ইঙ্গিত মিলেছিল প্রথম দিনই। মঙ্গলবার ৭৮ জনের মধ্যে এসেছিলেন ৪০ জনেরও বেশি। আর বুধবার ডিভিসি-র তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের ওয়াটার করিডরের জন্য ক্ষতিপূরণ নেওয়ার শিবিরের দ্বিতীয় দিনেও আশাতীত সাড়া মিলল। নিতুড়িয়া ব্লকের রায়বাঁধ পঞ্চায়েত অফিসের ওই শিবিরে এ দিন ক্ষতিপূরণ নিলেন ৯০ শতাংশেরও বেশি জমিহারা।
এ দিন রায়বাঁধ মৌজার ১৭৪ জন জমি-মালিককে ক্ষতিপূরণ নিতে ডেকেছিল পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। জেলা জমি অধিগ্রহণ দফতর সূত্রের খবর, বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ হিসাবে চেক ও নগদ টাকা নিয়েছেন ১১২ জন। তখনও লাইনে আরও ৫০-৬০ জন। কিন্তু, সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মীরা শিবির গুটিয়ে নেন। দফতরের জেলা আধিকারিক ইন্দ্রদেব ভট্টাচার্য জানান, যাঁদের এ দিন ক্ষতিপূরন দেওয়া সম্ভব হয়নি, তাঁদের জন্য দ্রুত আর একটি শিবির করা হবে।
ক’দিন আগেও যাঁরা ওয়াটার করিডরের জন্য জমি দেবেন না বলে আন্দোলন চালিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন, সেই অনিচ্ছুক জমি-মালিকদের ক্ষতিপূরণ নিতে এমন সাড়া পেয়ে অনেকটাই দুশ্চিন্তামুক্ত হয়েছেন ডিভিসি কর্তৃপক্ষ। ওয়াটার করিডরের জমিজট দ্রুত কাটছে বলেও তাঁদের ধারণা। দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা ওয়াটার করিডর নির্মাণের জট কাটতে শুরু করায় রঘুনাথপুরের প্রকল্প থেকে আগামী মার্চ মাসের মধ্যেই বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করার বিষয়ে আশাবাদী ডিভিসি। সংস্থার ডিরেক্টর (প্রজেক্ট) দেবাশিস মিত্র এ দিন বলেন, “ওয়াটার করিডরের জমিহারারা ক্ষতিপূরণ নিতে আগ্রহী হয়েছেন। ফলে, সেখানে জমি সংক্রান্ত জটিলতা কাটছে। জলের পাইপ লাইন পাতার জন্য মাটি খোঁড়ার কাজেও এখন আর বাধা নেই। এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে আগামী মার্চের মধ্যেই রঘুনাথপুর প্রকল্পের প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করা যাবে বলে আমাদের আশা।”
চলতি সপ্তাহেই প্রথম ইউনিট থেকে সর্বোচ্চ মাত্রায় (৬০০ মেগাওয়াট) পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করেছে ডিভিসি। আগামী বছর জানুয়ারি মাসের মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিট থেকেও পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরুর কথা। এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জলের সংস্থানের সমস্যা কেটে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর প্রক্রিয়া শুরু করার কথা ভাবছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি। দেবাশিসবাবু জানান, রঘুনাথপুরের প্রথম ইউনিট থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ কেনার বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, পঞ্জাব, কেরল, হরিয়ানার সঙ্গেও ‘পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট’ (পিপিএ) আগেই করা হয়েছে। তিনি বলেন, “প্রশাসনের সক্রিয় সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে। সব মিলিয়ে ওয়াটার করিডরের কাজ মার্চের মধ্যে শেষ করা সম্ভব বলে আমরা মনে করছি। আর প্রকল্পে জলের সংস্থান হলেই বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করতে কোনও সমস্যা হবে না।”
লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই থমকে থাকা ওয়াটার করিডরের কাজে গতি আসতে শুরু করেছে। পাইপ লাইন পাতার কাজে ধারাবাহিক ভাবে বাধা দিয়ে আসা ‘জমিরক্ষা সংগ্রাম কমিটি’ নির্বাচনের কিছু আগে বিজেপি-র ছাতার তলায় চলে আসার পরে ওই এলাকার রাজনৈতিক বিন্যাসেরও কিছুটা বদল ঘটেছে। প্রশাসন ও বিজেপি-র নেতাদের সঙ্গে আলাচনায় বসে জমিহারাদের মধ্যে থেকে দুশো জনকে ওই প্রকল্পে ঠিকা শ্রমিকের কাজে নিয়োগের দাবি ডিভিসি কর্তৃপক্ষ মেনে নেওয়ার পরে বরফ দ্রুত গলতে শুরু করেছিল। এবং তারই ফলে আশাতীত সাড়া মিলেছে ক্ষতিপূরণ নেওয়ার শিবিরে।
রায়বাঁধ মৌজার প্রায় ২৫০ জন জমিহারাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য আগের শিবিরগুলিতে সক্রিয় বাধা দিয়েছিল জমিরক্ষা সংগ্রাম কমিটি। কিন্তু, মঙ্গল ও বুধবারএই দু’দিনের শিবিরে সকাল থেকে সেই সংগ্রাম কমিটির সদস্যেরাই ক্ষতিপূরণ নিতে জড়ো হয়েছিলেন। কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা কাজল মণ্ডলের কথায়, “আমাদের অন্যতম দাবি ছিল, কর্মসংস্থান। আগের শিবিরগুলি যখন হয়েছিল, সেই সময়ে আমাদের এই দাবি পূরণ হয়নি বলেই জমিহারারা ক্ষতিপূরণ নিতে আসেননি। বর্তমানে কর্মসংস্থানের বিষয়ে ডিভিসি নির্দিষ্ট ভাবে জানানোর পরেই পরিস্থিতির বদল ঘটেছে।” গত দু’দিন ধরেই শিবিরে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা তথা বিজেপি-র জেলা সহ-সভাপতি সুভাষ মণ্ডল। তাঁর দাবি, “কর্মসংস্থানের দাবিটি ডিভিসি-র কাছ থেকে আমরা আদায় করতে পেরেছি বলেই জমিহারারা আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ক্ষতিপূরণ নিতে শিবিরে এসেছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy