Advertisement
E-Paper

রাস্তায় চাঁদার জুলুম, পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ

সরস্বতী পুজো চলে এল। সেই সঙ্গে বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন এলাকা জুড়ে দেখা গেল সেই চেনা ছবি। কয়েক কিলোমিটার পর পরই রাস্তা আটকে চাঁদা আদায় শুরু। অনেক জায়গাতেই যানবাহন আটকাতে হাতে লাঠি উঁচিয়ে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে এক দল যুবককে। চাঁদা দিয়ে দিলে ভালো। গররাজি হলেই হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ উঠছে বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন প্রান্তে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৩৫
চাঁদা দিলে তবেই ছাড়! বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় ক’দিন ধরে এই ছবিই দেখা গিয়েছে।—নিজস্ব চিত্র।

চাঁদা দিলে তবেই ছাড়! বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় ক’দিন ধরে এই ছবিই দেখা গিয়েছে।—নিজস্ব চিত্র।

সরস্বতী পুজো চলে এল। সেই সঙ্গে বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন এলাকা জুড়ে দেখা গেল সেই চেনা ছবি।

কয়েক কিলোমিটার পর পরই রাস্তা আটকে চাঁদা আদায় শুরু। অনেক জায়গাতেই যানবাহন আটকাতে হাতে লাঠি উঁচিয়ে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে এক দল যুবককে। চাঁদা দিয়ে দিলে ভালো। গররাজি হলেই হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ উঠছে বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন প্রান্তে। যদিও জেলার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “চাঁদা আদায় হচ্ছে বলে নির্দিষ্ট ভাবে কোনও অভিযোগ পাইনি। তবে, কিছু এলাকায় চাঁদা আদায় হচ্ছে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে এলাকাবাসীদের সতর্ক করে এসেছে। সব থানাকে আমি এ বিষয়ে সচেতন থাকতে বলেছি। জোর করে চাঁদা তুলতে দেখা গেলেই গ্রেফতার করা হবে।”

প্রশ্ন হল, অভিযোগ করবেন কে? অভিজ্ঞতা বলছে, অধিকাংশ মানুষই পুলিশি ঝামেলার হাত থেকে বাঁচতে চাঁদার জুলুম নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন না। চাঁদার দাবি করছে যে ক্লাব বা ছেলেছোকরারা, তাদের সঙ্গে বিশেষ তর্কে না গিয়ে টাকা দিয়ে দেওয়াটাই শ্রেয় মনে করেন বেশির ভাগ মানুষ। পুলিশ অবশ্য স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা নিতেই পারে। যদিও বাস্তবে তা হয় কম।

এ বছরও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। জেলার রাস্তায় বের হলেই এই পিকনিক-পর্যটনের মরসুমে ভোগান্তিতে পড়েতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বাঁকুড়া থেকে খাতড়া যাওয়ার রাজ্য সড়কের একাধিক জায়গায় এই ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি ওই রাস্তায় বাঁকুড়া সদর থানার অন্তর্গত রাজগ্রাম এলাকায় দেখা গেল, চাঁদার বই হাতে জনা আটেক যুবক রাস্তার মাঝেই গাড়ি আটকে টাকা আদায় করছে। এর ফলে রাস্তায় সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। যাঁরা মোটা অঙ্কের টাকা দিতে অস্বীকার করছেন, তাঁদের গানি মাঝরাস্তায় আটকে রেখে শুরু হচ্ছে দরাদরি। শেষ পর্যন্ত চাঁদা দিয়েই পার পাচ্ছেন গাড়ির চালক ও সওয়ারিরা। রাজগ্রাম পার হওয়ার পর কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে ফের একই দৃশ্য পোয়াবাগান মোড়ে। জটলা পাকিয়ে কিছু যুবক রসিদ বই ধরিয়ে চাঁদা তুলছে। অন্য এক দল ব্যস্ত গাড়ি আটকানোর কাজে। এরই মধ্যে পুলিশ বা সরকারি বোর্ড লেখা গাড়ি দেখলেই রসিদ বই ঢুকে পড়ছে পকেটের ভিতরে। ছাড় দেওয়া হচ্ছে না ‘প্রেস’ স্টিকার সাঁটানো গাড়িগুলিকেও।

পোয়াবাগান থেকে আরও কিলোমিটার পাঁচেক দূরে সুনুকপাহাড়িতেও একই ভাবে চাঁদা তোলা হচ্ছে সরস্বতী পুজোর। এই এলাকায় একটি ইকো ট্যুরিজম পার্ক গড়েছে বাঁকুড়া ১ পঞ্চায়েত সমিতি। সম্প্রতি সেই পার্ক সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এই পার্কে বেড়াতে আসছেন এবং চাঁদাবাজদের খপ্পরে পড়ছেন। বাঁকুড়া সদর থানার সীমানা পার হলেই সুনুকপাহাড়ি থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে হিড়বাঁধ থানার হাতিরামপুরে চাঁদা আদায় করতে লাঠি হাতে ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে এলাকার কিছু যুবককে। হাতিরামপুর এলাকায় প্রায় ১৫ জন যুবক তিনটি গ্রুপ করে রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে পড়ছে। ওই যুবকদের অনেকের হাতেই লাঠি।

খাতড়া থেকে বাঁকুড়ামুখী বা বাঁকুড়া থেকে খাতড়ামুখী গাড়ি লাঠি উঁচিয়ে আটকাচ্ছে যুবকরা। চাঁদার মূল্য লেখা রসিদ গাড়ি চালকদের হাতে ধরিয়ে চলছে বচসা। বেশ কিছু সময় ধরে বচসা চলার পরে চাঁদাবাজদের কাছে হার মানছেন তাঁরা। টাকা দিয়ে তবেই মিলছে রেহাই। সম্প্রতি হাতিরামপুরের এই ঘটনা মেনে নিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার। তবে তাঁর দাবি, “স্থানীয় থানা ঘটনার খবর পাওয়ার পরেই ওই এলাকায় গিয়ে নজরদারি চালায়। এ সব বরদাস্ত করা হবে না বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের কড়া ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

উল্লেখ্য, বাঁকুড়া-খাতড়া এই রাজ্য সড়কটি ধরেই জেলার অন্যতম পর্যটন স্থল মুকুটমণিপুরে যেতে হয়। ভ্রমণপ্রিয় মানুষেরা এই ঘটনায় মারাত্মক সমস্যায় পড়ছেন। দুর্গাপুর থেকে গাড়ি ভাড়া করে বন্ধুদের নিয়ে মুকুটমণিপুরে পিকনিক করতে এসেছিলেন পিনাকি দত্ত। তাঁর অভিজ্ঞতা, “বাঁকুড়ায় ঢোকার পর থেকে কত জায়গায় যে চাঁদা দিতে হল তার ইয়ত্তা নেই। কোথাও ১০০ টাকা চাইছে, কোথাও ৫০ টাকা। পিকনিক করতে বেরিয়ে চাঁদার জুলুমের মধ্যে পড়ে খুব খারাপ লাগল।” ওন্দার এক সরকারি কর্মচারী কয়েক সপ্তাহ আগেই এই রাস্তা দিয়ে সপরিবারে মুকুটমণিপুরে যাচ্ছিলেন। তাঁর অভিযোগ, “মোটা টাকা চাঁদা দাবি করায় আমরা দিতে অস্বীকার করেছিলাম। তাতে আমাদের পিকনিক করতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। চাঁদা আদায়কারী কিছু যুবক দু’টি মোটরবাইকে আমাদের পিছুও নিয়েছিল। যদিও শেষে অবশ্য মাঝ রাস্তা থেকেই ওরা পালিয়ে যায়।”

শুধু বাঁকুড়া-খাতড়া রাস্তাতেই নয়, সোনামুখী-বিষ্ণুপুর, শালতোড়া-বাঁকুড়ার মতো জেলার বিভিন্ন রাস্তাতেই এই ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ উঠছে। খোদ বাঁকুড়া শহরের কেঠারডাঙা এলাকাতেই রাস্তা আটকে চাঁদা তুলতে দেখা যাচ্ছে। জেলা বাসমালিক সমিতির সম্পাদক দীপক সুকুল বলে, “বিশ্বকর্মা পুজো থেকে শুরু হয় চাঁদার জুলুম। দুর্গাপুজা, কালীপুজা পার করে সরস্বতী পুজোতেও একই ভাবে জুলুম চলে। একাধিকবার আমরা পুলিশকে সমস্যার কথা জানিয়েছি। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। কবে এর থেকে মুক্তি মিলবে তা জানা নেই।”

extortion police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy