Advertisement
০১ মে ২০২৪
বিতর্ক সিউড়িতে

ঠিকাদারের হাতে জল সরবরাহ ব্যবস্থা

যে কোনও অনুষ্ঠান বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে পানীয় জলের জোগান মেটাতে ট্যাঙ্কারে করে জল সরবরাহ করে পুরসভা। তার জন্য ট্যাঙ্কারের আয়তন বা জলধারণের ক্ষমতা অনুসারে নির্ধারিত মূল্য দিতে হয় পুরবাসীকে।

এ বার থেকে ঠিকাদাররাই ট্যাঙ্কে করে জল সরবরাহ করবে। দিতে অতিরিক্ত টাকাও।—নিজস্ব চিত্র।

এ বার থেকে ঠিকাদাররাই ট্যাঙ্কে করে জল সরবরাহ করবে। দিতে অতিরিক্ত টাকাও।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৪ ০০:২৬
Share: Save:

যে কোনও অনুষ্ঠান বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে পানীয় জলের জোগান মেটাতে ট্যাঙ্কারে করে জল সরবরাহ করে পুরসভা। তার জন্য ট্যাঙ্কারের আয়তন বা জলধারণের ক্ষমতা অনুসারে নির্ধারিত মূল্য দিতে হয় পুরবাসীকে। সেই পরিষেবাই মাসিক ত্রিশ হাজার টাকার বিনিময়ে এ বার থেকে ঠিকাদারদের হাতে তুলে দিল সিউড়ি পুরসভা। শুধু তাই নয়, এখন পানীয় জলের ট্যাঙ্কার নিতে হলে ট্রাঙ্কার প্রতি প্রায় দ্বিগুন মূল্য চোকাতে হবে পুরবাসীকে বলেই পুরসভা সূত্রে খবর। এক দিকে ঠিকাদারদের হাতে তুলে দেওয়া, অন্য দিকে দ্বিগুন মূল্য দেওয়ার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে এলাকায়। যদিও সিউড়ির তৃণমূল পুরপ্রধান উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “সর্বসম্মতিক্রমে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রথমত পুরবাসীকে উন্নত পরিষেবা দেওয়ার পাশাপাশি উক্ত পরিষেবার বিনিময়ে পুরসভার সাধারণ তহবিলের কিছুটা আয়ও বাড়বে। তবে নির্ধারিত মূল্য দ্বিগুন করা হয়নি।” এই ঘটনায় শুধু শহরবাসী নয়, কাউন্সিলরদের একাংশ মনে করছেন পরিষেবার বদলে ব্যবসায়িক দিকটিই বেশি প্রাধান্য দিল পুরসভা।

হঠাত এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হল কেন?

পুরসভা সূত্রে খবর, ২৫০, ৫০০ এবং ১০০০ গ্যালন জলধারণের ক্ষমতা সম্পন্ন মোট ৩৮টি ট্যাঙ্কার রয়েছে সিউড়ি পুরসভায়। মাপ অনুযায়ী সেগুলি যথাক্রমে ২৫০, ৪০০ এবং ৮০০ টাকায় পারিবারিক অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া নিতেন পুরবাসী। যদিও পুরসভারই একটি সূত্র জানাচ্ছে, ১৫০, ৩০০ এবং ৫০০ টাকার বিনিময়েই ট্যাঙ্কার পৌঁছে যেত বাড়িতে বাড়িতে। এ বার সেই ট্যাঙ্কারগুলি ব্যাক্তিগত প্রয়োজনে ভাড়া নিতে যাথক্রমে ৩০০, ৬০০ এবং ১০০০ টাকা ভাড়া গুনতে হবে পুরবাসীকে। শুধু তাই নয়, এ বার থেকে দুর্গাপুজো, ঈদ বা খেলা-র মতো সামাজিক উত্‌সবের কর্মকর্তাদেরকেও পানীয় জলের ট্যাঙ্কার নিতে গেলে তেলের খরচ দিতে হবে। যা আগে লগত না। উজ্জ্বলবাবু জানিয়েছেন, কয়েক বছর ধরেই এই খাতে যে আয় হয়েছে, তা খুব সামান্যই। অনেক মাসেই ওই খাত থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হত না। তা ছাড়া ট্রাক্টর (যেটা দিয়ে বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয় ট্রাঙ্কারগুলি) যন্ত্রাংশ বিকল হলে মাঝে মধ্যেই পরিষেবা মার খাচ্ছিল। তাই এই সিদ্ধান্ত।

কার্যত বিরোধী শূন্য পুরসভা হলেও বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর কিছু কাউন্সিলরের ব্যাখ্যা, পুরপ্রধানের দাবি সত্যি হলে যেখানে পাঁচ হাজার টাকা উঠতে সমস্যা, সেই পরিষেবা বেসরকারি হাতে তুলে দিলে রাতারতি আয় বেড়ে যায় কী ভবে? আসলে এতদিন টাকাটা কারও কারও পকেটে যেত। যেটা নিয়ে বিরোধ থাকায় এই রাস্তা ধরা হল। বিক্ষুব্ধ তৃণমূল শিবিরের বলে পরিচিত বাবন দাসের বক্তব্য, “সর্বসম্মতি বলে কিছুই হয়নি। তবে ওই খাতে আসা টাকা যাতে নয়-ছয় না হয়, তাই ৬ মাসের জন্য ঠিকা দেওয়ার প্রস্তাবে আমরা সম্মতি দিয়েছিলাম মাত্র। তবে সেই সঙ্গে পরিষেবা ঠিকায় দিলে প্রয়োজনীয় শর্তাবলী দিয়ে একটি রেজোলিউশন করার কথা ছিল। কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বৈঠক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রেজোলিউশন ছাড়াই ঠিকায় দিয়ে দেওয়া হয় ওই পরিষেবা। গত ১ জুন সেটা ঠিকাদরদের হতে গেলেও ২৬ জুন রেজোলিউশনের কপি হাতে পেয়েছেন কাউন্সিলররা। তাতেও শর্তাবলীর উল্লেখ করা নেই। আমরা পরিষেবার উপর কড়া নজর রাখছি। সমস্যা হলে প্রতিবাদ করব।”

অন্য দিকে, পুরসভার একমাত্র কংগ্রেস কাউন্সিলর ইয়সিন আখতার বলছেন, “পরিষেবা আর ব্যবসার মধ্যেই গুলিয়ে গিয়েছে বিষয়টি। পুরসভার কাজ পরিষেবা দেওয়া। নির্ধারিত মূল্য দিয়ে যে পরিষেবা মানুষ পেতে পারতেন সেটা নিতে গিয়ে কেন ঠিকাদারের দ্বারস্থ হতে হবে মানুষকে? তাও আবার বেশি টাকা দিয়ে?” প্রায় একই রকম প্রতিক্রিয়া মিলেছে শহরবাসীর কাছ থেকেও। শহরের বাসিন্দা আবুলকালাম আজাদ, বরুণ দাস, মুরাদ আলিদের ক্ষোভ, “ঠিকা দেওয়ার বিষয়টিকে মোটেই ভালো চোখে দেখছি না আমরা। যে পরিষেবা পুরসভার দেওয়ার কথা, সেটা নিতে কেন আমাদের ঠিকাদারের কাছে যেতে হবে? তা ছাড়া আর্থসামাজিক অবস্থানের বিষয়টি খেয়াল করলে, যে টাকায় মানুষ প্রয়োজনে পানীয় জলের ট্যাঙ্কার বাড়িতে নিয়ে আসতে পরত, সেই পরিষোবা পেতে বেশি টাকা গুনতে হলে তা সাধারণ মানুষের কাছে সমস্যার সন্দেহ নেই।” পুরপ্রধান অবশ্য বলছেন, “পরিষেবা পেতে কোনও সমস্যা হবে না। হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

water supply system overseer suri municipality
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE