চার দিন বন্ধ থাকার পরে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে আদ্রা-কাশীপুর রুটের ট্রেকার পরিষেবা। সোমবার কাশীপুরের বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়ার সঙ্গে আলোচনার পরে ট্রেকার ও ম্যাজিক গাড়ির কিছু মালিক মঙ্গলবার থেকে গাড়ি চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। সেইমতো মঙ্গলবার সকাল থেকেই বন্ধ থাকা ৩০টি গাড়ির মধ্যে অর্ধেকের বেশি পথে নেমেছে। পাশাপাশি এ দিন এই রাস্তায় অটোর সংখ্যা আরও কিছু বাড়ায় ভোগান্তি অনেকটাই কমেছে যাত্রীদের। বিধায়ক বলেন, “ট্রেকার ও ম্যাজিক গাড়িগুলির মালিকদের একাংশ আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। পুজোর মরসুমে এ ভাবে গাড়ি বন্ধ রাখাটা ভুল হয়েছে বুঝে মঙ্গলবার থেকে গাড়ি চালাতে সম্মত হয়েছেন। এ ছাড়াও তাঁরা গাড়িগুলি চালানোর ক্ষেত্রে সরকারি বিধি মানবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। এ দিন থেকে পরিষেবা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে।”
যাত্রীর হাতে এক ট্রেকার চালকের মার খাওয়ার ঘটনায় শুক্রবার থেকে আদ্রা-কাশীপুর রাস্তায় ট্রেকার ও ম্যাজিক গাড়ি চালানো বন্ধ রাখা হয়েছিল। এই রুটে বেসরকারি বাসের সংখ্যা হাতেগোনা হওয়ায় যাত্রীরা চূড়ান্ত ভোগান্তির মধ্যে পড়েছিলেন। ‘সামান্য কারনে’ ট্রেকার পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ায় গাড়িগুলির মালিকদের উপরে ক্ষুব্ধ হয়েছিল শাসকদল। বিধায়ক উদ্যোগী হয়ে বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে রঘুনাথপুর থেকে গোটা দশেক অটোর ব্যবস্থা করে পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেন। অন্য দিকে, দ্রুত পরিষেবা স্বাভাবিক না করলে পরবর্তী সময়ে রাস্তায় গাড়ি নামালে সমস্যায় পড়তে হবে, এই মর্মে ট্রেকার মালিকদের কাছে বার্তাও পৌঁছে দিয়েছিল তৃণমূলের একাংশ।
এই রাস্তায় চলাচল করা ট্রেকারগুলি নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে যাত্রীদের। স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, অনেক ট্রেকারের যাত্রী পরিবহণ করার বৈধ অনুমতি পর্যন্ত নেই। আবার বেশ কিছু ট্রেকার ১৫ বছরের বেশি পুরনো। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কার্যত সব ট্রেকারই গাড়ির ছাদে যাত্রী তোলে। তার উপরে আগাম নোটিস ছাড়াই আচমকা ট্রেকার বন্ধ রাখার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে এ বার আদ্রা-কাশীপুর রুটে অটো পরিষেবা বাড়ানোর উপরে জোর দিতে শুরু করেছেন বিধায়ক ও তৃণমূল পরিচালিত কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতি। ওই রুটে যাঁরা অটো চালাতে ইচ্ছুক, তাঁদের জন্য রাজ্য সরকারের ‘গতিধারা’ প্রকল্প থেকে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া। তিনি বলেন, “আদ্রা-কাশীপুর রাস্তায় গত কয়েক বছরে যাত্রী সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু সামঞ্জস্য রেখে ট্রেকারের সংখ্যা বাড়েনি। তা ছাড়া, একটি ট্রেকার ভরতে অনেক সময় লাগে। সেখানে অটো রিকশা কম সংখ্যক যাত্রী নিয়ে দ্রুত চলাচল করতে পারে। সময়েরও সাশ্রয় হয় যাত্রীদের। তাই আমরা ওই রাস্তায় অটোর সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পঞ্চায়েত সমিতি এই বিষয়ে আগ্রহীদের ঋণ দিয়ে সাহায্য করবে।” পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রের খবর, এই প্রকল্পে সর্বাধিক তিন লক্ষ টাকা ঋণ পাবেন আগ্রহীরা। তার মধ্যে ৩০ শতাংশ ভর্তুকি থাকবে। বাকি অর্থের মধ্যে পাঁচ শতাংশ ব্যাঙ্কে জমা রাখলেই ঋণের ব্যবস্থা করবে পঞ্চায়েত সমিতি। সৌমেনবাবু জানান, পুজোর ছুটির পরেই পঞ্চায়েত স্তরে এই প্রকল্পের বিষয়ে সার্বিক প্রচার করা হবে।
অন্য দিকে, আদ্রা-কাশীপুর রাস্তায় ছোট গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে আগ্রহী গাড়ি-মালিকরা আবেদন করলে দ্রুত ছাড়পত্র দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন পুরুলিয়ার আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের আধিকারিক (আরটিও) দেবাশিস চট্টোপাধ্যায়। এ দিন তিনি বলেন, “জেলার ১৪৮টি রুটে গাড়ি চালানোর জন্য পারমিট দেওয়ার বিষয়ে ইতিমধ্যেই আমরা বিজ্ঞপ্তি জারি করেছি। যার মধ্যে আদ্রা-কাশীপুর রুটও রয়েছে। যে ছোট গাড়িগুলির রেজিস্ট্রেশন তিন বছরের মধ্যে হয়েছে, তাদের মালিকরা আমাদের কাছে আবেদন করলেই প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র দ্রুত দিয়ে দেওয়া হবে।” পাশাপাশি অনুমতিবিহীন যাত্রিবাহী গাড়গুলির বিরুদ্ধে পুজোর পরে অভিযানে নামছে আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রুটে অভিযান চালিয়ে অনুমতিহীন ৭২টি গাড়িকে ধরে মালিকদের কাছে থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন দেবাশিসবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy