Advertisement
২২ মে ২০২৪

দিল্লিতে ডাক, চিন্তায় আদিত্য

পুরুলিয়ার বরাবাজারের প্রত্যন্ত গ্রাম কাঁদোয়া থেকে দিল্লিতে দৌড়ের ডাক পেয়েছেন এক প্রতিবন্ধী তরুণ। কিন্তু সর্বভারতীয় স্তরের ওই ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় যাওয়ার খরচ জোগাড় করতে হিমসিম খাচ্ছেন আদিত্য মাহাতো নামের ওই তরুণ ক্রীড়াবিদ। টাকা জোগাড় না হলে আদৌ তিনি ওই প্রতিযোগিতায় নামতে পারবেন কি না তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।

আদিত্য মাহাতো।

আদিত্য মাহাতো।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বরাবাজার শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৫ ০০:২৫
Share: Save:

পুরুলিয়ার বরাবাজারের প্রত্যন্ত গ্রাম কাঁদোয়া থেকে দিল্লিতে দৌড়ের ডাক পেয়েছেন এক প্রতিবন্ধী তরুণ। কিন্তু সর্বভারতীয় স্তরের ওই ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় যাওয়ার খরচ জোগাড় করতে হিমসিম খাচ্ছেন আদিত্য মাহাতো নামের ওই তরুণ ক্রীড়াবিদ। টাকা জোগাড় না হলে আদৌ তিনি ওই প্রতিযোগিতায় নামতে পারবেন কি না তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।

আগামী মে মাসে দিল্লিতে প্রতিবন্ধীদের সর্বভারতীয় স্তরের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আসর বসছে। কাঁদোয়া গ্রামের যুবক আদিত্য ওই প্রতিযোগিতায় এ রাজ্যের প্রতিনিধি হয়ে ১০০ মিটার দৌড়ে নামার সুযোগ পেয়েছেন। সে জন্য মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই ট্রায়ালের জন্য তাঁকে দিল্লি যেতে হবে। কিন্তু কী ভাবে তিনি যাবেন? আদিত্যর বাড়ির আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। ফলে দিল্লি যাতায়াতের খরচ জোগাড় করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন দৃষ্টিহীন ওই তরুণ।

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর পুরুলিয়া জেলা কমিটির অন্যতম সদস্য বরাবাজারের বাসিন্দা ভীম মাহাতো জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতার জন্য তাঁরা নির্বাচিত কয়েকজন অ্যাথলেটকে কলকাতায় পাঠিয়েছিলেন। সাইয়ের তত্ত্বাবধানে যুবভারতী স্টেডিয়ামে প্রতিবন্ধীদের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হয়। ১৮ জানুয়ারি ১০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় আদিত্য একটি বিভাগে রাজ্যের সেরা হয়েছিলেন। তিনি নিজেও প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর সদস্য। ভীমবাবুর কথায়, “আদিত্যর বাড়ির আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। এই সুযোগ পেলেও যাতায়াতের টাকা জোগাড় না হওয়ায় প্রতিযোগিতায় উনি যোগ দিতে পারবেন কি না সন্দেহ আছে।”

সাইয়ের কোচ মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানান, চলতি মাসেই দিল্লিতে বিভিন্ন রাজ্যের দৃষ্টিহীন প্রতিযোগীদের নিয়ে ট্রায়াল হবে। পুরুলিয়ার আদিত্য মাহাতো দৃষ্টিহীন প্রতিযোগীদের ১০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় রাজ্যের সেরা হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন। মে মাসে দিল্লিতে সর্বভারতীয় স্তরের প্রতিযোগিতাটি ২- ৯ জুন পর্যন্ত চলবে। ভাস্করবাবু আরও জানান, দৃষ্টিহীনদের দু’টি বিভাগ রয়েছে। যাঁরা অল্প দেখতে পান এবং যাঁরা একেবারেই দেখতে পান না। আদিত্য প্রথম বিভাগে রয়েছেন। ট্রায়াল ও চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার জন্য যাতায়াতের খরচ প্রতিযোগীকে বহন করতে হবে।

বরাবাজারের বান্দোয়ান-বানজোড়া অঞ্চলের কাঁদোয়া গ্রামটি একেবারে প্রত্যন্ত এলাকায়। সামান্য জমিতে চাষ করে চার মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে বাস বলদেব মাহাতোর। তাঁর বড় ছেলে আদিত্যকে ৯০ শতাংশ প্রতিবন্ধী বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু দারিদ্র কিংবা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। সাধারণ স্কুল থেকে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন। মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়াই তাঁর অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। রাইটার পাওয়া যায়নি। পরে সংবাদপত্রে খবরের জেরে তাঁকে রাইটার দেওয়া হয়। সেই আদিত্য ২০১৪ সালে বরাবাজারের কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন।

এরপরেই তাঁর যোগাযোগ হয় প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর সদস্যদের সঙ্গে। নিজেও ওই সম্মিলনীর সদস্য হয়ে যান। তাঁর কথায়, “ছোট বেলা থেকেই আর পাঁচটা শিশুর মতো আমারও খেলাধুলোর শখ ছিল। কিন্তু চোখে দেখতে না পাওয়ায় ওদের সঙ্গে খেলতে পারিনি। স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাতেও নামতে পারিনি। তবে সেই সুযোগ করে দিয়েছিল প্রতিবন্ধী সম্মিলনী।” তিনি জানান, ওই সম্মিলনী মারফৎ জানতে পারেন, কলকাতায় তাঁদের মতোই দৃষ্টিহীনদের জন্য ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হবে। তিনি নাম লেখান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দিল্লিতে ডাক পাবেন, এবং টাকার অভাবে তা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে তখন এতটা ভাবতে পারেননি।

আদিত্যর বাবার কথায়, “সামান্য চাষ করে সংসার চলে না। এ ছেলেকে দিল্লিতে পাঠাব কী করে?” ঘটনাটি জেনে বরাবাজারের বিডিও অনিমেষকান্তি মান্না বলেন, “আদিত্য আমার কাছে এলে পঞ্চায়েত সমিতির সঙ্গে কথা বলে ওকে কী ভাবে সাহায্য করা যায় দেখব।”

আদিত্য অবশ্য বসে নেই। এখন বাড়ির সামনে নিজেই নিয়ম করে দৌড়ে যাচ্ছেন। পড়শিদের কেউ কেউ যে এ নিয়ে বিদ্রুপ করেন না, তা নয়। তাই কিছুটা আড়ালেই অনুশীলন চালাচ্ছেন তিনি। আর বলছেন, “রাজ্যের মুখ উজ্জ্বলের সুযোগ পেয়ে গিয়েছি। হাতছাড়া করব না। খুব জোরে দৌড়তে হবে আমাকে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

aditya mahato barabazar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE