Advertisement
E-Paper

মাদলের তালে শিউলিবনা

বছরের প্রথম দিন উপলক্ষে এমনিতেই ঠাসা ভিড় শুশুনিয়ায়। তবে পাহাড়ের নৈসর্গিক সুন্দরতার পাশাপাশি ধামসা-মাদলের তালে আদিবাসীদের নৃত্য বাড়তি পাওনা হয়ে গেল পর্যটকেদের কাছে। মঙ্গলবার থেকে শুশুনিয়া পাহাড়ের উল্টো দিকে শিউলিবনা গ্রামে শুরু হয়েছিল তিনদিনের ‘খেরওয়াল তুখৈ’ (গ্রামীন মেলা)।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৩৪
নাচের ছন্দে। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

নাচের ছন্দে। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

বছরের প্রথম দিন উপলক্ষে এমনিতেই ঠাসা ভিড় শুশুনিয়ায়। তবে পাহাড়ের নৈসর্গিক সুন্দরতার পাশাপাশি ধামসা-মাদলের তালে আদিবাসীদের নৃত্য বাড়তি পাওনা হয়ে গেল পর্যটকেদের কাছে। মঙ্গলবার থেকে শুশুনিয়া পাহাড়ের উল্টো দিকে শিউলিবনা গ্রামে শুরু হয়েছিল তিনদিনের ‘খেরওয়াল তুখৈ’ (গ্রামীন মেলা)।

শময়িতা মঠের উদ্যোগে আয়োজিত এই মেলা চত্বরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই জমাটি ভিড়। মেলা এ বারে ১৯ তম বর্ষে পড়েছে। শিউলিবনা গ্রামে বসবাসকারী প্রায় ৭০টি আদিবাসী পরিবারের কাছে এই মেলাটিই বছরের সেরা আকর্ষণ। বাসিন্দাদের ঘরে-ঘরেও আত্মীয়েরা এই মেলা উপলক্ষে আসেন। মেলায় আসা জনসাধারণের খাওয়াদাওয়ারও বিশেষ ব্যবস্থা করা হয় মঠের তরফে। সেই সঙ্গে দিনভর চলে লোকসংস্কৃতির নানা অনুষ্ঠান। স্থানীয়রা তো বটেই, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকেও শিল্পীরা যোগদান করেন। শময়িতা মঠ এই মেলার মূল উদ্যোক্তা হলেও গ্রামবাসীরাও এই মেলার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িয়ে পড়েছেন।

শিউলিবনা গ্রামের বাসিন্দা মণিলাল হাঁসদা বলেন, “এই মেলাই আমাদের গ্রামের সবচেয়ে বড় উত্‌সব। মেলার দু’দিন মানুষের সমাগম আর গান-বাজনায় গোটা গ্রাম গমগম করে।” শিউলিবনার আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারাও ছুটে আসেন মেলা দেখতে। মেলা উপলক্ষে স্বামী ছেলেকে নিয়ে প্রতি বছর বাপের বাড়ি আসেন এই গ্রামের মেয়ে সরুচমনি হেমব্রম। মেলায় তিনি স্বামী মধুসূদন হেমব্রমের সঙ্গে ঘুরছিলেন। শিউলিবনা লাগোয়া মুজরাকুলি গ্রাম থেকে ছেলেকে সাইকেলে চাপিয়ে মেলা দেখতে এসেছিলেন সনত্‌ হেমব্রম। তিনি বলেন, “আমাদের এখানে এই ধরনের বড় মেলা খুব একটা হয় না। প্রতিবছরই আমরা আসি। মেলায় নাগোরদোলা বসেছে। তাই ছেলেকে নিয়ে এলাম নাগরদোলায় চাপাবো বলে।”

শুধু গ্রামবাসীদের কাছেই নয়, শুশুনিয়ায় বেড়াতে আসা মানুষদের কাছেও এই মেলা বাড়তি আকর্ষণ। এ দিন মেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে এসেছিলেন বড়জোড়ার অমিতাভ ঘোষাল, বিষ্ণুপুরের শুভদীপ রক্ষিতরা। তাঁরা বলেন, “এখানে মেলা বসে জানতাম না। শুশুনিয়ার লোকজনেরাই জানালেন, শিউলিবনায় মেলা বসেছে। তাই দেখতে এলাম। আদিবাসীনৃত্যানুষ্ঠান দেখে খুবই ভালো লাগছে।” কলকাতার বাগবাজার এলাকা থেকে সপরিবারে বিষ্ণুপুরে বেড়াতে এসেছিলেন রঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। এ দিন শুশুনিয়া পাহাড়ে তাঁরা বেড়াতে এসেছিলেন। রঞ্জনবাবু বলেন, “পাহাড়ের চারপাশটা গাড়িতেই ঘুরে দেখছিলাম। হঠাত্‌ ধামসা-মাদলের শব্দ শুনে এসে দেখি এখানে আদিবাসী নৃত্য হচ্ছে। এ সুযোগ তো পাওা যায় না। আমরা অভিভূত।”

ডেনমার্ক থেকে বাবা কার্ক হেগল্যান্ড ও মা বিউট হেগল্যান্ডের সঙ্গে মেলায় এসেছিলেন লিসা হেগল্যান্ড। তিনি বলেন, “শময়িতা মঠের কাজকর্ম আমাদের খুব ভালো লাগে। ভারতীয় লোকসংস্কৃতির টানে আগেও এই মেলায় এসেছিলাম। এ বারও এসেছি।” তিনি জানালেন, মেলা সেরে তাঁরা শান্তিনিকেতনে যাবেন।

নতুন বছরে মানুষকে খুশি করে তৃপ্ত শময়িতা মঠের সম্পাদিকা ঋষিঋদ্ধা অনাহতা বলেন, “এই মেলাকে কেন্দ্র করে গ্রামের লোকজনেরা আনন্দে মেতে ওঠেন। মেলার টানে বাইরে থেকেও বহু মানুষ আসছেন। সবাইকে আনন্দ দিতে পেরে আমরা খুশি।”

shiulibona adivasi festival chatna
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy