Advertisement
১৯ মে ২০২৪
আজ পুরুলিয়ায় সিপিএমের জেলা সম্মেলন

পরিবর্তনের ধাক্কায় ভাটা উদ্দীপনায়

সেই চেনা ছবিটা উধাও। এক সময় সিপিএমের জেলা সম্মেলনকে ঘিরে চোখে পড়ত উদ্দীপনা ও রাজনৈতিক দাপটের ছবি। ‘পরিবর্তনের’ ধাক্কায় অবশ্য সেই ছবি অনেকটাই নিষ্প্রভ! জেলায় দলের সদস্য সংখ্যাও কমতে শুরু করেছে।

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৫৭
Share: Save:

সেই চেনা ছবিটা উধাও।

এক সময় সিপিএমের জেলা সম্মেলনকে ঘিরে চোখে পড়ত উদ্দীপনা ও রাজনৈতিক দাপটের ছবি। ‘পরিবর্তনের’ ধাক্কায় অবশ্য সেই ছবি অনেকটাই নিষ্প্রভ! জেলায় দলের সদস্য সংখ্যাও কমতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় আজ, শুক্রবার থেকে পুরুলিয়া শহরে শুরু হচ্ছে সিপিএমের ১৯তম পুরুলিয়া জেলা সম্মেলন। আগে তৃণমূল, আর এখন বিজেপি-র উত্থানে জেলা তথা রাজ্য রাজনীতিতে ক্রমশ কোণঠাসা সিপিএমে এখন দলের অন্দরে পরিবর্তন আনাই নয়া মিশন। দলের অন্দরেও ক্রমশ সেই দাবি জোরালো হচ্ছে। ইতিমধ্যেই জেলায় সিপিএমের ২১টি জোনাল কমিটির মধ্যে ১৩টিতে নতুন মুখ আনা হয়েছে। এ বার জেলায় কী কী বদল হয়, সেটার দিকে তাকিয়ে দলের নিচুতলার কর্মীরা।

২০১১ সালে শেষ জেলা সম্মেলনে দলের দীর্ঘদিনের জেলা সম্পাদক নকুল মাহাতোকে পদ থেকে সরানো হয়। দায়িত্বে আসেন জঙ্গলমহলে সিপিএমের মুখ মণীন্দ্র গোপ। সে বছরেই টানা ৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পরে রাজ্যে পালাবদল হয়েছে। তার পর থেকেই গত বিধানসভা নিবার্চনের আগে অবধি বামদুর্গ বলে পরিচিত পুরুলিয়ায় দিনে দিনে সাফল্য অধরা হয়েই থেকেছে সিপিএমের। বিক্ষিপ্ত ভাবে পঞ্চায়েত ভোটে দু-একটি ব্লকে সাফল্য মিললেও জেলা সিপিএমে এত দিন যাঁরা পরিচিত মুখ ছিলেন, তাঁদের এলাকায় ভরাডুবি ঘটেছে পরের পর নিবার্চনে। দলীয় কর্মী বা সাধারণ মানুষ যে সমস্ত মুখকে দীর্ঘদিন প্রথম সারিতে থেকে দল বা পঞ্চায়েত পরিচালনা করতে দেখেছেন, সেই নেতাদের এলাকাতেও উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে গিয়েছে সিপিএমের সদস্য সংখ্যা। কোথাও বা দলের জোনাল কমিটিও তুলে দিতে হয়েছে।

জেলা সিপিএম সূত্রের খবর, ২০১২ সালে দলের সক্রিয় সদস্য সংখ্যা ছিল ১৯,৯৩৩। পরের বছর তা হয় ১৯,৯৩৫। কিন্তু, ২০১৪ সালে সদস্য সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১৮,৫৬২। বলরামপুর, বরাবাজার, কাশীপুরে উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে সক্রিয় সদস্যের সংখ্যা। যে বলরামপুর ছিল জেলায় সিপিএমের ভিত্তিভূমি, ১৯৬৪ থেকে যে ব্লক থেকে সিপিএম জেলায় যাত্রা শুরু করেছিল এবং যে বলরামপুর থেকে দলের বর্ষীয়ান সদস্য নকুল মাহাতো দলের সদস্যপদ গ্রহণ করেছিলেন, সেই বলরামপুরে আড়াইশোরও বেশি সদস্য কমেছে। এই এলাকারই নেতা মণীন্দ্র গোপ। গত বিধানসভা থেকে বলরামপুর আসন থেকেই লড়ে হেরেছিলেন পাশের ব্লক বরাবাজারের বাসিন্দা মণীন্দ্রবাবু। সেই বরাবাজারেই দু’টি জোনাল কমিটির একটি তুলে দেওয়া হয়েছে। দল সূত্রে খবর, এই ব্লকেও সদস্য কমেছে প্রায় তিনশো। আর জেলা পরিষদের সভাধিপতির আসনে সবচেয়ে বেশিবার আসীন থাকা স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের এলাকা কাশীপুরেও সদস্য সংখ্যা কমেছে আড়াইশোর বেশি।

দলের হাল দেখে নিচুতলার কর্মীদের বড় অংশের মনেই ক্ষোভ ধূমায়িত হচ্ছে। তাঁদের কথায়, “যেভাবে নতুন মুখ নিয়ে আসা প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল, কিছু ক্ষেত্রে তা মানা হলেও, বেশির ভাগ জায়গায় তা মানা হয়নি।” এক কর্মীর ক্ষোভ, “ভোটের ফল মাপকাঠি হলে কিছু নেতার তো নিজে থেকেই সরে দাঁড়ানো উচিত। কারণ, তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে দলের মধ্যে।” জঙ্গলমহলের এক সিপিএম নেতা বলেন, “তা ছাড়া, শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে ভাবে আন্দোলন গড়ে তোলা উচিত ছিল, দলীয় নেতৃত্ব সেই আন্দোলনের দিশাও ঠিক করতে পারেননি। ফলে কর্মীরাও চুপচাপ বসে রয়েছেন। অনেকে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ হতাশায় দলও ছাড়ছেন। আবার অনেকে তৃণমূলকে রাজনৈতিক মোকাবিলা করা সিপিএমের পক্ষে সম্ভব নয় বুঝে বিজেপি-র দিকে ঝুঁকছেন। এই প্রবণতা ঠেকানো না গেলে দলে ভাঙন রোখাও কঠিন হয়ে পড়বে।” এই বিষয়গুলি সম্মলনে উঠতে পারে বলে জানিয়েছেন ওই নেতা।

সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কৃষ্ণপদ বিশ্বাস দলে সদস্য সংখ্যা কমার প্রসঙ্গে বলেন, “আমাদের দলের এক হাজারের বেশি সদস্য কমেছে মানে এই নয় যে তাঁরা তৃণমূলে বা বিজেপিতে চলে গিয়েছেন। সদস্য কমা আমাদের দলের শুদ্ধিকরণেরই অঙ্গ। এটা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন নই।” জোনাল কমিটি ভাঙা প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “কাজের সুবিধার্থেই বরাবাজারে দু’টি জোনালকে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং তা হয়েছে অনেক আগেই। আগে জেলায় আমাদের ২১টি জোনাল কমিটি ছিল। একই সংখ্যায় জোনাল কমিটি রয়েছে।”

আজ, শুক্রবার প্রকাশ্য সমাবেশ দিয়ে শুরু হচ্ছে সম্মেলন। নিকট অতীতে সম্মেলনের প্রকাশ্য সমাবেশ সাধারণত শেষ দিনই অনুষ্ঠিত হতে দেখেছেন সিপিএম কর্মীরা। কিন্তু, এ বার প্রকাশ্য সমাবেশ হচ্ছে সম্মেলন শুরুর দিনেই। অনেক দিন পরে এই সমাবেশ সিপিএমের নিজস্ব জমায়েত। সাম্প্রতিক কালে দলের জেলাস্তরের কোনও জমায়েত হয়নি। দলের শেষ জেলাওয়ারি জমায়েত অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেই ২০১১ সালের জেলা সম্মেলনেই। এ ব্যাপারে কৃষ্ণপদবাবুর অবশ্য বক্তব্য, “এই সময়ের মাঝে যা সভা-সম্মেলন হয়েছে, তা সবই ছিল বামফ্রন্টের কর্মসূচি। তাই বামফ্রন্ট গত ভাবেই জমায়েত হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

district conference Purulia cpm
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE