Advertisement
০৩ মে ২০২৪

গোপে নিয়ে কেন চুপ দল, প্রশ্ন

যোগত্যা মাধ্যমিক। কলেজে কোনওদিন পড়া হয়নি। তবু কলেজ ছাত্র নেতার তকমা এঁটে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বাঁকুড়া জেলা সহ-সভাপতির পদ পেয়েছিলেন। সেই পদের জোরেই এলাকায় দাদাগিরি থেকে সম্প্রতি সংগঠনের এক নেতাকে ঘরছাড়া করারও অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। থানায় তাঁর বিরুদ্ধে গুচ্ছ অভিযোগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাত্রসায়র শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:১৮
Share: Save:

যোগত্যা মাধ্যমিক। কলেজে কোনওদিন পড়া হয়নি। তবু কলেজ ছাত্র নেতার তকমা এঁটে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বাঁকুড়া জেলা সহ-সভাপতির পদ পেয়েছিলেন।

সেই পদের জোরেই এলাকায় দাদাগিরি থেকে সম্প্রতি সংগঠনের এক নেতাকে ঘরছাড়া করারও অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। থানায় তাঁর বিরুদ্ধে গুচ্ছ অভিযোগ। তবুও সেই পাত্রসায়রের সেই গোপে ওরফে সুব্রত দত্তর বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। দলের শীর্ষ নেতৃত্বও সব জেনে চুপ! এতে শুধু আম জনতা নয়, দলের নিচুতলার কর্মীরাও বিরক্ত। কেন গোপের বিরুদ্ধে দল কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে না, সেই প্রশ্ন উঠছে দলের অন্দরেই।

গোপের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর সক্রিয় কর্মীদের নিজের পার্টি অফিসে তুলে নিয়ে এসে মারধরের বেশ কয়েকটি অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে। বিরোধী গোষ্ঠীর পার্টি অফিস ভাঙচুরেও তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে। এলাকায় ‘দাপট’ দেখাতে ব্যবসায়ীদের মারধর করারও অভিযোগ রয়েছে গোপের বিরুদ্ধে। সেই হামলার জেরে আতঙ্কে বাজার বন্ধ পর্যন্ত হয়ে গিয়েছিল। থানা থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে এ সব করেও তিনি কী ভাবে পুলিশের নাগালের বাইরে থেকে যাচ্ছেন, তা সাধারণের কাছে বিস্ময়ের।

তবে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল, কয়েকমাস আগে। এলাকার এক বধূকে পড়শির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের না করার জন্য গোপে চাপ দিয়েছিলেন বলে নালিশ করেছিলেন বধূটির স্বামী। তাঁর আরও অভিযোগ ছিল, অভিযুক্তের কাছ থেকে মোটা টাকা খেয়ে গোপে সালিশি করে তার পক্ষেই মত দেয় এবং এর জেরে বধূটি আত্মহত্যা করে। সুনির্দিষ্ট ভাবে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরেও পুলিশ কেন গোপেকে ধরেনি, তার সদুত্তর মেলেনি।

সম্প্রতি কলেজ ছাত্র সংসদের তহবিলের টাকা তার হাতে তুলে দিতে অস্বীকার করায় পাত্রসায়র কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক দীনবন্ধু কারককে হুমকি দিয়ে ঘরছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে গোপের বিরুদ্ধে। এতেই গোপের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে জেহাদ ঘোষণা করেছে পাত্রসায়রেরই টিএমসিপি নেতৃত্ব। মঙ্গলবার ওই কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক জিয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বে ছাত্রদের এক প্রতিনিধিদল বাঁকুড়া জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ, জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী এবং জেলা টিএমসিপি সভানেত্রী চুমকি বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে গোপের নামে টাকা না পেয়ে নেতাকে ঘরছাড়া করার অভিযোগ জানান।

সেই অভিযোগ জানানোর পর দু’দিন কেটে গেলেও দলকে গোপের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। স্বভাবতই ক্ষুব্ধ তৃণমূলের একাংশ। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ বুধবার বলছিলেন, “আমি বাইরে রয়েছি। তবে পাত্রসায়র থেকে কয়েকজন ছাত্র এসেছিলেন বলে শুনেছি। অভিযোগ এখনও হাতে পাইনি।” বৃহস্পতিবার তাঁকে ফোন করা হলে অরূপবাবু ধরেননি। তবে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভানেত্রী চুমকি বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “যে অন্যায় করবে, সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট করবে সে ছাড়া পাবে না। গোপের নামে যে সব অভিযোগ উঠছে সেগুলি খতিয়ে দেখা হবে। গোপে সত্যিই অন্যায় করে থাকলে ওঁর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পাত্রসায়রে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নতুন নয়। একসময় দলের ব্লক সভাপতি স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়ের ভাবশিষ্য ছিলেন গোপে। এখন অবশ্য ছক পাল্টে নিয়েছেন। বর্তমানে তিনি স্নেহেশবাবুর কট্টর বিরোধী বলে এলাকায় পরিচিত। টিএমসিপি-র এই প্রাক্তন জেলা সহ-সভাপতি এখন জেলা যুব সভাপতি (প্রাক্তন টিএমসিপি জেলা সভাপতি) শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তুলেছেন। সম্প্রতি তৃণমূলের বিষ্ণুপুরের এক শীর্ষ নেতার সঙ্গেও গোপে ভাল বোঝাপড়া করে নিয়েছেন বলে দলের অন্দর মহলের খবর। এই খুঁটি জোরেই কি গোপে ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন? প্রশ্ন ঘুরছে দলের কর্মীদের মধ্যে।

গোপেকে অবশ্য অনেক আগে পুলিশ চারবার গ্রেফতার করেছিল। এখন জামিনে ছাড়া পেয়ে রয়েছেন। দলের মধ্যেই চাপা গুঞ্জন, যে জেলার এক যুব নেতার প্রচ্ছন্ন মদতেই গোপের এই বাড়বাড়ন্ত। তৃণমূলের এক ব্লক নেতার অভিযোগ, “গোপের কাজকর্মে দলের মুখ পুড়ছে। এত কিছুর পরেও দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কোনও হেলদোল নেই।” জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য কোনও রকম রাখঢাক না রেখেই গোপের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা মেনে নিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, “গোপেকে আমি দীর্ঘদিন ধরেই চিনি। আমি ১০ বছর ছাত্র সংগঠনের জেলা সভাপতি ছিলাম। সেই সূত্রে আমার সঙ্গে ব্লকস্তরের অনেকেরই সম্পর্ক ভাল।” তবে একই সঙ্গে তাঁ মন্তব্য, “আমার সময়ে আগে এমন ঘটনা ঘটেনি। বর্তমানে কেন এমন ঘটনা ঘটছে তা খতিয়ে দেখব। জেলা ও রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গেও আলোচনা করব।”

জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা তৃণমূলের জেলা কো-চেয়ারম্যান অরূপ চক্রবর্তী অবশ্য সাফ বলেছেন, “দলে কোনও উচ্ছৃঙ্খলতা বরদাস্ত করা হবে না। সেটা গোপে, নন্টে বা টন্টে যারই হোক না কেন। অভিযোগ এসেছে, দল খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে।” গোপের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাল্লা যত ভারী হচ্ছে, ততই সাধারণ মানুষের পাশাপাশি দলের নিচুতলার কর্মীদের মধ্যেও ক্ষোভ বাড়ছে। দল এখন গোপের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয় সে দিকেই অধীর আগ্রহে তাকিয়ে রয়েছেন সকলে। জিয়ারুল অবশ্য এ দিনও স্পষ্ট বলেছেন, “দলের অনুগত সৈনিক হিসাবে গোপের অনেক বাঁদরামি সহ্য করেছি। আর নয়। দল ব্যবস্থা না নিলে এ বার আমরাই গোপেকে উচিত শিক্ষা দেব।”

গাঁধী নিয়ে সভা। শান্তির আবেদনের আলোকে বিশ্বে মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর অবদান শীর্ষক একটি জাতীয় স্তরের আলোচনা সভা হয়ে গেল লালপুর মহাত্মা গাঁধী কলেজে। কলেজের ইতিহাস বিভাগের উদ্যোগে গত ৩ ও ৪ ডিসেম্বর এই আলোচনা সভা হয়। যোগ দিয়েছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্তব্রত পালিত, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের তনভির নাসরিন, সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌতম মুখোপাধ্যায় ও বিশ্বভারতীর এজাজ হোসেন। গৌতমবাবু বলেন, “আজ সারা বিশ্বে সম্রাট অশোক থেকে মহাত্মা গাঁধীর যে শান্তির পথ সামাদৃত হচ্ছে তাই ছিল আলোচনার বিষয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

patrasayar subrata dutta gope tmc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE