দিনভর অপেক্ষা। ওন্দার গুঁই নন্দী সমবায়ে অভিজিৎ সিংহের তোলা ছবি।
কাউন্টার সাজিয়ে বসে রয়েছে সমবায় সমিতি। অথচ আলু বেচতে আসা চাষিদের দেখা নেই দ্বিতীয় দিনেই! এমনই চিত্র দেখা গেল ওন্দার অন্যতম বৃহত্তম সমবায় সমিতি গুঁই নন্দী কৃষি উন্নয়ণ সমবায় সমিতিতে।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা। বাঁকুড়া-বিষ্ণুপুর ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের রাস্তার কয়েক মিটার দূরেই এই সমবায় সমিতি। সমিতির একটি বড় হলঘরে বৈদ্যুতিন ওজন যন্ত্র বসানো হয়েছে। ঘরের মধ্যে বুধবারের আলুর বস্তা নামানো আছে। কিন্তু এ দিন চাষিদের দেখা নেই কেন? সমিতির ম্যানেজার গৌরাঙ্গ ঘোষাল বলেন, “সকাল থেকে একজন চাষিও আসেননি। বুধবার কিনেছিলাম ৪০ বস্তা আলু। আরও ৩৪ বস্তা আলু কেনার কোটা রয়েছে আমাদের। কিন্তু চাষিদের দেখা নেই।”
সেই সময়েই একটি ছোট গাড়িতে আলু নিয়ে এলেন এক চাষি, ওন্দার বাসিন্দা সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। কয়েক কাঠা জমিতে আলু চাষ করে মোট ৫০ বস্তা তিনি আলু ফলিয়েছেন। নিজেকে একজন প্রান্তিক চাষি বলে দাবি করে সুজয়বাবু বলেন, “দর পড়ে যাওয়ায় আলু বিক্রি করিনি। এই পরিস্থিতিতে আর খদ্দেরও পাচ্ছি না। প্রশাসন জানিয়েছে, মোটে পাঁচ বস্তা করে আলু নেবে। এত কম আলু বিক্রি করে লোকসান কতটা কমবে? তাই এলাকার কেউ এলেন না। আমি একাই চলে এলাম।” তিনি পাঁচ বস্তা আলু বিক্রি করে চলে গেলেন। এরপর আরও প্রায় আধ ঘণ্টা অপেক্ষার পরে কোনও চাষির দেখা মেলেনি।
ওন্দার শানতোড় এলাকায় গিয়ে দেখা মিলল আলু চাষি দিলীপ দে-র সঙ্গে। নিজের জমি থেকে আলু তুলে মাঠেই জড়ো করছিলেন তিনি। প্রশাসন আলু কিনছে একথা তিনি জানেন। কিন্তু তাও বিক্রি করতে যাননি কেন? দিলীপবাবুর জবাব, “দু’বিঘা জমিতে ২০০ বস্তা আলু ফলেছে। এক বস্তা আলুও ব্যবসায়ীরা কেনেনি। কাজেই সরকার পাঁচ বস্তা কিনলে কিছু ক্ষতি-বৃদ্ধি হবে না।” তাঁর আক্ষেপ, সমবায় থেকে ৬২ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে তিনি আলু চাষ করেছেন, যার মধ্যে ৬ হাজার টাকা শুধু বীজ কিনতেই খরচ হয়ে গিয়েছে। পাঁচ বস্তা আলু বিক্রি করে বীজের দামটাই উঠবে না। তাঁর যুক্তি, বিক্রি করতে গেলে মোটা অঙ্কের টাকা গুনে গাড়ি ভাড়া করতে হবে। তাই পাঁচ বস্তা আলুর জন্য এত কালঘাম ঝরাতে তিনি নারাজ।
বিকেল চারটে নাগাদ গুঁই নন্দী সমবায় সমিতির ম্যানেজারকে ফোন করে জানতে চাওয়া হল কত জন চাষি এসেছিলেন। ম্যানেজার গৌরাঙ্গবাবুর জবাব, “সারাদিনে মোটে চার জন চাষি এসেছিলেন। তাঁদের কাছ থেকে মোট ২০ বস্তা আলু কেনা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৭৪ বস্তা কোটার মধ্যে ৬০ বস্তা কেনা হয়ে গিয়েছে দু’দিনে।” তাঁর নিজেরও উপলব্ধি, এত কম আলু বিক্রি করে চাষিদের আর্থিক ক্ষতিতে এর কোনও প্রভাব পড়বে না। তাই চাষিরাও আলু বিক্রি করতে আসতে চাইছেন না।
জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “বুধবার ২৮৩.১৫ মেট্রিক টন আলু কেনা হয়েছিল। এ দিন ২০০ মেট্রিক টন আলু কেনা হয়েছে।” আলু কেনার নলক্ষ্যমাত্রা বাড়াবেন কি? জেলাশাসকের কাছে এর সদুত্তর মেলেনি। তবে প্রশাসনের আধিকারিকরা জানান, আলু কেনার ক্ষেত্রে বরাদ্দও সীমিত। এ ছাড়া হিমঘরে মজুত করার মতো জায়গার যেমন অভাব রয়েছে, তেমনই শুক্রবারের পরে আর আলু রাখা যাবে না বলে হিমঘর কর্তৃপক্ষ প্রশাসনকে জানিয়ে দিয়েছে। ফলে এখনই সরকারের আলু কেনার লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধির আশা তাঁরা দিতে পারেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy