Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পরচুলার আড়ালে ব্লু-টুথ, ধরা পড়ল পরীক্ষার্থী

এই, নাস্তিক মানে কী রে? উঁহু, কথা নয়। পরিদর্শকের (ইনভিজিলেটর) ধমকে ফের থমথমে হল ঘর। পুরনো পাখার ঘড়ঘড়ে আওয়াজ মাথায় নিয়ে ঘাড় গুঁজে পরীক্ষা দিচ্ছেন ওঁরা। তবে সাময়িক। প্রশ্নের বিরাম নেই ‘চার্বাকদের যুক্তিগুলো বল্ নারে!’ কী হল টা কী? পরিদর্শকের হুঙ্কারে প্রশস্ত হল ঘর শান্ত হয় বটে, তবে নতমুখ ছাত্রকুলের মধ্যে ঠিক কে যে প্রশ্নকর্তা, ঠাওর করা যায় না।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি ও বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৪ ০২:৩৬
Share: Save:

এই, নাস্তিক মানে কী রে?

উঁহু, কথা নয়।

পরিদর্শকের (ইনভিজিলেটর) ধমকে ফের থমথমে হল ঘর।

পুরনো পাখার ঘড়ঘড়ে আওয়াজ মাথায় নিয়ে ঘাড় গুঁজে পরীক্ষা দিচ্ছেন ওঁরা।

তবে সাময়িক। প্রশ্নের বিরাম নেই ‘চার্বাকদের যুক্তিগুলো বল্ নারে!’

কী হল টা কী?

পরিদর্শকের হুঙ্কারে প্রশস্ত হল ঘর শান্ত হয় বটে, তবে নতমুখ ছাত্রকুলের মধ্যে ঠিক কে যে প্রশ্নকর্তা, ঠাওর করা যায় না।

কখনও ‘জৈন’ শব্দের মানে, কখনও বা ‘প্রমাণ’ কাকে বলে, উত্তরোত্তর চড়তেই থাকে তার সজোরে ‘জিজ্ঞাসাবাদ’।

বৃহস্পতিবার, সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজের হল ঘরে পার্ট ওয়ানের দর্শন পরীক্ষা। থেকে থেকেই ‘গর্জে’ ওঠা এমন প্রশ্নে শেষতক ঘরের এ মুড়ো ও মুড়ো ঘুরে ঝাঁকড়া চুলের পরীক্ষার্থীটিকেই সন্দেহ হয় পরিদর্শকের।

মাঝ বরাবর সিঁথি। লম্বা জুলপি। সত্তরের দশক মনে করানো কান ঢাকা চুল।

তবে চুলের বাহারে কোথায় যেন প্রশ্ন লুকিয়ে আছে!

এই তোমার চুলটা এমন কেন?

ছেলেটি সযত্নে মাথা চুলকে পাল্টা প্রশ্ন করে, “ছেলেবেলা থেকেই এমন স্যার, কী করব বলুন।”

সন্দেহ মোছে না পরিদর্শকের। অন্যদের ডেকে নেন তিনি। হন্তদন্ত হয়ে আসেন সেন্টার ইনচার্জ। তারপর শুরু হয় জেরা। আর তাতেই ভেঙে পড়ে ছাত্রটি।

তার সেই ঝাঁকড়া, কান ঢাকা চুলের বাহার নেমে আসে টেবিলে। হতভম্ব পরিদর্শকেরা দেখেন, সেই বাহারি ‘উইগ’ বা নকল চুলের আড়ালে ছোট্ট কালো ব্লু-টুথ। থেকে থেকেই ঝলসে ওঠা তার নীলচে আলো আড়াল করতে তা মুড়ে ফেলা হয়েছে কালো টেপ দিয়ে।

পরিদর্শকদের বুঝতে অসুবিধা হয় না, সেই ব্লু-টুথের মাধ্যমেই অনর্গল প্রশ্ন করে এতক্ষণ সে জেনে নিচ্ছিল, চার্বাক থেকে নাস্তিকতার অর্থ, সংখ্যাতত্ত্ব থেকে জৈনবাদের ইতিবৃত্ত। মোবাইলের ও পারে বসে সেই সব প্রশ্নেরই জবাব দিচ্ছিল তার ‘শুভানুধ্যায়ী’ কেউ।

তবে বাদ সেধেছিল মোবাইলের টাওয়ার। তাই প্রশ্নগুলি একটু বেশি জোরেই করতে হচ্ছিল তাকে। আর তাতেই ঘটে গিয়েছিল বিপত্তি।

তবে মজার ব্যাপার, ধরা পড়েও মচকায়নি সেই ছাত্র। জোর গলায় বলেন, “এত হইচইয়ের কিছু নেই। আমার ব্লু-টুথটা দিয়ে দিন স্যার, আমি চলে যাচ্ছি।” খাতা জমা দিয়ে চলেও যায় সে। পরে ওই ছাত্রের উইগ ও ব্লু-টুথ তুলে দেওয়া হয় পুলিশের হাতে।

বিদ্যাসাগর কলেজের অধ্যক্ষ লক্ষ্মীনারায়ণ মণ্ডল বলেন, “ঘটনার পরেই পরীক্ষা কমিটির সিদ্ধান্ত মেনে ওই ছাত্রকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ওই ছাত্রের নকল চুল এবং ব্লু-টুথ পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ওই ছাত্রের বিরুদ্ধে এফআইআর-ও করা হবে।”

নকলের অভিযোগ উঠেছে বাঁকুড়া সম্মিলনী কলেজেও। ওই কলেজে ১০২৮ জন পরীক্ষার্থীকে বসার জায়গা করে দিতে শেষ পর্যন্ত এক বেঞ্চে চার থেকে পাঁচ জন করে ছাত্রছাত্রীকে বসানো হয় বলে জানা গিয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই সেখানে যথেচ্ছ নকল করার অভিযোগ উঠেছে।

কলেজের অধ্যক্ষ সমীর মুখোপাধ্যায় বলেন, “কলেজে সব মিলিয়ে ৭৫০ জন পরীক্ষার্থী বসানোর জায়গা রয়েছে। অথচ এক হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী এসে হাজির। এত জনকে বসাতে গেলে যে অব্যবস্থা হওয়ার তাই হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

cheating in exam bluetooth wig
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE