Advertisement
১৯ মে ২০২৪

পিকনিকের মাতল হোমের আবাসিকরা

কেউ নজর কাড়ল ‘ডান্স’ কম্পিটিশনে, কেউ ক্যুইজে। আবার অনেকে ছুটে বেড়াল বিড়াই নদীর বালুচরে। রবিবার ওন্দা থানার উদ্যোগে স্থানীয় একটি বেসরকারি হোম ও বাঁকুড়া শহরের কেঠারডাঙার একটি অনাথ আশ্রমের আবাসিকদের এ ভাবেই পিকনিকে মেতে উঠতে দেখা গেল। তাঁদের সঙ্গে সমানে তাল দিলেন পুলিশকাকুরাও।

পিকনিকের ভোজন।  —নিজস্ব চিত্র

পিকনিকের ভোজন। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ওন্দা শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:০৩
Share: Save:

কেউ নজর কাড়ল ‘ডান্স’ কম্পিটিশনে, কেউ ক্যুইজে। আবার অনেকে ছুটে বেড়াল বিড়াই নদীর বালুচরে। রবিবার ওন্দা থানার উদ্যোগে স্থানীয় একটি বেসরকারি হোম ও বাঁকুড়া শহরের কেঠারডাঙার একটি অনাথ আশ্রমের আবাসিকদের এ ভাবেই পিকনিকে মেতে উঠতে দেখা গেল। তাঁদের সঙ্গে সমানে তাল দিলেন পুলিশকাকুরাও।

পুলিশের তরফে এই পিকনিকের পোশাকি নাম রাখা হয়েছিল, ‘পাশে আছি, চড়ুইভাতি’। ওন্দা থানার রামসাগরের কাছে অ্যান্টনির বাগানে এই পিকনিকে ৪০ জন আবাসিক যোগ দিয়েছিল। তাদের মধ্যে অনেকেই শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রতিবন্ধী। আবার অনেকের বাবা মায়ের পরিচয়ই জানা নেই। বাড়ির লোক না নেওয়ায় হোমেও ঠাঁই হয়েছে অনেকের। ঘর-হারানো এমনই একপাল ছেলেমেয়েকে নিয়ে ওই বাগানে পিকনিক হয়ে গেল। ওরা এ দিনই মনখারাপ ভুলে চুটিয়ে আনন্দ করে নিয়েছে।

একটি রিমিক্স গানের তালে নেচে সবার মন ভরিয়ে দেয় ওন্দার হোমের আবাসিক সাজু। ওকে দেখে তখন কে বলবে যে সে মূক ও বধির! তারই মতো নানারকম শারীরিক প্রতিবন্ধকতার বেড়া টপকে ডান্স কম্পিটিশন মাত করল গিয়াশ, বাদশা, শ্যামল, প্রদীপরা।

বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে বাঁকুড়ার হোমে এসে পড়া রাধিকা বর্মা বাংলা একবর্ণ বুঝতে পারে না। তাই সে এমনিতেই একটু চুপচাপ থাকে। এহেন চুপচাপ থাকা মেয়েটিই ‘রাউডি রাঠৌর’-এর ‘দিল ফিসল গ্যয়া’ গানের তালে যে এ ভাবে ধুম মচাতে পারে তাও ওর অনেক আবাসিকের অজানা ছিল। ক্যুইজ প্রতিযোগিতায় নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে চমকে দিল সুকুরমণি, গঙ্গা। কাছেই বিড়াই নদী। সেই চরে দিনভর ছুটে বেড়াল রিনা, নিকিতারা।

কেমন লাগল এই পিকনিক? সুকুরমণিরা এক মুখ হাসি ছড়িয়ে জবাব দেয়, খুউব ভালো। এতদিন আমাদের হোমের সামনে দিয়ে মাইক বাজিয়ে দল দল লোক পিকনিক করতে যেত। তখন আমাদের আফসোস হতো। কিন্তু আজ পুলিশ কাকুদের জন্য আমারাও পিকনিকের মজা পেলাম।” কচিকাঁচারা যখন আনন্দে মত্ত, তখন পুলিশ কর্মীরাই বা কী ভাবে পরিচিত খোলসে আটকে থাকেন! তাই গানের তালে পা মেলালেন এএসআই হিমাদ্রীশেখর গিরি, কনস্টেবল শুভেন্দু দুবে, নিত্যানন্দ মাহাতোরা। নদীর বালুচরে রিনাদের নিয়ে ছোটাছুটি করছিলেন কনস্টেবল দিলীপ জানা, হোমগার্ড সুরজিত্‌ কদমা। তাঁদের কথায়, “প্রতিদিনকার এক রুটিন থেকে আজকের দিনটা সত্যিই আলাদা ভাবে কাটল। নিজেদের ভাই-বোনেদের মতো ওরা আমাদের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। মনে রাখার মতো একটা দিন কাটালাম।”

ওন্দা থানার ওসি মানস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আনন্দ উপভোগ করার অধিকার সবার রয়েছে। কেন সেই আনন্দ থেকে বাদ যাবে হোমের খুদেরা? তাই ওদের জন্যই এই আয়োজন করেছিলাম। ওদের খুশিতেই আমাদের তৃপ্তি।” মানসবাবুদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারও। এমনিতেই জনসংযোগ বাড়াতে তিনি নানা কাজ করছেন। তিনি বলেন, “ভালো স্মৃতি পুলিশ কর্মীদের বেশি থাকে না। তবে ওন্দা থানার এই উদ্যোগ পুলিশ কর্মীদের অনেকদিন মনে তাজা থাকবে। ওঁদের এই উদ্যোগকে আমি শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

onda picnic
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE