Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

গম আত্মসাতে অভিযুক্ত প্রধান

সম্বলহীন এক বিধবার সরকারি ত্রাণের গম আত্মসাতের অভিযোগ উঠল খোদ পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে। প্রাপ্য গম ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বিডিও-র কাছে আর্জি জানিয়েছেন ওই বিধবা। বিজেপি পরিচালিত ময়ূরেশ্বর পঞ্চায়েতের ঘটনা। প্রধান অবশ্য আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৪২
Share: Save:

সম্বলহীন এক বিধবার সরকারি ত্রাণের গম আত্মসাতের অভিযোগ উঠল খোদ পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে। প্রাপ্য গম ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বিডিও-র কাছে আর্জি জানিয়েছেন ওই বিধবা। বিজেপি পরিচালিত ময়ূরেশ্বর পঞ্চায়েতের ঘটনা। প্রধান অবশ্য আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

সহায় সম্বলহীনদের জন্য বিনামূল্যে মাসিক ১২ কেজি হারে স্থায়ী ত্রাণ হিসাবে খাদ্যদ্রব্য বরাদ্দ রয়েছে। মাসিক হারে বরাদ্দ থাকলেও কয়েক মাস অন্তর একসঙ্গে ওই ত্রাণ বিলি দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘটনা হল, দীর্ঘদিন ধরে ওই ত্রাণ বরাদ্দ রয়েছে স্থানীয় আরতি লেটের নামে। কিন্তু গত সেপ্টেম্বর মাসে অন্যান্য উপভোক্তারা তাঁদের প্রাপ্য পেলেও, ওই বিধবা তা পাননি বলে অভিযোগ।

প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ত্রাণ বিলির ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত মাস্টাররোলে উপভোক্তার সই করিয়ে টোকেন দেন। সেই টোকেন নথিভুক্ত রেশন ডিলারকে জমা দিলে প্রাপ্য খাদ্যদ্রব্য মেলে। যদি কোনও ক্ষেত্রে প্রাপক নিজে সরাসরি হাজির হতে না পারেন, সে ক্ষেত্রে তাঁর ভোটার পরিচয় পত্র দেখিয়ে টোকেন সংগ্রহ করতে পারেন আত্মীয়রা। সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত সদস্যের সুপারিশেও টোকেন পেতে পারেন আত্মীয়রা। ওই পঞ্চায়েতের স্থায়ী সরকারি ত্রাণ (জি’আর) বণ্টনের দায়িত্ব রয়েছে স্থানীয় কামারহাটির রেশন ডিলারের উপর।

রেশন দোকান এবং পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, আরতিদেবীর নামে গত সেপ্টেম্বরে বকেয়া ৬ মাসের মোট ৭২ কেজি গমের জন্য টোকেন দেওয়া হয়। সেই টোকেন-এর নম্বর ছিল ২৭। সেটি জমা করেই গম তুলে নেওয়া কথা।

আরতিদেবী বলেন, “আমি বা আমার কোনও আত্মীয় পঞ্চায়েত থেকে টোকেন সংগ্রহ করেনি। গমও তুলিনি। অন্যদের কাছে খবর পেয়ে পঞ্চায়েতে গিয়ে জানতে পারি, আমার টোকেন নাকি বিলি করে দেওয়া হয়েছে।” ডিলারও সাফ জানিয়ে দেয় ওই টোকেন-এ গমও তুলে নেওয়া হয়েছে। বস্তুত এর পর থেকেই প্রশাসনের দরজায় ঘুরে ঘুরে হয়রান হয়ে পড়েছেন ষাটোর্দ্ধ ওই বিধবা। জানা গেল, ওই গমটুকুই তাঁর ভরসা। দীর্ঘদিন আগে স্বামীকে হারিয়েছেন। একমাত্র ছেলে, সেও এখন থাকে আলাদা সংসারে।

আরতিদেবী বলেন, “এমনিতেই ন’মাসে-ছ’মাসে ত্রাণের গমও মেলে। ‘ত্রাণ পেলে ফেরত দেব’-এই প্রতিশ্রুতিতে পাড়া-পড়শির কাছ থেকে চাল ধার করে পেট চালাই। কিন্তু সেই বকেয়া মেটাতে না পারায় কেউ আর নতুন করে ধার দিতে চাইছেন না। তাই কার্যত কোনওমতে অর্ধাহারে দিন কাটছে আমার।” তাঁর অভিযোগ, “সবকিছু জানানো স্বত্ত্বেও ডিলার বা, প্রধান কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।”

ডিলার নিত্য দে অবশ্য বলছেন, “পঞ্চায়েতের দেওয়া টোকেন অনুসারেই আমি গম দিয়েছি। তাই এক্ষেত্রে আমার কোনও ভূমিকাই নেই।” তাঁর দাবি, “সমস্ত উপভোক্তাকে চিনে রাখা সম্ভব নয়।” ডিলার জানান, বার্ধক্যজনিত কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে উপভোক্তারা নিজে আসতে পারেন না। সেক্ষেত্রে টোকেন নিয়ে তাঁর মনোনীত কেউ বরাদ্দ তুলে নিয়ে যান। কী বলছেন প্রধান?

আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রধান ফুলমনি মাড্ডি। তিনি বলেন, “উপভোক্তারা নিজে হাজির হতে না পারলে এলাকার পঞ্চায়েত সদস্যের চিহ্নিতকরণ কিংবা ভোটার কার্ড দেখেই তাঁর আত্মীয়কে টোকেন দেওয়ার কথা। এক্ষেত্রে কি হয়েছে তা খতিয়ে না দেখে কিছু বলতে পারছি না।” বিডিও-র কাছে আর্জি জানিয়েছেন ওই বিধবা। ময়ূরেশ্বর ২ নং ব্লকের বিডিও সৈয়দ মাসুদুর রহমান বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অপরাধ প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

wheat mayureswar panchayat head
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE