারে বন্দি ওই তিন জন কবে দেশে ফিরবেন? জানেন না, আদৌ মেয়ে-জামাই ভোট দিতে পারবেন কি না!
২০০২ সালে পশ্চিমবঙ্গে এসআইআরের পরে যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে বাবা-মায়ের নাম থাকলে সন্তানেরা বৈধ ভোটার গণ্য হবেন বলে স্পষ্ট করেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। কিন্তু মেয়ে-জামাই-নাতিকে কেন্দ্রীয় সরকার ভারতের নাগরিক মানতে নারাজ! ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ তকমা দিয়ে তাঁদের সে দেশে ‘পুশ ব্যাক’ করা হয়েছে। এটাই কুরে কুরে খাচ্ছে সোনালির বাবা-মাকে। ভদু বলেন, ‘‘২০০২ এবং ২০২৫-এর ভোটার তালিকায় আমার ও স্ত্রীর নাম রয়েছে। তা হলে মেয়ে কী করে বাংলাদেশি হল?’’ তাঁর সংযোজন: ‘‘ওরা আদৌ দেশে ফিরবে, ভোট দিতে পারবে কি না, জানি না। আমাদের একটাই চাওয়া। দ্রুত ওদের দেশে ফেরানো হোক।’’ জ্যোৎস্না বিবি বলেন, ‘‘ভয় আরও বেশি মেয়ের গর্ভাবস্থা নিয়ে। সন্তানের জন্ম দেওয়ার সময় হয়ে এসেছে। শুনেছি, কান্নাকাটি করছে মেয়ে। কী হবে, বুঝতেপারছি না! ’’
রাজ্য পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান ও রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলামও বলছেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে নিলে, আমারও প্রশ্ন, বাবা-মা ২০০২ ও ২০২৫ সালের বৈধ ভোটার হলে তাঁদের মেয়ে কী করে বাংলাদেশি হলেন? বিজেপি সরকার অন্যায় ভাবে ওঁদের বাংলাদেশে পাঠিয়েছে। আমরা আইনের উপরে আস্থা রাখছি।’’
সোনালিদের সঙ্গেই বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জের সংশোধনাগারে বন্দি রয়েছেন একই এলাকার বাসিন্দা সুইটি বিবি ও তাঁর দুই নাবালক সন্তান।আজ, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের আদালতে এবং কলকাতা হাই কোর্টে সোনালিদের মামলা ওঠার কথা। গত ২৩ অক্টোবর অনুপ্রবেশকারী হিসেবে ধৃত ওই ছ’জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার প্রক্রিয়া শুরুর কথা ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুল হকের এজলাসে। কিন্তু সে দিন চার্জ গঠন হয়নি। আজ, চার্জ গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে।
সোনালিদের পরিবারের করা মামলায় গত ২৬ সেপ্টেম্বর কলকাতা হাই কোর্ট নির্দেশ দেয়, ওই ছ’জনকে চার সপ্তাহের মধ্যে ভারতে ফেরাতে হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার সদর্থক পদক্ষেপ করেনি বলেই অভিযোগ। হাই কোর্টের দেওয়া সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরে আদালত অবমাননার মামলা করেছে সোনালি ও সুইটি বিবির পরিবার। হাই কোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং ঋতব্রত কুমার মিত্রের বেঞ্চে উভয় পরিবারের হয়ে মামলাটি করেছেন আইনজীবী সুপ্রতীক শ্যামল। আজ, সে মামলাও শোনার কথা আদালতের।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)