Advertisement
E-Paper

অনাস্থায় সরে দলের দুর্নীতি নিয়ে নালিশ সহ-সভাপতির

পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরে প্রথম আড়াই বছরে অনাস্থা আনা যাবে না বিধানসভায় সম্প্রতি এই বিল পাশ হয়েছে। এরই মধ্যে শাসকদল তৃণমূলেরই সদস্যদের আনা অনাস্থায় শুক্রবার অপসারিত করা হল রঘুনাথপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি রীনা বাউরি। তিনিও তৃণমূলেরই প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৩৩

পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরে প্রথম আড়াই বছরে অনাস্থা আনা যাবে না বিধানসভায় সম্প্রতি এই বিল পাশ হয়েছে। এরই মধ্যে শাসকদল তৃণমূলেরই সদস্যদের আনা অনাস্থায় শুক্রবার অপসারিত করা হল রঘুনাথপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি রীনা বাউরি। তিনিও তৃণমূলেরই প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

রঘুনাথপুর ১ বিডিও সুনীতিকুমার গুছাইত বলেন, “এ দিনের ওই তলবি সভায় তৃণমূলের ১২ জন ও সিপিএমের ৫ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। গরহাজির ছিলেন সহ-সভাপতি সহ তৃণমূলেরই চার সদস্য। উপস্থিত সকল সদস্যই অনাস্থার পক্ষে মত দেওয়ায় সহ-সভাপতির বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা গৃহীত হয়েছে।” তিনি জানান, নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নতুন সহ-সভাপতি নির্বাচন করা হবে।” সদ্য অপসারিত রীনাদেবী অভিযোগ করেছেন, “দলের মধ্যে দুর্নীতির প্রতিবাদ করেছিলাম বলে আমাকে সরিয়ে দেওয়া হল। এই দলে আর থাকব কি না তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছি।” এ প্রসঙ্গেই মনে পড়ে যাচ্ছে, এই ব্লকেরই নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে তোলাবাজি ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সম্প্রতি পুরুলিয়ায় দলের একটি শাখা সংগঠনের কর্মিসভায় তোপ দেগেছিলেন ব্লক নেতা অঙ্কুর বাউরি। তা নিয়েও কম অস্বস্তিতে পড়তে হয়নি জেলা নেতৃত্বকে।

রঘুনাথপুর ১ ব্লকে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে বারবারই অনাস্থা আসছে দলেরই দখলে থাকা বিভিন্ন পঞ্চায়েতগুলিতে। দল সূত্রে খবর, একই কারণে ব্লকে তৃণমূলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর নেতা প্রদীপ মাজির নির্দেশে সমিতির সদস্যরা অনাস্থা এনেছিলেন সহ-সভাপতি রীনা বাউরি এবং শিশু ও নারী কল্যাণ দফতরের কর্মাধ্যক্ষ কণিকা চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে। দিন পনেরো আগে ওই দু’জনের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব সমিতির সদস্যরা জমা দেন রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসকের কাছে। সেই মতো এ দিন অনাস্থা নিয়ে তলবি সভা ডাকা হয়। দাপুটে নেতা প্রদীপবাবুর নির্দেশ মতোই অনাস্থায় সহ-সভাপতির বিরুদ্ধে মত দিয়েছেন সমিতিতে তৃণমূলের সদস্যেরা।

কিন্তু এই অনাস্থা ঘিরে প্রশ্ন উঠতে শুরু হয়েছে দলেরই অন্দরেই। বিশেষ করে যেখানে সম্প্রতি সেচমন্ত্রী তথা পুরুলিয়ার পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় পুরুলিয়ায় দলীয় সভায় অনাস্থা না আনার কড়া নির্দেশ দিয়েছেন সেখানে কী ভাবে অনাস্থায় অপসারিত করা হল সহ-সভাপতিকে? তার উপর এ দিন রীনাদেবী যে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন, তাতে করে বড়সড় প্রশ্নের মুখে ব্লক তৃণমূলের ভাবমূর্তিও।

দল সূত্রের খবর, তৃণমূলের রঘুনাথপুর ১ ব্লকের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধ দুই জেলা পরিষদ সদস্যের উদ্যোগে এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে ছাগল প্রতিপালন করার জন্য আর্থিক সাহায্য দেওয়ার একটি সরকারি অনুষ্ঠান করেছিলেন। পঞ্চায়েত সমিতিকে এড়িয়েই ওই অনুষ্ঠান করা হয় বলে অভিযোগ। সমিতির সদস্যদের হাজির না হওয়ায় নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রদীপবাবু। কিন্তু রীনাদেবী ও কণিকা চক্রবর্তী ওই অনুষ্ঠানে যান। তারপরেই দুর্নীতি-সহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তাঁদের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা হয়। পরে পরে বয়ান বদলে দায়িত্ব পালন না করার অভিযোগ তোলা হয়। কণিকাদেবীর সম্পর্কে অনাস্থা নিয়ে তলবি সভা ডাকা হয়েছে আগামী সোমবার।

রীনাদেবীর অভিযোগ, “স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক দুর্নীতিতে যুক্ত আমাদেরই দলের কিছু নেতা। আমরা তার প্রতিবাদ করেছিলাম। তারই জেরে ব্লকে আমাদের নেতা প্রদীপ মাজির নির্দেশে অনাস্থা এনে আমাকে সরিয়ে দেওয়া হল।” ঘটনা হল গোষ্ঠীগুলিকে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার বিষয়ে দুর্নীতির প্রসঙ্গ তুলে আগে প্রায় একই মন্তব্য করেছিলেন সভাধিপতি সৃষ্টিধরবাবুও।

বস্তুত রঘুনাথপুর কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী রীনাদেবীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হলেও এলাকায় রীনাদেবীর ভাবমূর্তি তেমনটা নয় বলেই বাসিন্দাদের দাবি। তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা আসার পরেই তিনি পুরো ঘটনা তুলে ধরে যোগাযোগ করেন স্থানীয় বিধায়ক থেকে শুরু করে সভাধিপতি, তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর সাথেও। এদিন তাঁর আক্ষেপ, “সবাইকে জানানোর পরেও কেউই দুর্নীতি রোধে কোনও ব্যবস্থা নিল না!” তবে এ দিন চেষ্টা করেও প্রদীপবাবুর সাথে যোগাযোগ করা যায়নি। রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি বলেন “অনাস্থা গৃহীত হলেও এখনও নতুন সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়নি।” তা হলে কি ফের রীনাদেবীকেই সহ-সভাপতি করা হতে পারে? বিশদে মন্তব্য করতে চাননি বিধায়ক। শুধু বলেন, “এটা দলের অভ্যন্তরীন বিষয়। দলের মধ্যেই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

no confidence motion raghunathpur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy