Advertisement
২৯ এপ্রিল ২০২৪

মাথায় কার হাত? কড়া ধমক মহকুমাশাসকের

মহকুমাশাসকের একটা কড়া ধমক। আর তাতেই বোজানো পুকুর থেকে মাটি তোলার কাজ শুরু হয়ে গেল। সময়: বুধবারের দুপুর। স্থান: বিষ্ণুপুর শহরের মহাশ্মশান সংলগ্ন পুকুরপাড়। জেসিবি মেশিন দিয়ে মাটি ফেলে দিনের আলোয় বোজানো হচ্ছিল ওই পুকুর। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। তাঁরা একজোট হয়ে এই বেআইনি কাজ বন্ধের দাবি তুলেছিলেন বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসকের কাছে। সেই দাবি মেনে প্রশাসনিক নির্দেশে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল পুকুর বোজানো।

প্রশাসনের উপস্থিতিতে পুকুর থেকে তুলে ফেলা হচ্ছে মাটি। বুধবারের নিজস্ব চিত্র।

প্রশাসনের উপস্থিতিতে পুকুর থেকে তুলে ফেলা হচ্ছে মাটি। বুধবারের নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:০১
Share: Save:

মহকুমাশাসকের একটা কড়া ধমক। আর তাতেই বোজানো পুকুর থেকে মাটি তোলার কাজ শুরু হয়ে গেল।

সময়: বুধবারের দুপুর। স্থান: বিষ্ণুপুর শহরের মহাশ্মশান সংলগ্ন পুকুরপাড়। জেসিবি মেশিন দিয়ে মাটি ফেলে দিনের আলোয় বোজানো হচ্ছিল ওই পুকুর। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। তাঁরা একজোট হয়ে এই বেআইনি কাজ বন্ধের দাবি তুলেছিলেন বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসকের কাছে। সেই দাবি মেনে প্রশাসনিক নির্দেশে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল পুকুর বোজানো। এ বার ছিল সেই পুকুর থেকে মাটি তুলে নেওয়ার পালা। মঙ্গলবার পুকুর বোজানোর ঘটনায় দুই অভিযুক্তকে অফিসে ডেকে পুকুরের বোজানো অংশের মাটি তুলে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন মহকুমাশাসক পলাশ সেনগুপ্ত। বুধবার নিজে ঘটনাস্থলে গিয়ে মাটি তোলার কাজের অগ্রগতি দেখবেন বলেও জানিয়েছিলেন।

সেই মতো এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ আইসি (বিষ্ণুপুর) স্বপন দত্ত, বিএলএলআরও (বিষ্ণুপুর) পার্থ লোধ ও মহকুমা প্রশাসনের অফিসারদের নিয়ে ওই পুকুরপাড়ে পৌঁছে যান মহকুমাশাসক। পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের দেখে এলাকায় ভিড় জমে যায়। কিন্তু, গিয়ে যা দেখলেন মহকুমাশাসক, তাতে তাঁর চক্ষু চড়কগাছ! তিনি দেখলেন, অভিযুক্তেরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন পুকুর পাড়ে। সবেমাত্র ফিতে ফেলে পুকুরের পাড় মাপজোক চলছে। অথচ যার জন্য এত আয়োজন, সেই মাটি ফেলার কাজই শুরু হয়নি! এর পরেই অভিযুক্ত দুই ব্যক্তিকে ডেকে কড়া ধমক দেন পলাশবাবু। বলেন, “নির্দেশ দেওয়ার পরেও মাটি তোলার কাজ শুরু করেননি কেন? কার হাত রয়েছে আপনাদের মাথায়? এক ঘণ্টার মধ্যে কাজ শুরু না হলে দু’জনকেই গ্রেফতার করা হবে!” ধমকের মুখে পড়ে এক অভিযুক্ত বলেন, “জ়েসিবি পাওয়া যাচ্ছে না স্যার। সে জন্য দেরি হচ্ছে।”

মহকুমাশাসক তখন আইসিকে বিষয়টি দেখার নির্দেশ দেন। মিনিট পনেরোর মধ্যে পাওয়াও গেল সেই যন্ত্র। আর তা ঢুকতেই কাজ শুরুর নির্দেশ দিয়ে মহকুমাশাসক দুই অভিযুক্তকে জানিয়ে দিলেন, মাটি তোলার সমস্ত খরচ দিতে হবে তাঁদেরই। প্রশাসনের এই কড়া ভূমিকায় তখন খুশি ঘটনাস্থলে উপস্থিত উজ্বল মান্না, জগন্নাথ পালদের মতো স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা বলেন, “বিষ্ণুপুরের প্রাচীন এই মহাশ্মশান শহরের বেশির ভাগ লোকজন দাহ কাজের জন্য ব্যবহার করেন। সৎকারের আনুষঙ্গিক কাজে এবং ওই শ্মশানের কালী মন্দিরের পুজোয় নেওয়া হয় এই পুকুরের জল। সেটাই ভরাট হচ্ছে জানতে পেরে মহকুমাশাসকের দ্বারস্থ হয়েছিলাম আমরা। ২৮ নভেম্বর তিনি নিজে উদ্যোগী পুকুর ভরাট বন্ধ করেছিলেন। এ দিন আবার নিজে এসে পুকুরটিকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করায় আমরা খুশি।”

বস্তুত, সরকারি কর্মীদের পাশে এই কাজে সারাদিনই দেখা গিয়েছে এলাকাবাসীকে। নিজেরা চাঁদা তুলে চা-ও খাওয়ালেন কর্মীদের। স্থানীয় বাসিন্দা সন্দীপ চট্টোপাধ্যায়, তীর্থ দে বলেন, “বেআইনি কাজ চোখের সামনে হচ্ছে দেখেও ভয়ে অনেক সময় মুখ খুলতে পারিনি। তবে, মহকুমাশাসককে কাছে পেয়ে অনেকটাই সাহস পেয়েছি।”

বিষ্ণুপুরের শহরবাসীরা আগেও দেখেছেন, সংরক্ষিত মন্দির লাগোয়া বেআইনি বাড়ি নির্মাণকারীদেরও রেয়াত করেননি এই মহকুমাশাসক। প্রশাসনিক আধিকারিকদের নিয়ে সেই বাড়ি ভেঙে দিয়েছেন। আবার তিনিই সোনামুখীতে গিয়ে অবৈধ চোলাই মদের ভাটি ভাঙায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। মহকুমাশাসক বলেন, “পুকুর থেকে মাটি তোলার কাজ যত রাতই হোক, বুধবারই শেষ করা হবে। দুপুরে, বিকেলে সেখানে ছিলাম। প্রয়োজনে রাতেও আমি যাব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

palash sen gupta pond bishnupur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE