পুরসভা করার দাবি ছিল দীর্ঘ দিনের। বাম আমলে এই নিয়ে অনেক দৌড়েছিলেন তৎকালীন রাজ্যের মন্ত্রী আনিসুর রহমান। বুধবার সেই সিদ্ধান্তে রাজ্যের সিলমোহর পড়ায় উচ্ছ্বসিত মুর্শিদাবাদের মহকুমা সদর ডোমকলের বাসিন্দারা। আশা-নিরাশার দোলাচল কেটে রাজ্য সরকারের পুরসভার স্বীকৃতিতে খুশি নদিয়ার মহকুমা সদর তেহট্টের বাসিন্দারাও। তবে গত কয়েক বছরে ‘হচ্ছে-হবে’র ধারাবিবরণীতে ক্লান্ত লোকজনের সতর্ক প্রতিক্রিয়া, ‘না আঁচাইলে বিশ্বাস নাই।’
বছর পনেরো আগে মহকুমা হলেও এখনও পঞ্চায়েত স্তরেই রয়েছে ডোমকল। কিছু উন্নয়নমূলক কাজ হলেও সেগুলি রক্ষণাবেক্ষণ করার কেউ নেই। যেমন কিছু এলাকায় নিকাশিনালা থাকলেও তাতে জল গড়ায় না। রাস্তার ধারে ঢিবি হয়ে পড়ে রয়েছে জঞ্জালের স্তুপ। ডোমকল বাজার এলাকায় মূল রাস্তার ধারে কিছুটা ত্রিফলা বসলেও ভেতরে সব অন্ধকার। রাস্তাঘাটের অবস্থা এককথায় যাচ্ছেতাই। বিশেষ করে সকালে ডোমকল বাজারে রাস্তার দু’ধারে যে ভাবে সব্জির পসরা নিয়ে বসেন ব্যবসায়ীরা, তাতে পথ চলা দায়। স্থায়ী সব্জি বাজার তৈরিই হোক বা বাড়ি-বাড়ি পানীয় জলপুরসভা না হলে উন্নয়নের জোয়ার আনা কঠিন। তাই দীর্ঘ দিন ধরে ডোমকলকে পুরসভা করার দাবি জানিয়ে আসছেন এলাকাবাসী। স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি পাবর্তীশঙ্কর নন্দী বলেন, “গত রবিবার আমাদের বার্ষিক সম্মেলনেও এটি মুখ্য একটি দাবির মধ্যে ছিল। শেষ পর্যন্ত পুরসভা হচ্ছে জেনে ভাল লাগছে।” কংগ্রেস নেত্রী শাওনি সিংহের কথায়, ‘‘পুরসভা হওয়ার ফলে ডোমকলের শ্রীবৃদ্ধি ঘটবে সন্দেহ নেই। এখন সময় ডোমকলকে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে তোলার। কেবল রাজনৈতিক দলের নেত্রী হিসেবে নয়, ডোমকলের নাগরিক হিসেবে ভাল লাগছে।”
তবে, খুশির এই খবরে আশঙ্কার মেঘও দেখছেন কেউ কেউ। বিশেষ করে করের বাড়তি বোঝা নিয়ে। ডোমকলের চাষি সালাম শেখ বলেন, ‘‘পরিষেবার গন্ধ হয়তো পাব না। অথচ দেখা যাবে করের বোঝা চাপছে। তবে গ্রামে একটু আলো আর রাস্তা হয়ে গেলে আমরাও রাজি ওই কর দিতে।’’ আর ডোমকলের বিধায়ক আনিসুর রহমানের তির্যক মন্তব্য, “সবই তৈরি ছিল আমাদের আমলে। কেবল একজন প্রশাসক নিয়োগ করা ছাড়া আর কিছুই বাকি ছিল না। এই সরকার ইচ্ছে করে ঘোষণায় এতটা দেরি করল।”
১৯৯৬ সালে তেহট্ট পৃথক মহকুমা হয়। সীমান্তের এই মহকুমা সদর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। মহকুমার সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ অফিসও রয়েছে তেহট্টেই। ফলে বহু আগেই তেহট্টকে পুরসভা করা উচিত ছিল বলে মত স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাঁরা মনে করেন মহকুমা সদর হলেও তেহট্টের রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে, নিকাশি, আলো, পানীয় জল সবকিছুরই সমস্যা রয়েছে। পুরসভা হয়ে গেলে এই সব সমস্যা মিটবে। তবে কোন কোন এলাকা নিয়ে পুরসভা হবে তা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন তেহট্টের একাংশের মানুষ। মহকুমা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, নতুন সরকার আসার পরে যে এলাকাগুলো নিয়ে তেহট্ট পুরসভা হবে বলে শোনা গিয়েছিল তাতে বাদ পড়ে গিয়েছিল তেহট্টের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। তাই নিয়ে চিঠিচাপাটিও হয়েছিল। এবার সেই এলাকাগুলোকে বাদ দেওয়া হবে নাকি সংযোজন করা হবে তা নিয়ে ধন্দে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তেহট্টের বিধায়ক সিপিএমের রণজিৎ মণ্ডল বলেন, “বিধানসভাতে পুরমন্ত্রী পুরসভা নিয়ে যা বললেন তা তো নিজে কানেই শুনলাম। আদালত, বাসস্ট্যান্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোকে বাদ না দিয়ে পুরসভা হলে তো ভালই।” তেহট্ট ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা স্থানীয় ব্লক তৃণমূলের সভাপতি সঞ্জয় দত্ত পুরসভা ঘোষণাকে নিজের দলের কৃতিত্ব দাবি করে বলেন, “শেষ পর্যন্ত যে এটা হয়েছে এতেই খুশি।”
স্থানীয় এক বাসিন্দা অবশ্য বলেন, “সেই বাম আমল থেকেই শুনে আসছি তেহট্ট পুরসভা হবে। একবার তো ‘তেহট্টকে পুরসভা করার জন্য বামফ্রন্ট সরকারকে ধন্যবাদ’ বলে পোস্টারও পড়ে গিয়েছিল। আগে হোক, তারপর দেখা যাবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy