Advertisement
E-Paper

সংরক্ষিত মন্দিরের পাশে অবৈধ নির্মাণ, সমীক্ষা শুরু বিষ্ণুপুরে

প্রত্নতাত্ত্বিক ভাবে সংরক্ষিত এলাকা থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত নিষিদ্ধ এলাকা। সেখানে যে কোনও ধরনের নির্মাণকাজই বেআইনি। আবার নিষিদ্ধ এলাকা থেকে আরও ২০০ মিটার পর্যন্ত রয়েছে নিয়ন্ত্রিত এলাকা। সেখানে নির্মাণকাজ করতে গেলেও পুরাতত্ত্ব বিভাগের অনুমতি নেওয়া আবশ্যিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৩৭
মন্দিরের কাছেই বাড়ি। রাধাবিনোদ মন্দির পরিদর্শন করছেন আধিকারিকরা। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

মন্দিরের কাছেই বাড়ি। রাধাবিনোদ মন্দির পরিদর্শন করছেন আধিকারিকরা। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

প্রত্নতাত্ত্বিক ভাবে সংরক্ষিত এলাকা থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত নিষিদ্ধ এলাকা। সেখানে যে কোনও ধরনের নির্মাণকাজই বেআইনি। আবার নিষিদ্ধ এলাকা থেকে আরও ২০০ মিটার পর্যন্ত রয়েছে নিয়ন্ত্রিত এলাকা। সেখানে নির্মাণকাজ করতে গেলেও পুরাতত্ত্ব বিভাগের অনুমতি নেওয়া আবশ্যিক। কিন্তু, মন্দিরনগরী বিষ্ণুপুরে এই নিয়ম না মেনে বহু বেআইনি নির্মাণ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে বারবার। এই অবস্থায় ১৯৫৮ সালের ‘দ্য এনসিয়েন্ট মনুমেন্ট অ্যান্ড আর্কিওলজিক্যাল সাইটস অ্যান্ড রিমেনস অ্যাক্ট’ মানা হচ্ছে কি না, তা জানার উদ্দেশ্যে সমীক্ষার কাজ শুরু করল বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন।

এই জেলায় সবচেয়ে বেশি সংরক্ষিত মন্দির রয়েছে বিষ্ণুপুর শহরে, যার সংখ্যা ২০টি। ষোড়শ-সপ্তদশ শতকে মল্লরাজাদের আমলে তৈরি হয়েছিল টেরাকোটা অলঙ্করণ ও স্থাপত্য শৈলীতে অনবদ্য এই মন্দিরগুলি। এই মন্দিরের টানে সারা বছর প্রচুর পর্যটক ভিড় জমান বিষ্ণুপুরে। সেই ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করে এখানকার মন্দিরগুলিকে ইউনেস্কোর শিক্ষা-সমাজ ও সংস্কৃতি বিভাগের কাছে ‘বিশ্ব ঐতিহ্য স্মারক’ ঘোষণার প্রস্তাব পাঠিয়েছেন ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের (আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া) মহানির্দেশক।

সম্প্রতি মন্দির সংলগ্ন এলাকায় আইন অমান্য করে নির্মাণকাজ চলার অভিযোগ ঘিরে প্রতিবাদ শুরু হয় বিভিন্ন মহলে। এর পরে মহকুমা প্রশাসন উদ্যোগী হয়ে কয়েকটি বাড়ি ভেঙেও দেয়। এ বার শহরের সব সংরক্ষিত মন্দির এলাকার অবস্থা জানতে সমীক্ষার কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার সকালে পুরাতত্ত্ব ও ভূমি রাজস্ব দফতরের কর্মী ও আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে খড়বাংলার তাঁতিপাড়ায় রাধাবিনোদ মন্দিরে পৌঁছন বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক পলাশ সেনগুপ্ত। ১৬৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত আট চালা আকৃতির এই মন্দির দিয়েই শুরু হয় সমীক্ষার কাজ। মন্দিরের সরকারি বেড়ার গা ঘেঁষে বেশ কয়েকটি বাড়ি চোখে পড়ে প্রশাসনের কর্তাদের। সমীক্ষার কাজ চলাকালীনই এক মহিলা একটি বাড়ি থেকে বেরিয়ে সমীক্ষক দলের দিকে কাঁদতে কাঁদতে এগিয়ে আসেন। মহকুমাশাসকের কাছ তিনি জানতে চান, “আমার বাড়ি একশো বছরেরও পুরনো। দুই ছেলে বড় হয়েছে। আমরা গরিব। স্বামী রান্নার কাজ করেন। এক ছেলের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সামান্য চাকরি। বাইরে জায়গা কেনার টাকা নেই। আমরা কোথায় যাব?”

মহকুমাশাসক তাঁকে জানান, তাঁরা এখানে শুধু সমীক্ষার কাজে এসেছেন। এ বিষয়ে বলার কেউ নন। পুরাতত্ত্ব দফতরের ডিরেক্টরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয় ওই মহিলাকে। রাধাবিনোজ মন্দির থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত এ দিন ফিতে ধরে এবং ভূমি দফতরের ম্যাপ নিয়ে সমীক্ষার কাজ চলে। সমীক্ষক দলের পিছনে ভিড় জমান এলাকার বাসিন্দারা। মহকুমাশাসক পরে বলেন, “জেলাশাসকের নির্দেশে সমীক্ষার কাজটি শুরু হল। চলবে এপ্রিল মাস পর্যন্ত। পুরাতত্ত্ব ও ভূমি দফতর রিপোর্ট জমা দেওয়ার পর বেআইনি নির্মাণের প্রকৃত চেহারা জানা যাবে।” এই সমীক্ষার পাশাপাশি মন্দির লাগোয়া ১০০ মিটারের মধ্যে আইন ভেঙে নতুন নির্মাণ না করার বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচারও নানা ভাবে চালানো হচ্ছে বলে মহকুমাশাসক জানিয়েছেন।

bishnupur illegal construction radhabinod temple
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy