Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

এক হাতেই মূর্তি গড়েন সাজিনার বিশ্বজিত্‌

ভাগ্যটা মোটেও সঙ্গ দেয়নি তাঁর। জন্মের আগেই বাবাকে হারিয়েছেন। বছর সাতেক যখন বয়স, দুর্ঘনায় খোয়াতে হয় নিজের ডান হাতটাও। বর্তমানে স্নায়ুরোগে ভুগছেন। এত বাধা বিপত্তি থাকলেও থেমে থাকেননি বছর বিয়াল্লিশের বিশ্বজিত্‌ পাল।

তুলির টান। সিউড়ির সাজিনা গ্রামে তোলা নিজস্ব চিত্র।

তুলির টান। সিউড়ির সাজিনা গ্রামে তোলা নিজস্ব চিত্র।

দয়াল সেনগুপ্ত
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৪ ০১:০৭
Share: Save:

ভাগ্যটা মোটেও সঙ্গ দেয়নি তাঁর। জন্মের আগেই বাবাকে হারিয়েছেন। বছর সাতেক যখন বয়স, দুর্ঘনায় খোয়াতে হয় নিজের ডান হাতটাও। বর্তমানে স্নায়ুরোগে ভুগছেন। এত বাধা বিপত্তি থাকলেও থেমে থাকেননি বছর বিয়াল্লিশের বিশ্বজিত্‌ পাল। জীবনযুদ্ধে সমানে লড়ে চলেছেন সিউড়ি ২ ব্লকের সাজিনা গ্রামের এই ব্যক্তি। সরস্বতী, লক্ষ্মী, গণেশের ছাঁচের মূর্তি বা মাটির খেলনা তৈরি করা তাঁর পেশা।

চলার পথে লড়াই করার প্রেরণা পেয়েছেন মায়ের কাছ থেকে। বিশ্বজিত্‌বাবুর কথায়, “খুব ছোটবেলায় যখন জ্ঞান হয়, দেখেছি পাঁচ ভাইবোনের দায়িত্ব এ কার কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন মা। বাবা ছাঁচের ঠাকুর তৈরি করতেন। সাজিনা গ্রামের একটি বাড়িতেই শুধুমাত্র ছাঁচের মূর্তি তৈরি হত।” বিশ্বজিত্‌বাবু জানান, বাবা সুলীল পাল মারা যাওয়ার পর থেকে সেই রাশ ধরেন মা পদ্মাদেবী। নিজে এ কাজ করে যেমন সংসার চালাতেন তেমনই হাতে ধরে নিজের তিন ছেলে ও দুই মেয়েকে এ কাজ শিখিয়েছেন। মায়ের সেই লড়াইটাই সাহস যুগিয়েছে বিশ্বজিতকে। বললেন, “ছোটবেলায় ফুল পাড়তে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে ডান হাত ভেঙে গিয়েছিল। পরে তাতে পচন ধরতে শুরু করায় চিকিত্‌সক সেটা বাদ দিয়ে দেন। ছোটবেলায় সেই ক্ষতি আন্দাজ করা সম্ভব ছিল না। বড় হয়ে বুঝতে পারি এক হাত না থাকালে কতটা অসুবিধার। কিন্তু মায়ের ওই লড়াইটাই সাহস যুগিয়েছে। ধীরে ধীরে মায়ের কাছে এ কাজ শিখেছি।”

সাজিনা গ্রামের পালপাড়া ও ছাঁচের মূর্তির কথা উঠলেই পদ্মাদেবীর পাঁচ সন্তান রতন, সুবল, আরতী, গৌরী (যাঁদের বিয়ে হয়েছে গ্রামেই) ও বিশ্বজিত্‌ পালেদের কথাই বোঝেন সকলে। কারণ, পাঁচটি পরিবারই মূর্তি তৈরির পেশার সঙ্গে যুক্ত। ধনলক্ষী বা লছমি দীপাবলির রাতে গণেশের সঙ্গে পূজিত হয়। মূলত অবাঙালিদের মধ্যেই কালীপুজোর সময় বা দীপাবলিতে লক্ষ্মী-গণেশের পুজোর চল। কেউ কেউ ব্যবসায় নতুন খাতা বা হালখাতা করেন এই শুভ দিনে। সেই চাহিদার জোগান দিতে দাদা রতন পালের সঙ্গে একত্রিতভাবে চলেছে মূর্তি তৈরির কাজ। শরীর অসুস্থ থাকায় এ বার একা এ কাজ করতে পারেননি বিশ্বজিত্‌বাবু। স্বামীর সঙ্গে কাজ শিখেছেন স্ত্রী নমিতা পালও। বিশ্বজিত্‌বাবুর বড়দা রতন পাল বলেন, “আমাদের সব ভাইবোন, স্ত্রী ও বোনেদের স্বামীরাও এ কাজ শিখেছেন। কারণ এ কাজ করেই সংসার চলে আমাদের। শুধু আমরাই নই। কাজ শিখে মা-বাবাকে সাহয্য করছে ছেলে মেয়েরাও।” ধনলক্ষ্মী ও গণেশ জোড়া বিক্রি হয় ১২ টাকা থেকে শুরু করে ৬০ টাকা। তবে কালীপুজো নয় মূলত সরস্বতী পুজোতেই আমাদের ব্যস্ততা বেশি থাকে বলে জানালেন রতনবাবু। কিছু মূর্তি স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয়। কিছু মূর্তি আবার পাইকাররা এসে নিয়ে যায়। এ ভাবেই বহু বছর ধরে চলছে কারবার। আর হাতে মাত্র কয়েকটা দিন। তার পরেই দীপাবলির সময় লক্ষ্মী-গণেশ নিয়ে বাড়ির পথে পা বাড়াবেন অনেকেই। কিন্তু কেউ জানতে পারবে না, কোথায় সাজিনাগ্রাম ও বিশ্বজিতদের ছোঁয়া রয়েছে মূর্তিগুলিতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE