তৃণমূলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বে এলাকায় সন্ত্রাশের আবহ। রাজনৈতিক খুন থামছে না। পুলিশও নিজের ভূমিকা ঠিক ভাবে নিতে পারছে না। এলাকার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট হয়ে ব্যবসা মার খাচ্ছে। এই সব অভিযোগ তুলে শুক্রবার সকালে প্রতিবাদে ব্যবসা বন্ধ রেখে পথে নামল খয়রাশোলের ব্যবসায়ী সমিতি। সমিতির মিছিলে পা মেলালেন এলাকার বহু শান্তিপ্রিয় মানুষও। খয়রাশোলে যখন এটা ঘটছে, তার ঘণ্টাখানেক পরে সন্ধ্যাতেই জেলায় আরও একটি রাজনৈতিক খুন হয়েছে। দলের জেলা নেতৃত্ব অস্বীকার করলেও দুবরাজপুর পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ আবুল কালামের খুনের ঘটনায় দলের বহু চর্চিত গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের কথাই উঠে এসেছে। জেলাজুড়ে এই রাজনৈতিক অস্থিরতায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সাধারণ মানুষ। পুলিশ-প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা থেকেই এমনটা ঘটছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। পুলিশ অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছে।
এ দিন মিছিলের শেষে ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে খয়রাশোলের বিডিও, ওসি এবং পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সভাপতি অসীমা ধীবরকে একটি করে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। সকলেই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার অশ্বাস দিয়েছেন। প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন খয়রাশোল ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক দীনবন্ধু দে, সভাপতি সুজয় ঘোষ, মৎস্য ব্যবসায়ী রাম ধীবররা। উজ্জ্বল পাল, ধীরেন ঘোষ, কালীদাস ভট্টাচার্যের মতো সাধারণ মানুষও তাতে যোগ দেন। প্রত্যেকেই ক্ষোভের সঙ্গে বলছেন, “তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর লাড়াইয়ে বছর দু’য়েক ধরে বিপর্যস্ত খয়রাশোল। একটার পর একটা খুনের ঘটনা ঘটছে। দুষ্কৃতীরা এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
তখনও বেঁচে দুবরাজপুরে গুলিবিদ্ধ তৃণমূল নেতা আবুল কালাম। শুক্রবার সিউড়ি হাসপাতালে।
দলীয় কর্যালয় থেকে পুলিশ ফাঁড়ি সবেতেই হামলা হচ্ছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। শুধু ব্যবসায়ীদের উপরেই নয়, নানা শ্রেণির মানুষের জীবনে এর প্রভাব পড়ছে।” তাঁদের অভিযোগ, যেখানে যে সমস্যাই হোক, খয়রাশোলে তার আঁচ এসে পড়ছে। ব্লক অফিস, স্কুল, নানা সরকারি অফিস, থানা থাকায় বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষকে খয়রাশোলে আসতে হয়। ব্লকের বিভিন্ন গ্রামের মানুষকে মূলত খয়রাশোলের এই বাজার বা জনপদের উপরেই নির্ভর করতে হয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হওয়ায় জনজীবনে তার প্রভাব পড়ছে বলে সমিতির নালিশ। সমিতির সদস্যেরা বলছেন, “অপরিচিত দুষ্কৃতীরা এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। একটা আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। বাড়ির মেয়েরা, স্কুলপড়ুয়ারা বাইরে বেরোতে ভয় পাচ্ছেন। এর প্রভাব সরাসরি ব্যবসার উপর পড়েছে। এই উৎসবের মরসুমে যদি এমন অবস্থা হয়, তাহলে আমরা পেট চালাব কীভাবে?” তাঁদের দাবি, পুলিশ ও প্রশাসনের দুর্বলতার জন্যই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তারই প্রতিবাদে বাধ্য হয়ে পথে নামা।
খয়রাশোলের বিডিও মহম্মদ ইসরার অবশ্য বলছেন, “এখানে রাজনৈতিক দলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব না বলে কয়লাকে ঘিরে দুই মাফিয়া দলের লড়াই বলাই ভাল। ওই মাফিযাদের রাজনৈতিক পরিচয় বা যোগ থাকতে পারে। তবে, সন্দেহ নেই যে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। এই পরিস্থিতি সামলাতে হলে প্রশাসনিক ও এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। আমি এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অসীমা ধীরব উভয়েই সেই চেষ্টা করছি।”
—নিজস্ব চিত্র।