Advertisement
১৮ মে ২০২৪

মানুষের মত নিয়ে পরিকল্পনা ছকে সেরা

কোন পথ ধরে এগোবে গ্রামোন্নয়নের কাজ, পরিকল্পনার কোন মাপকাঠিকে সামনে রেখে কাজ করবে পঞ্চায়েতগুলি। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে রাজ্যের বিভিন্ন ব্লকের পঞ্চায়েতগুলি প্রায় মাস ছয়েক আগে তৈরি করেছিল নিজেদের উন্নয়ন পরিকল্পনা। যার পোশাকি নাম ‘নিবিড় সহভাগী পরিকল্পনা অনুশীলন’ (ইনটেনসিভ পার্টিসিপেটরি প্ল্যনিং এক্সাসাইজ, সংক্ষেপে আইপিপি)।

টেবিলে পুরস্কার। কাজে ব্যস্ত পুরুলিয়ার  জেলাশাসক। —নিজস্ব চিত্র।

টেবিলে পুরস্কার। কাজে ব্যস্ত পুরুলিয়ার জেলাশাসক। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৫ ০১:২২
Share: Save:

কোন পথ ধরে এগোবে গ্রামোন্নয়নের কাজ, পরিকল্পনার কোন মাপকাঠিকে সামনে রেখে কাজ করবে পঞ্চায়েতগুলি। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে রাজ্যের বিভিন্ন ব্লকের পঞ্চায়েতগুলি প্রায় মাস ছয়েক আগে তৈরি করেছিল নিজেদের উন্নয়ন পরিকল্পনা। যার পোশাকি নাম ‘নিবিড় সহভাগী পরিকল্পনা অনুশীলন’ (ইনটেনসিভ পার্টিসিপেটরি প্ল্যনিং এক্সাসাইজ, সংক্ষেপে আইপিপি)।

পঞ্চায়েতের বিভিন্ন স্তরের মানুষজনকে সামিল করে উন্নয়ন পরিকল্পনা ছকে রাজ্যে সেরার শিরোপা পেয়েছে পুরুলিয়া। সম্প্রতি পঞ্চায়েত ভবনে পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) প্রকাশ পালের হাতে ‘আইপিপি এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ নামে এই পুরস্কার তুলে দিয়েছেন রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “পুরুলিয়া জেলা পরিকল্পনা তৈরির ক্ষেত্রে সেরার শিরোপা পেয়েছে। আমরা যে ভাবে কাজ করতে চাই সে ভাবেই ওরা পরিকল্পনা করেছে। একেবারে নিচুতলার মানুষজনের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে এই কাজ করা হয়েছে।” তিনি জানান, রাজ্য সরকার পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর এই তিনটি জেলাকে পৃথক গুরুত্ব দিয়েছিল। পুরুলিয়া সেরার শিরোপা পেলেও বাঁকুড়া জেলাও ভাল পরিকল্পনা করেছে বল মন্ত্রীর মত।

এই পরিকল্পনা তৈরির আগে কোন কোন বিষয়গুলিকে সামনে রেখেছিলেন প্রশাসনিক কর্তারা? প্রকাশবাবু বলেন, “এটা মূলত একেবারে নিচুতলার উন্নয়ন পরিকল্পনা। ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে এলাকার মানুষজন উপকৃত হবেন কি না এবং পরিকল্পনা গ্রহণে স্থানীয়দের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কি না তা দেখা হয়েছে। কোন গ্রাম সংসদ এলাকায় কতজন মানুষ আগামী দিনে ১০০ দিনের কাজে অংশ নিতে পারেন তা তাঁদের কাছ থেকে জেনে পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। সেই কাজটি হলে কতজন উপকৃত হবেন তাও উল্লেখ করতে হয়েছে। এ ছাড়া এলাকায় পিছিয়ে পড়া মানুষজনকে সরকারি পরিকল্পনার মাধ্যমে কী ভাবে তুলে আনা যায় তাও মাথায় রাখা হয়েছে।” তিনি জানান, নিচুস্তরের মানুষজনের কাছে উন্নয়ন পৌঁছে দিতে তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করে কী ভাবে পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে প্রথমে তা জেলার ২০ জন বিডিওকে বোঝানো হয়। জয়পুরের বিডিও মেঘনা পাল জানান, এই পরিকল্পনা তৈরি করতে তাঁরা ব্লকে একটা ‘প্ল্যানিং টিম’ গড়েছিলেন। ওই কমিটি প্রতিটি সংসদ এলাকায় গিয়ে সেই এলাকার মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের চাহিদা ও মতামতের উপর ভিত্তি করে পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন। তারপর সেখান থেকে যে তথ্য উঠে এসেছে এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় কী সম্পদ রয়েছে তার ব্যবহার কী ভাবে করা হবে, তা মানচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়।

পুরুলিয়া যেমন জেলা হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে, তেমনই রাজ্যের ১৫টি পঞ্চায়েতকেও একই ভাবে সেরা পরিকল্পনা তৈরির জন্য পুরস্কৃত করেছে রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর। পুরুলিয়া জেলার ঝালদা ১ ব্লকের হেঁসাহাতু গ্রাম পঞ্চায়েত অন্যতম সেরার শিরোপা পেয়েছে। এই পঞ্চায়েতের প্রধান পাবর্তী রজক বলেন, “আমাদের পঞ্চায়েত পাহাড়ি এলাকা নিয়ে। আমরা পরিকল্পনা তৈরির সময় যেমন একশো দিনের শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছি, তেমনই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের মতামতকেও গুরুত্ব দিয়েছি।” এই পঞ্চায়েতের কর্মী শুদ্ধসত্ত্ব চক্রবর্তী বলেন, “ইছাহাতু গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই একটি পুকুরের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু ফি বছর গ্রীষ্মে পুকুরের জল শুকিয়ে যায়। বাসিন্দারা পুকুর সংস্কারের জন্য জানিয়েছিলেন। আমরা সেই কথা পরিকল্পনায় তুলে ধরেছিলাম। বিভিন্ন টোলার রাস্তা বা অন্য কাজের তালিকাও একই ভাবে তৈরি করা হয়েছে।”

পুরুলিয়ার জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, “শুধু ১০০ দিনের কাজই নয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা কী ভাবে উন্নয়নের কাজ করব তার একটা রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। পঞ্চায়েত প্রধান থেকে কর্মী এবং সাধারণ মানুষ সবাই মিলে এই কাজ করা হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

purulia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE