Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মানবাজারে জিতেও দু’টি পঞ্চায়েতে ধাক্কা তৃণমূলের

এক বছরের মধ্যেই পুরুলিয়ার মানবাজারের দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েতে লোকসভা নির্বাচনে ভোটপ্রাপ্তি অনুযায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাল তৃণমূল। মানবাজার বিধানসভা এলাকায় সামগ্রিক ভাবে তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান ব্যাপক বাড়লেও মানবাজার ও ধানাড়া পঞ্চায়েতে তৃণমূলের থেকে সিপিএমের ঝুলিতেই বেশি ভোট পড়েছে। তাতেই কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের।

সমীর দত্ত
মানবাজার শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৪ ০০:২৫
Share: Save:

এক বছরের মধ্যেই পুরুলিয়ার মানবাজারের দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েতে লোকসভা নির্বাচনে ভোটপ্রাপ্তি অনুযায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাল তৃণমূল।

মানবাজার বিধানসভা এলাকায় সামগ্রিক ভাবে তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান ব্যাপক বাড়লেও মানবাজার ও ধানাড়া পঞ্চায়েতে তৃণমূলের থেকে সিপিএমের ঝুলিতেই বেশি ভোট পড়েছে। তাতেই কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের।

১৯৯১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের নির্মল মাহাতোকে সিপিএমের কমলাকান্ত মাহাতো ২২ হাজারের কিছু বেশি ভোটে হারিয়েছিলেন। এ যাবৎকাল এই এলাকায় যতগুলি নির্বাচন হয়েছে, তার মধ্যে ওই পরিসংখ্যানই ছিল রেকর্ড। সদ্য শেষ হওয়া লোকসভা নির্বাচনে মানবাজার বিধানসভা এলাকার ওই রেকর্ড ভেঙে প্রায় ২৫ হাজার ভোটে সিপিএমকে পিছনে ফেলে দিয়েছে তৃণমূল। নতুন রেকর্ড গড়েও মানবাজার বিধানসভা এলাকার ওই দু’টি পঞ্চায়েতে তৃণমূল গরিষ্ঠতা কেন হারাল, তা নিয়ে দলের মধ্যেও প্রশ্ন উঠেছে। যেখানে চারপাশ সবুজে সবুজ, সেখানে ওই দু’টি পঞ্চায়েতে কী ভাবে ফের লাল রং ফিরে এল?

এক বছর আগে পঞ্চায়েত নির্বাচনে মানবাজার ১ ব্লকের ১০টি পঞ্চায়েত তৃণমূল দখল করে। এক বছরের মধ্যে ছবিটা পাল্টে গেল কেন? ধানাড়া পঞ্চায়েতে আসন সংখ্যা ৯। পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল ৬টি এবং সিপিএম ৩টি আসন পায়। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে তৃণমূল মাত্র ২টি আসনে এগিয়ে। বাকি সাতটি আসনে সিপিএম এগিয়ে। এমনকী পঞ্চায়েত প্রধান যে গ্রাম সংসদ থেকে জিতেছিলেন, সেখানে তৃণমূল হেরে গিয়েছে।

১৫ আসনের মানবাজার পঞ্চায়েতে সিপিএম ৮টি এবং তৃণমূল ৭টি আসন পেয়েছিল। সিপিএমের ভাগ্য বিরূপ ছিল। প্রধান পদটি সংরক্ষিত হওয়ায়, জয়ী সদস্যদের মধ্যে শুধু মাত্র তৃণমূলেই একজন তপশিলি মহিলা ছিলেন। তাঁকেই প্রধান হিসেবে মানতে বাধ্য হয় সিপিএমকে। সদ্য শেষ হওয়া লোকসভা নির্বাচনের ফলের বিচারে দেখা যাচ্ছেস সিপিএম ৯টি গ্রাম সংসদ এলাকায় এগিয়ে রয়েছে। তৃণমূলের কমে ৬টি হয়েছে। এখানেও প্রধানের সংসদে তৃণমূলের হার হয়েছে। তবে তৃণমূলের স্বস্তি এটাই যে লোকসভা নির্বাচনে মতদান বিপক্ষে গেলেও আপাতত এরজন্য ওই দু’টি পঞ্চায়েতে কোনও সঙ্কট আসছে না।

এলাকার বাসিন্দা তথা সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য প্রদীপ চৌধুরী দলের এই বিপর্যয়ের মুখে ওই দু’টি অঞ্চলের ফল দেখে আশার আলো দেখছেন। তাঁর কথায়, “সবাই আমাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন এমন নয়। তৃণমূলের কাজে বিরক্ত হয়ে একে একে মানুষ ওদের পাশ থেকে সরে আসছেন, এটা তারই লক্ষণ।” স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের দাবি, পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থীরা ভোটারদের চেনাজানা লোক হয়। ফলে সেই বিচারে ভোট প্রাপ্তির হেরফের ঘটে। এর সঙ্গে লোকসভা ভোটে গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়।”

কিন্তু মাস দুয়েক আগে মানবাজারে দলের কর্মিসভায় এসে নেতা-কর্মীদের একাংশের আচরণ মানুষ যে ভালভাবে নিচ্ছেন না তা আঁচ করে গিয়েছিলেন তৃণমূলের জেলা নেতারা। কর্মীদের তাঁরা সতর্কও করে যান। কিন্তু তারপরেও এই ফল স্থানীয় নেতাদের একাংশের আচরণ নিয়ে নতুন করে ভাবাচ্ছে জেলা নেতাদেরও।

জেলা জুড়ে দলের এই বিরাট সাফল্য সত্ত্বেও জয়ের মাঝে কাঁটার খোঁচা টের পাচ্ছেন তৃণমূলের মানবাজার ব্লক সভাপতি দেবেন্দ্রনাথ মাহাতো। সম্প্রতি দলের অঞ্চল সভাপতিদের ডেকে বৈঠক করেন তিনি। তিনি বলেন, “এই হারের জন্য অঞ্চল নেতাদের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জবাব চাওয়া হয়েছে।” দলের জেলা সম্পাদক নবেন্দু মাহালি বলেন, “প্রথমে বিধানসভা ভিত্তিক, পরে ব্লক ভিত্তিক এবং শেষে বুথভিত্তিক ফল জমা করে চুল চেরা বিশ্লেষণ করা হবে। কোথায় কোন নেতার কী ভূমিকা ছিল, তাও খতিয়ে দেখা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

samir datta manbazar panchayat election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE