Advertisement
E-Paper

শিয়রে বিজেপি, দলে ফেরার ডাক মুস্তাকের

এলাকায় বিজেপি-র সংগঠন দ্রুত শক্তি বৃদ্ধি করছে। বিজেপি-র এই উত্থান কপালে ভাঁজ ফেলেছে তৃণমূল নেতৃত্বের। এ রকম পরিস্থিতিতে তাত্‌পর্যপূর্ণ ভাবে কসবায় গিয়ে বিক্ষুব্ধদের দলে ফেরার ডাক দিয়েছেন তৃণমূলের সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত পাড়ুই থানা কমিটির সভাপতি মুস্তাক হোসেন। শুধু তা-ই নয়, দলের সংগঠনে কিছু ‘দুর্নীতি’ ও ‘ত্রুটি-বিচ্যুতি’ থাকার কথাও তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৪ ০০:২৪
বিক্ষুব্ধদের দলে ফেরার ডাক দিয়ে মিছিল কসবায়।—নিজস্ব চিত্র।

বিক্ষুব্ধদের দলে ফেরার ডাক দিয়ে মিছিল কসবায়।—নিজস্ব চিত্র।

এলাকায় বিজেপি-র সংগঠন দ্রুত শক্তি বৃদ্ধি করছে। বিজেপি-র এই উত্থান কপালে ভাঁজ ফেলেছে তৃণমূল নেতৃত্বের। এ রকম পরিস্থিতিতে তাত্‌পর্যপূর্ণ ভাবে কসবায় গিয়ে বিক্ষুব্ধদের দলে ফেরার ডাক দিয়েছেন তৃণমূলের সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত পাড়ুই থানা কমিটির সভাপতি মুস্তাক হোসেন। শুধু তা-ই নয়, দলের সংগঠনে কিছু ‘দুর্নীতি’ ও ‘ত্রুটি-বিচ্যুতি’ থাকার কথাও তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন। আবার ওই সব কর্মকাণ্ডে জড়িত নেতা-কর্মীদের সংগঠন থেকে দ্রুত ছেঁটে ফেলার হুঁশিয়ারিও দিয়ে রাখলেন মুস্তাক। উল্টে দলের বিক্ষুব্ধ অংশ ও বিজেপি-তে যোগ দেওয়া নেতা-কর্মীদের প্রতি তাঁর আহ্বান, “দলে ফিরে আসুন। আপনাদের সসম্মানে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।” তৃণমূলের এই ডাককে অবশ্য ‘প্রহসন’ বলেই দাবি করছেন জেলার বিজেপি নেতারা। তাঁদের দাবি, এলাকায় হারিয়ে ফেলা জনসমর্থন পুনরুদ্ধার করতেই তৃণমূল এই কৌশল নিতে বাধ্য হয়েছে।

ঘটনা হল, গত পঞ্চায়েত ভোটের সময় এই কসবা বাসস্ট্যান্ডে নির্বাচনী মঞ্চে দাঁড়িয়ে রাজ্যের দুই মন্ত্রীকে পাশে বসিয়ে দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল পুলিশকে বোমা মারার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এমনকী, ওই সভায় অনুব্রতকে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে নির্দল প্রার্থী ও দলের বিক্ষুব্ধদের বাড়িতে চড়াও হওয়ার পরামর্শও দিয়েছিলেন। শনিবার বিকেলে ওই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে তৃণমূলের শান্তি প্রতিষ্ঠা, উন্নয়ন এবং সন্ত্রাস বিরোধী প্রতিবাদ মিছিল কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে সে দিনের কথা স্মরণ করিয়ে মুস্তাক দাবি করেছেন, “উত্তেজিত হয়ে দলের জেলা সভাপতি কিছু কথা বলেছিলেন ঠিকই। কিন্তু তাঁর জন্য তিনি বারবার ক্ষমা চেয়েছেন, ভুল স্বীকার করেছেন। তাঁর ওই কথার পরে এলাকায় কোথাও তেমন কোনও অঘটন ঘটেনি।” তিনি এমন দাবি করলেও অনুব্রতর ওই উস্কানির তিন দিন পরেই গত বছর ২১ জুলাই রাতে দুষ্কৃতীদের হাতে গুলিবিদ্ধ হন কসবার বাঁধনবগ্রামের নির্দল প্রার্থী হৃদয় ঘোষের বাবা সাগর ঘোষ। অনুব্রতর উস্কানিতে তাঁকে খুন করতে এসেই দুষ্কৃতীরা সাগরবাবুকে গুলি করে বলে হৃদয়বাবুর অভিযোগ। ওই ঘটনায় অনুব্রত-সহ জেলার একাধিক তৃণমূল নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল।

ঘটনাচক্রে, মুস্তাক যখন তাঁর নেতাকে ‘ক্লিনচিট’ দিচ্ছেন, তখন ওই সভায় হাজির তৃণমূলের সাত্তোর অঞ্চল সম্পাদক শেখ মুস্তফা। যিনি ইতিমধ্যেই সাগর হত্যা কাণ্ডে কয়েক মাস জেলে থেকে সম্প্রতি জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। সাম্প্রতিক মাখড়া-কাণ্ডে নিহত বিজেপি কর্মী শেখ তৌসিফ আলি খুনেও তাঁর নাম এফআইআর-এ রয়েছে। এই অবস্থায় মুস্তাকের দলে ফেরার বার্তায় বিক্ষুব্ধেরা কতটা সাড়া দেবেন তা নিয়ে দলেরই অন্দরে সংশয় তৈরি হয়েছে। তৃণমূলের এই ‘ডাক’কে হাস্যকর বলে ব্যাখ্যা হৃদয়বাবুর। তিনি বলেন, “আমি জানি না, মুস্তফার মতো অপরাধীদের সঙ্গে নিয়ে মুস্তাক হোসেন ঠিক কী বার্তা দিতে চাইলেন! তবে, এটুকু বলতে পারি আমরা আর ভুল পথে পা মাড়াবো না।” অন্য দিকে, তৃণমূল নেতাদের উপরে ক্ষোভ কিছুতেই কমছে না কসবার পঞ্চায়েত প্রধান শঙ্করী দাসের। এক তৃণমূল নেতার উপর হামলার ঘটনায় তাঁর স্বামী, তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দেওয়া নিমাই দাস পুজোর আগে থেকেই জেল হাজতে রয়েছেন। মুস্তাকের আহ্বান শুনে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “যারা আমার স্বামীকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসিয়েছে, তাদের মুখে এ সব কথা মানায় না। মানুষ সব দেখছেন। তাঁরা ঠিক এ সবের বিচার করবেন।”

শনিবারের সভায় অবশ্য মুস্তাক হোসেন আগাগোড়া বিজেপি-কে সাম্প্রদায়িক শক্তি বলে আক্রমণ করেন। নাম না করে বিজেপি-র জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডলের উদ্দেশে তাঁর কটাক্ষ, “দু’টি পাখনার জায়গায় দশটি পাখনা গজিয়েছে!” এমনকী, মাখড়া-চৌমণ্ডলপুর-কাণ্ডে তিনি বিজেপি-কেই কাঠগড়ায় দাঁড় করান। মুস্তাকের অভিযোগ, “পাড়ুই থানার একাধিক পঞ্চায়েত এলাকায় বিজেপি অপরাধ সংগঠিত করছে। ঘটনার কয়েক মাস আগে থেকেই লুঠ, সন্ত্রাস এবং তাণ্ডবের মতো অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি করেছিল বিজেপি।” ওই অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়েছেন বিজেপি জেলা সভাপতি। দুধকুমার পাল্টা বলেন, “চোরের মায়ের বড় গলা! পুলিশ অফিসারকে বোমা মেরে খুন করা, থানায় ঢুকে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীকে পেটানো, এলাকায় তোলাবাজি করা, পুলিশ-প্রশাসনকে ব্যবহার করে এলাকায় সন্ত্রাস তৈরি করা এগুলো কারা করেছে? তৃণমূল মানুষকে আর কত বোকা বানাবে!”

এ দিকে, তৃণমূলের ঘরের ফেরার ডাকের এই রণকৌশলকে মোটেও পাত্তা দিতে রাজি নন দুধকুমার। তাঁর যুক্তি, “আসলে ওদের পায়ের তলার মাটি দ্রুত সরে যাচ্ছে। এলাকায় এলাকায় জনসমর্থন হারাচ্ছে। বেকায়দায় পড়ে এখন এই সব বলছে। তাতে কোনও লাভ হবে না। রাজ্যের মানুষ ওদের প্রকৃত স্বরূপ বুঝে গিয়েছেন। তাঁরা ২০১৬ সালেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে সঠিক জবাব দিয়ে দেবে।”

mustaq hosain call for joining bjp parui
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy