Advertisement
০২ মে ২০২৪
anupam hazra

ঘরে ফিরতে চান অনুপম, জল্পনা জেলা বিজেপিতে

বিজেপির একাংশের মতে, অনুপম বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগে তৃণমূলে ‘কোণঠাসা’ হয়ে নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেতেন। ফের তৃণমূলে ফেরার জন্য একই ‘কায়দা’ নিয়েছেন।

Anupam Hazra

অনুপম হাজরা। —ফাইল চিত্র।

অর্ঘ্য ঘোষ
ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:৪৪
Share: Save:

বেশ কিছুদিন ধরে ‘বেসুরো’ গাইছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক অনুপম হাজরা। দলের দুই সাংগঠনিক জেলার সভাপতির পাশাপাশি রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে পর পর তোপ দেগেছেন তিনি। শুধু দলেরা নেতাদের বিরুদ্ধে সরব হওয়াই নয়, জেলা ও রাজ্যের নানা জায়গায় ‘কোণঠাসা’ কর্মী, সমর্থকদের সঙ্গে দেখাও করছেন অনুপম। সমাজমাধ্যমেও সরব তিনি। এর পরে বিজেপির অধিকাংশ কর্মসূচি থেকে তাঁকে ‘ব্রাত্য’ করা হয়েছে। তাঁর ওয়াই ক্যাটেগরির নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হয়েছে। তাতেও অনুপমকে ‘থামানো’ যায়নি। এতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে অনুপমকে নিয়ে বীরভূমের জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখের বক্তব্য। বিজেপির অন্দরে প্রশ্ন, তা হলে কি তৃণমূলে ফেরার পথ তৈরি করছেন অনুপম?

অনুপমকে নিয়েই সম্প্রতি কাজল বলেন, ‘‘অনুপম হাজরা শিক্ষিত ছেলে, ভাল ছেলে। ওর সঙ্গে আমি মিশেছি। ওর মতো বিজেপির যে কেউ আমাদের উন্নয়ন যজ্ঞে শামিল হতে চাইলে তাঁদের স্বাগত।’’ যা বিজেপির ‘অস্বস্তি’কে বাড়িয়ে তুলেছে। অনুপম হাজরার সঙ্গে কাজলের সুসম্পর্কের কথা রাজনৈতিক মহলে সুবিদিত। ২০১৪ সালে অনুপম যখন বোলপুরের সাংসদ নির্বাচিত হন, তখন অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে কাজলের সম্পর্ক কার্যত ‘আদায় কাঁচকলায়’। তা সত্ত্বেও অনুপমকে জেলার মধ্যে নানুরে সব থেকে বেশি লিড পাইয়ে দিয়েছিলেন কাজল। ২০১৪-এর ফল ঘোষণার দিন বোলপুর গণনাকেন্দ্রের সামনে অনুপমকে বুকে জড়িয়ে ধরলেও অনুব্রতের সঙ্গে একটি কথা বলতেও শোনা যায়নি কাজলকে। অনুপম বিজেপিতে যাওয়ার পরেও একে অন্যের বিরুদ্ধে একটিও কুবাক্য খরচ করেননি। স্বভাবতই অনুপম সম্পর্কে কাজলের সাম্প্রতিক মূল্যায়নে বিজেপির অভ্যন্তরে জল্পনা চলছে।

বিজেপির একাংশের মতে, অনুপম বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগে তৃণমূলে ‘কোণঠাসা’ হয়ে নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেতেন। ফের তৃণমূলে ফেরার জন্য একই ‘কায়দা’ নিয়েছেন। কিন্তু ‘দলবদলুর’ তকমা লেগে যাবে বলে সরাসরি তৃণমূলে যোগ দিতে পারছেন না। বিজেপির একাংশের দাবি, আসলে তিনি চাইছেন দল তাঁকে বহিষ্কার করুক।

কিন্তু বিজেপি নেতৃত্বও এই মুহূর্তে অনুপমের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। কারণ, অনুপমের সঙ্গে রয়েছেন ‘কোণঠাসা’ কর্মী-সমর্থকদের একাংশ। অনুপম যে দিকে যাবেন, তাঁরাও সে দিকে যাবেন বলে অনুমান বিজেপির একাংশ। ফলে, অনুপমের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিলে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই দু’পক্ষই জল মাপছেন বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত।

বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, ‘‘তৃণমূলের এক নেতাই তো তাঁকে দলে স্বাগত জানিয়ে রেখেছেন। তাঁদের খুশি করতে উনি হয়তো দল বিরোধী কথা বলে চলেছেন।’’ দলের বোলপুর সাংগঠনিক সভাপতি সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল বলেন, ‘‘তাঁর ব্যাপারে রাজ্য নেতৃত্বকে যা জানানোর জানিয়েছি।’’

অনুপম অবশ্য বলেন, ‘‘কাজলের সঙ্গে আমার দীর্ঘ দশ বছরের সুসম্পর্ক। সেই সুসম্পর্কের কথা মোদীজি, নাড্ডাজির পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানেন। তাই তাঁর মন্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক সমীকরণ খুঁজতে যাওয়া বোকামি। আমি তৃণমূলে যাব কি, যাব না তা সময় বলবে।’’

বিজেপির রাজ্য কমিটির সহ-সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল বলেন, ‘‘অনুপম হাজরা যা করছেন তাতে বিরোধীদের হাত শক্ত করা হচ্ছে।’’ এ ব্যাপারে ফোন করে এবং মেসেজ পাঠিয়ে কাজলের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যেখানে দলের কোর কমিটির সদস্যই স্বাগত জানিয়েছেন, সেখানে কিছু বলার থাকে না। তবে রাজ্য নেতৃত্বের অনুমোদন সাপেক্ষে শুদ্ধিকরণের মাধ্যমে কেউ দলে এলে আমাদের আপত্তি নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

anupam hazra BJP TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE