Advertisement
E-Paper

মমতার ক্ষোভে শুরু কাজ

মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভে কাজ হল ঠিকই। তবে, কাজ করতে গিয়ে গ্রামবাসীর একাংশের ক্ষোভ বাড়াল পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন।এক মাস আগের কথা। জেলা প্রশাসন সরকারের নির্দেশ মেনে কাজ করেনি বলে পুরুলিয়ার প্রশাসনিক বৈঠক থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৭ ০২:২৮
সূচনা: পুরুলিয়া ১ ব্লকের সিন্দরি হাইস্কুলে মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো ও জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায়। নিজস্ব চিত্র

সূচনা: পুরুলিয়া ১ ব্লকের সিন্দরি হাইস্কুলে মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো ও জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায়। নিজস্ব চিত্র

মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভে কাজ হল ঠিকই। তবে, কাজ করতে গিয়ে গ্রামবাসীর একাংশের ক্ষোভ বাড়াল পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন।

এক মাস আগের কথা। জেলা প্রশাসন সরকারের নির্দেশ মেনে কাজ করেনি বলে পুরুলিয়ার প্রশাসনিক বৈঠক থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে সাংবাদিকদের মুখ্যমন্ত্রী জানান, বছরে একশো দিন কাজের প্রকল্পের আওতায় স্কুলে স্কুলে মিড-ডে মিল রান্না, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র পরিস্কার রাখার কাজে আরও লোককে কাজ দেওয়ার নির্দেশ তিনি দিয়েছিলেন বছর তিনেক আগে। এতে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ ওই প্রকল্প থেকে উপকৃত হতেন। কিন্তু, পুরুলিয়া প্রশাসন সেই নির্দেশ মানেনি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মমতা।

সেই বৈঠকের এক মাসের মধ্যে মঙ্গলবার থেকে নতুন উদ্যমে ওই কাজ শুরু করল জেলা প্রশাসন। জেলাশাসক অলকেশ প্রসাদ রায় জানিয়েছেন, জেলা জুড়ে স্কুল, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, গ্রাম পঞ্চায়েত মিলে ৫,৫৯৪টি প্রতিষ্ঠানে এ দিন থেকে কাজ শুরু করা হয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘মিশন মোড’। বৃক্ষরোপণ, মিড-ডে মিলের বর্জ্য ফেলার জন্য কম্পোজিট পিট তৈরি, গাছের বেড়া লাগানো, প্রতিষ্ঠান চত্বর সাফসুতরো রাখা, মাটি সমতল করার মতো কাজ করবেন একশো দিনের প্রকল্পে নিযুক্ত জবকার্ডধারী মানুষজন।

এ দিন পুরুলিয়া ১ ব্লকের গাড়াফুসড়া পঞ্চায়েতের সিন্দরি স্কুলে ‘মিশন মোড’-এর মূল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রীর শান্তিরাম মাহাতো এবং জেলাশাসক।

অনুষ্ঠানের তাল অবশ্য কেটেছে বিক্ষোভে। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে একশো দিনের প্রকল্পে স্কুলে বা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে কাজ দেওয়াকে কেন্দ্র করে ক্ষোভ দেখিয়েছেন অনেকে। সবচেয়ে বেশি বিক্ষোভ হয়েছে পুরুলিয়া ১ ব্লকেই। ভাদসা, মিশিরডি, কেশরগড়িয়া ও আকরবাইদ— এই চারটি প্রাথমিক স্কুলে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। এর মধ্যে দু’টি স্কুলে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। তবে, অন্তত তিনটি স্কুলের বিক্ষোভে এলাকাবাসীর সঙ্গে দেখা গিয়েছে স্থানীয় বিজেপি নেতা-কর্মীদেরও। তারা শাসকদলের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগ তুলেছে।

এ দিন পুরুলিয়া ১ ব্লকের মানাড়া পঞ্চায়েত এলাকায় বিক্ষোভের খবর পেয়ে বিডিও দিব্যজ্যোতি দাস গেলে স্বনির্ভর দলের শ’দুয়েক মহিলা তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান।

একই ভাবে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে তাঁদের কেন বাদ দেওয়া হয়েছে, এই প্রশ্ন তুলে রঘুনাথপুর ২ ব্লকের নীলডি পঞ্চায়েতে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় স্বনির্ভর দলের মহিলারা। পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বাবলু মণ্ডল বলেন, ‘‘যাদের কাজের বেশি প্রয়োজন সেই ধরনের শ্রমিকদেরই এই কর্মসূচিতে কাজ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সকলেই অঙ্গনওয়াড়িতে কাজ করতে চাইছেন।” শেষে পুলিশ গিয়ে বিক্ষোভ সামলায়।

অন্য দিকে, মানবাজারের পেদ্দা প্রাথমিক স্কুলে বিক্ষোভ দেখান ওই স্কুলের রান্নার দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। গোষ্ঠীর সদস্য বিশাখা গোস্বামী, সুলেখা দত্তরা বলেন, ‘‘আমরা শুনেছি, এই স্কুলে বাইরের দু’জন লোক নিয়োগ করা হয়েছে। যারা স্কুলে ঝাঁট দেওয়া বাগান পরিষ্কার রাখা, গাছে জল দেওয়ার কাজ করবেন। আমাদের দাবি, নতুন ভাবে কাউকে নিয়োগ না করে আমাদেরই ওই কাজ দেওয়া হোক। কেননা ১২ বছর ধরে আমরা এই স্কুলের রান্না-সহ যাবতীয় কাজ করে আসছি।’’ একই কারণে বরাবাজার ব্লকের গুড়াডাঙ্গা প্রাথমিক স্কুলে তালা দিয়ে প্রধান শিক্ষককে দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখা হয়েছিল। রঘুনাথপুর ২ ব্লক বিজেপি-র সভাপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পুরুলিয়া ১ ব্লকের বিজেপি নেতা হীরু রজকের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতগুলি বেছে বেছে নিজেদের কর্মী- সমর্থকদেরই এই প্রকল্পে স্কুল, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে কাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছে।’’

জেলাশাসক জানান, বিক্ষিপ্ত ভাবে কয়েকটি জায়গায় কিছু গণ্ডগোল হয়েছে। ভুল বোঝাবুঝি থেকে তা হয়ে থাকতে পারে। এলাকার বিডিও-রা বিক্ষোভকারীদের বোঝাচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘‘এমন তো নয় যে, যাঁরা কাজ চাইবেন, তাঁদের কাজ দেওয়া হবে না। জবকার্ডধারী মানুষ কাজ দাবি করলে আমরা কাজ সৃষ্টি করব।’’

CM Mamata Banerjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy