বলা হয়েছিল, কলকাতায় গেঞ্জি কারখানায় কাজ মিলবে। মজুরিও খুব খারাপ নয়। খাওয়া বাদ দিয়ে দিনে ১০০ টাকা। সেই টোপ দিয়ে পুরুলিয়ার মানবাজার ও বোরো থানা এলাকা থেকে প্রায় পাঁচ মাস আগে শবর সম্প্রদায়ের ১৩ জন কিশোরকে পাচার করে দেওয়া হয় রাজস্থানের জয়পুরে। প্রত্যেকের গড় বয়স ১৪। ওই কিশোরদের সেখানে জরির কারখানায় অমানুষিক খাটানো হচ্ছে জেনে তাদের ফেরাতে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন অভিভাবকেরা।
ইতিমধ্যেই ওখানে কাজ করতে যাওয়া বছর তেরোর নিতাই শবর নামে এক কিশোর মারা গিয়েছে। গুরুতর অসুস্থ নিতাইকে গত শনিবার জয়পুর থেকে ট্রেনে তুলে দেয় কারখানার লোকজন। চলন্ত ট্রেনেই মারা যায় ছেলেটি। নিতাইয়ের সঙ্গী রাজীব শবর অবশ্য গ্রামে ফিরেছে। পাচারের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মানবাজার, বোরো এবং কেন্দা থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। পুরুলিয়ার এসপি নীলকান্ত সুধীরকুমার বলেন, “ওদের কী ভাবে উদ্ধার করা যায়, দেখছি।”
কাশিডি গ্রামের শুকদেব শবর বলেন, “আমার ছেলে আকাশ ওই দলে আছে। ভেবেছিলাম, কলকাতায় কাজ করে কিছু রোজগার করলে সংসারের কাজে লাগবে। এই ক’মাসে ছেলের সাথে ফোনে একবার মাত্র কথা হয়েছে। ও কান্নাকাটি করছিল। বাড়ি ফিরে আসতে চাইছিল।” ওই দলে একমাত্র পূর্ণবয়স্ক ছিলেন এই বিশ্বনাথ। তাঁর দাবি, “ছেলে নিতাইকে ছেড়ে থাকতে পারব না জেনে, ওরা আমাকেও সঙ্গে নিয়েছিল। আসানসোল থেকে সুনীল ফিরে আসে। সকাল ন’টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নাগাড়ে কাজ করতে হত। দুপুরে একবার খাওয়ার জন্য ছাড় ছিল।”
রাজীব জানায়, তারা ওখানে শাড়িতে জরি ও বুটিক বসানোর কাজ করত। সামান্য গাফিলতিতেই জুটত বেদম মার। একটা পাহাড় ঘেরা বাড়িতে রাখা হয়েছিল তাদের। বাইরে বেরনোর উপায় ছিল না। রাজীবের কথায়, “আমাদের দু’জনের মোবাইল ছিল। সেগুলো ওরা রেখে দিয়েছিল। কাজ শেষ হওয়ার পর আমাদের তালা দিয়ে চলে যেত। দু’জন লোক সব সময় পাহারায় থাকত।”
খেড়িয়া শবর কল্যাণ সমিতির কর্মী ভীম মাহাতো জানান, বোরো থানায় সুনীল শবর ও ইউসুফ মালের নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়। ৮ নভেম্বর হঠাৎ ফোনে জানতে পারেন, নিতাইয়ের খুব শরীর খারাপ। ওকে রাজীবের সঙ্গে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
রাজীব বলে, “আমাদের দু’জনকে শনিবার সকালে ট্রেনে তুলে দেওয়া হয়। ওই রাতেই নিতাই ট্রেনে মারা যায়।” আসানসোলে রেলপুলিশ তার দেহ নামিয়ে পাঠিয়ে দেয় আসানসোল জেলা হাসপাতালের মর্গে। বিশ্বনাথের কথায়, “গাড়ি ভাড়ার টাকা জোগাড় করতে না পারায় ছেলের দেহ আর ফেরাতে পারিনি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy