পুরভোটের বিজ্ঞপ্তি এখনও জারি হয়নি। ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ হতেও দেরি আছে। এরই মধ্যে শাসক-বিরোধী তরজায় সরগরম হয়ে উঠেছে বাঁকুড়া শহর।
পুরসভার নানা কাজে পুর আধিকারিকদের পাঁচ বছরের যাতায়াত বাবদ খরচ এক সঙ্গে অনুমোদন করাতে সোমবার কাউন্সিলরদের বোর্ড মিটিং ডেকেছিলেন তৃণমূলের পুরপ্রধান শম্পা দরিপা। বিষয়টিতে আপত্তি তুলে বৈঠক বয়কট করেন বাম কাউন্সিলরেরা। পরে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে পাঁচ বছরের বিল এক সঙ্গে অনুমোদন করানো ‘বেআইনি’ বলেও তোপ দেগেছিলেন বাঁকুড়া পুরসভার বিরোধী দলনেত্রী, সিপিএমের শিউলি মিদ্যা। শম্পাদেবীর প্রতি তাঁর কটাক্ষ ছিল, “চেয়ারে বসার আগে পুরপ্রধান বলেছিলেন, তিনি পুরসভা থেকে টাকাপয়সা নেবেন না। ওই সবই ভাঁওতাবাজি ছিল।”
এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার শম্পাদেবী পাল্টা তোপ দেগেছেন তাঁর পূর্বসূরি শিউলিদেবীর বিরুদ্ধে। নিজের দফতরে সাংবাদিকদের ডেকে শম্পাদেবী এ দিন ২০১০ সালের ২১ এপ্রিলের বোর্ড মিটিংয়ের নথিপত্র তুলে ধরেন। তখন পুরপ্রধান ছিলেন শিউলিদেবী। বৈঠকের নথি নিয়ে বর্তমান পুরপ্রধান তিনি দেখান বাম আমলেও পাঁচ বছরের পুরসভার কাজে ব্যবহৃত গাড়ির যাতায়াত বিল একসঙ্গে অনুমোদন করানো হয়েছিল। শম্পাদেবীর দাবি, “নোংরা রাজনীতির খেলায় নেমেছে বামেরা। পাঁচ বছরের যাতায়াত খরচ এক সঙ্গে অনুমোদন করা হয় বাম আমলেও। তার পরেও ওঁরা এ নিয়ে প্রশ্ন তোলে কী করে?”
শম্পাদেবীর দফতরেই উপস্থিত ছিলেন বাঁকুড়া পুরসভার অ্যাকাউন্ট্যান্ট গৌতম মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমার দীর্ঘ চাকরি জীবনে এই পুরসভায় প্রতিবারই পাঁচ বছরের যাতায়াত খরচ এক সঙ্গে অনুমোদন করাতে দেখেছি।” এই ভাবে এক সঙ্গে পাশ করানো কি নিয়ম-বিরুদ্ধ নয়? শম্পাদেবী বলেন, “বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমার আগের পুরপ্রধানরাও একই ভাবে বিল অনুমোদন করিয়ে এসেছেন। তবে, যদি বিষয়টি আইনসঙ্গত না হয়, তাহলে পরবতর্ীর্ পুরবোর্ড পদ্ধতি পরিবর্তন করতেই পারে।”
এর পরেই শম্পাদেবী গত পাঁচ বছরে তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের কাজকর্মের খতিয়ান তুলে ধরেও বিরোধী নেত্রীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন শম্পাদেবী। তাঁর দাবি, পানীয় জল প্রকল্পে ২ কোটি টাকার কাজ হয়েছে। যে সব জায়গায় কল ছিল না, সেখানে কল বসানো হয়েছে। শহরে বিবেকানন্দ পার্ক গড়া হয়েছে। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থেকে নষ্ট হতে বসা নজরুল পার্ককে নতুন করে সাজিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। শহরে প্রচুর নতুন রাস্তা হয়েছে। পুরনো রাস্তার সংস্কারও হয়েছে। এ ছাড়া, শহর জুড়ে পথবাতি বসানো হয়েছে জানিয়ে শম্পাদেবী বলেন, “বিরোধী নেত্রীর সত্ সাহস থাকলে তাঁর পাঁচ বছরে কী কাজ হয়েছে, সে-সবের খতিয়ান তুলে ধরুন। উন্নয়ন নিয়ে একটাও প্রশ্ন তুলতে পারবেন না জেনেই এখন যাতায়াতের বিল নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।” বর্তমান পুরপ্রধানের আরও দাবি, পুরপ্রধান হিসেবে ব্যক্তিগত ভাবে তিনি সান্মানিক ভাতা বা যাতায়াতের খরচ নেন না। বরং ৩ লক্ষ টাকা সান্মানিক পুরসভাতেই জমা রয়েছে। এ দিন পুরসভায় থাকা ১ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল কাউন্সিলর সঞ্চিতা লাহাও শম্পাদেবীর সুরে শিউলিদেবীকে কটাক্ষ করে বলেন, “পাঁচটা বছর পার হয়ে গেল। শিউলিদেবী কোনও আন্দোলন করলেন না, কোনও বিষয়ে মুখও খুললেন না। এখন ভোট আসছে জেনে গলা ফাটাচ্ছেন!”
শিউলিদেবীর জবাব, “আমি কী উন্নয়ন করেছি, তার খতিয়ান পুরসভাতেই আছে। শম্পাদেবী চাইলে তা দেখে নিতে পারেন।” উল্টে তাঁর অভিযোগ, তৃণমূল ক্ষমতায় থাকাকালীন পুরসভায় অসম উন্নয়ন হয়েছে। নিজের অনুগামী কাউন্সিলরদের ওয়ার্ডেই টাকা ঢেলেছেন পুরপ্রধান। শিউলিদেবীর আরও দাবি, পাঁচ বছরে পুর-এলাকার একটি পুকুরও সংস্কার হয়নি। বস্তি এলাকার শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। একটাও স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ে ওঠেনি। বস্তি এলাকার যা উন্নয়ন হয়েছে, তা বাম আমলের প্রকল্পে। নতুন করে কিছুই হয়নি পাঁচ বছরে। তাঁর কথায়, “শুধু রাস্তায় বাতি দিয়ে বা দু-একটা রাস্তা বানিয়ে, পার্ক গড়লেই উন্নয়ন হয় না। সার্বিক ভাবে গত পাঁচ বছরে এই পুরসভা পিছিয়ে পড়েছে।” আর সঞ্চিতাদেবীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাঁর বক্তব্য, “উনি তো বোর্ডের বৈঠকেই আসেন না। তাহলে উনি কী করে জানবেন, আমরা আগে প্রতিবাদ করেছি কিনা।”
বিরোধীদের ওয়ার্ডে উন্নয়ণের কাজও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ২২ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর স্বরূপ সেনও। তাঁর বক্তব্য, “আমার ওয়ার্ডে কয়েকটি প্রকল্পের কাজ হচ্ছিল। তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর পিছনে শাসক দলের চক্রান্ত রয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। অবিলম্বে কাজ শুরু না হলে আন্দোলনে নামব।” শম্পাদেবী অবশ্য বলেছেন, “এই ধরনের নোংরা রাজনীতি আমরা করি না।”
সব মিলিয়ে ভোটের ঢের আগেই তরজায় তাতছে বাঁকুড়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy