Advertisement
১৮ মে ২০২৪

মেঘের হার, জমল পিকনিক

আশঙ্কাই সত্যি হল। ভোরে কুয়াশার দাপট, বেলায় মেঘে ঢাকা আকাশে রোদের উঁকিঝুকি। সঙ্গে কনকনে ঠান্ডা হাওয়া। কিন্তু আবহাওয়ার প্রতিকূলতা ঠেকাতে পারল না আমুদে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়াবাসীকে। বড়দিনের মতোই বৃহস্পতিবার বছরের প্রথম দিনেও বাঁকুড়া জেলার পাহাড়তলি থেকে জলাধার, মন্দিরনগরী থেকে নদীর পাড় সর্বত্র পর্যটকদের ঠাসাঠাসি ভিড় দেখা গেল।

ভিড়ে ঠাসাঠাসি মুকুটমণিপুর।

ভিড়ে ঠাসাঠাসি মুকুটমণিপুর।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৪৪
Share: Save:

আশঙ্কাই সত্যি হল। ভোরে কুয়াশার দাপট, বেলায় মেঘে ঢাকা আকাশে রোদের উঁকিঝুকি। সঙ্গে কনকনে ঠান্ডা হাওয়া। কিন্তু আবহাওয়ার প্রতিকূলতা ঠেকাতে পারল না আমুদে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়াবাসীকে।

বড়দিনের মতোই বৃহস্পতিবার বছরের প্রথম দিনেও বাঁকুড়া জেলার পাহাড়তলি থেকে জলাধার, মন্দিরনগরী থেকে নদীর পাড় সর্বত্র পর্যটকদের ঠাসাঠাসি ভিড় দেখা গেল। জমে উঠল পিকনিকের আসর। সকালের দিকে পর্যটনস্থলগুলিতে পিকনিক করতে আসা লোকজনের সংখ্যা অন্যান্য বছরের ১ জানুয়ারির থেকে কম থাকলেও বেলা যত গড়িয়েছে ভিড় তত বেড়েছে। বিষ্ণুপুর, মুকুটমণিপুর, শুশুনিয়া, বিহারীনাথ, কোরোপাহাড়, বড়দি পাহাড়, গাংদুয়া-সহ প্রতিটি পর্যটনকেন্দ্রে ভিড় উপছে পড়ে। বছরের শেষ দিনে বুধবার পর্যটকরা সে ভাবে আসেনি বলে মুখ শুকিয়ে গিয়েছিল স্থানীয় ব্যবসায়ী, নৌকাচালকদের। এ দিনের ভিড় অবশ্য হাসি ফুটিয়েছে তাঁদের।

মুকুটমণিপুরের আকর্ষণ উপেক্ষা করা দুস্কর। এ দিনের আবহওয়ার মধ্যেও জলাধারের পাড়ে পিকনিক করতে আসা মানুষজনের ভিড় সেই কথাই ফের প্রমাণ করে দিল। বড়দিনের মতো এ দিনও ভিড়ের চাপে অনেকেই জলাধারের পাড়ে জায়গা না পেয়ে কিছুটা দূরে গিয়ে পিকনিক করেন। তবে শুধু চড়ুইভাতির মজা করতেই নয়, জলাধারে নৌকাবিহারের পাশাপাশি লাগোয়া বনপুকুরিয়া ডিয়ার পার্কে, পরেশনাথ মন্দিরেও বেড়াতে যান অনেকে। এই পর্যটনকেন্দ্রের নতুন আকর্ষণ মুসাফিরানায় আড্ডা মারার পাশাপাশি ওয়াচ টাওয়ারেও ওঠেন অনেকে। সেখান থেকে জলাধারের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করেন তাঁরা। জলাধারের গা ঘেঁষা দোকানগুলিতে কেনাকাটার বেশ ভিড় ছিল। দরাদরি করে অনেককেই নানা জিনিস কিনতে দেখা যায়।

মুকুটমণিপুর হোটেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি সঞ্জীব দত্ত বলেন, “বছরের শেষদিনে ভিড় কিছুটা কম ছিল। কিন্তু এ দিন ভিড় ভালোই হয়েছে। এই মরশুমে পর্যটকদের ঠাসাঠাসি ভিড়ে অনেকেই হোটেলে জায়গা পাননি।” বছরের শেষদিনে পর্যটকদের ভিড় না থাকায় কপালে ভাঁজ পড়েছিল স্থানীয় নৌকাচালকদের। এ দিনের ভিড় তাঁদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। স্থানীয় নৌকাচালক স্বপন সিং সর্দার, রমেশ মুদি বললেন, “বুধবার বন্‌ধ ও অবরোধ বাইরে থেকে পর্যটকদের গাড়ি প্রায় আসেনি বললেই চলে। এ দিন অবশ্য পর্যটকরা এসেছেন, নৌকায় ঘুরেছেন।” জলাধারের পাড়ে হরেকরকম জিনিসের পসরা নিয়ে বসা দোকানদারেরাও জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার চলতি মরশুমের রেকর্ড বিক্রি হয়েছে। বর্ধমান থেকে বেড়াতে আসা মলয় রায়, স্বপন সাধুখাঁ বলেন, “একদিনের জন্য পিকনিকের আদর্শ জায়গা মুকুটমণিপুর। জলাধারের পাড়ে হই হুল্লোড় করে পিকনিক করলাম, পরেশনাথ মন্দির, ডিয়ার পার্ক, মুসাফিরানা ঘুরে দেখলাম। শাল মহুয়ার জঙ্গল, পাহাড় আর জলাধার দেখে আমরা খুশি।”

পর্যটকদের প্রত্যাশিত ভিড় ছিল বিষ্ণুপুরেও। এ দিন সকাল থেকেই বিষ্ণুপুরের প্রকৃতি পর্যটনকেন্দ্র লালগড়, শ্যামরাই, জোড়বাংলা, রাসমঞ্চ, মদনমোহন মন্দির, গড়দরজা, মৃন্ময়ী মন্দির, দলমাদল কামান দেখতে আট থেকে আশির ভিড় দেখা যায়। সিঙ্গুর থেকে বেড়াতে আসা দীপ্তেশ রায় বলেন, “ভোরে মুকুটমণিপুর গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফিরে বিষ্ণুপুরে এলাম। লালগড়ে পিকনিক করলাম। এই আবহওয়ার মধ্যেও খুব সুন্দর দিন কাটল।” বিষ্ণুপুরের ট্যুরিস্ট গাইড অসিত দাস বলেন, “সকালের আবহাওয়া দেখে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বেলা বাড়তেই পর্যটকদের ভিড় বাড়ে। তাঁদের বিভিন্ন মন্দির দেখালাম।”

পর্যটকদের উপছে পড়া ভিড় দেখা গিয়েছে শুশুনিয়াতেও। ভিড় এতটাই হয়েছিল যে পর্যটকেরা গাড়ি রাখতে গিয়ে চরম সমস্যায় পড়েন। দুপুরের পরে মেঘলা আকাশ দেখে অনেকেই তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠেন। শুশুনিয়ায় বেড়াতে আসা বাঁকুড়া শহরের বাসিন্দা আকাশ চক্রবর্তী বলেন, “নতুন বছরের প্রথম দিনে বন্ধুদের সঙ্গে শুশুনিয়ায় বেড়াতে এসেছিলাম। দিনভর হই হুল্লোড় করলাম। কিন্তু দুপুরে মেঘের ঘনঘটা দেখে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হল।” পাহাড়তলিতে বসা স্থানীয় পাথরশিল্পী বাদল কর্মকার বলেন, “জিনিসপত্র ভালোই বিক্রি হল। লক্ষ্মীবারে আমাদের লক্ষ্মীলাভ ভালোই হল।”

পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়, গড় পঞ্চকোট, ফুটিয়ারি জলাধার, আদ্রার সাহেববাঁধ, পুরুলিয়া শহরের উপকন্ঠে কংসাবতীর তীরে তেলেডি, সুরুলিয়া ডিয়ার পার্ক, কয়রাবেড়া জলাধার, মুরগুমা জলাধার-সহ জেলার বিভিন্ন জায়গায় এ দিন ছিল ঠাসা ভিড়। কাকভোর থেকেই জেলার বিভিন্ন রাস্তায় দেখা গিয়েছে পিকনিকের গাড়ির দৌড়। আদ্রার সাহেববাঁধে পিকনিক করতে আসা সুপ্রিয় করের কথায়, “ঠান্ডা উপেক্ষা করে ভোরবেলায় এসেছি, বেলায় এলে কি আর পছন্দসই জায়গা পেতাম?”

সকাল থেকে অযোধ্যা পাহাড়ের জলবিদ্যুত্‌ প্রকল্পের আপার জলাধারের পাড়ে দেখা গিয়েছে পযর্টকদের ভিড়। কলকাতা, ঝাড়খণ্ড ও রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে পযর্টকেরা এসেছেন। পাহাড়ে গাইডের কাজ করা দিলীপ সিংহের কথায়, “এ বার বছরের প্রথম দিনে প্রচুর মানুষ এসেছেন।” স্থানীয় বাড়েরিয়া গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা পুস্তম মাহাতোর কথায়, “পাহাড়ের নীচে লহরিয়া জলাধারে পর্যটকেরা দলে দলে স্নান করছেন। কত মানুষ এসেছেন এখানে। কতদিন এ দৃশ্য অধরা ছিল।”

এ দিন পযর্টকদের ভিড়ে থিকথিক করেছে ফুটিয়ারিও। এই জলাধারে নৌকোচালক রমেশ মাহাতোর কথায়, “প্রচুর মানুষ আসায় লাভও বেড়েছে।”

প্রতিকূল আবহওয়া ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি। দুই জেলার পর্যটনস্থলগুলিতে ভিড় করলেন বাসিন্দারা।

বৃহস্পতিবারের নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

new year picnic
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE