Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
কোটশিলার স্কুল পরিদর্শনে পঞ্চায়েত সমিতির দল

সাড়ে ১১টাতেই স্কুলে তালা, ক্ষুব্ধ সভাপতি

কোথাও দরজায় ঝুলছে তালা, কোথাও ক্লাসঘরে গুটিকয়েক পড়ুয়া, কোথাওবা মিড-ডে মিলের রান্না চলছে। পড়ুয়ারাও থাকলেও শিক্ষকের দেখা নেই। কেন তাঁরা গরহাজির, কেউই জানেন না। শুক্রবার ঝালদা ২ ব্লকের কিছু প্রাইমারি স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে এই দৃশ্য দেখে চোখ কপালে উঠেছে ঝালদা ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ থেকে প্রশাসনিক আধিকারিকদের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোটশিলা শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:১৯
Share: Save:

কোথাও দরজায় ঝুলছে তালা, কোথাও ক্লাসঘরে গুটিকয়েক পড়ুয়া, কোথাওবা মিড-ডে মিলের রান্না চলছে। পড়ুয়ারাও থাকলেও শিক্ষকের দেখা নেই। কেন তাঁরা গরহাজির, কেউই জানেন না।

শুক্রবার ঝালদা ২ ব্লকের কিছু প্রাইমারি স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে এই দৃশ্য দেখে চোখ কপালে উঠেছে ঝালদা ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ থেকে প্রশাসনিক আধিকারিকদের। জেলার মধ্যে নারী শিক্ষায় সব থেকে পিছিয়ে পড়া এই ব্লকের স্কুলগুলিরই এমন হালে ক্ষুদ্ধ তাঁরা। শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ মথন কুমারের কথায়, “এলাকার প্রাথমিক স্কুলগুলি কেমন চলছে তাই দেখতে বেড়িয়েছিলাম। কিন্তু যে সময়ে স্কুল খোলা থাকার কথা, সেই সময়ে গিয়ে দেখি কয়েকটি স্কুল বন্ধ। দরজায় তালা ঝুলছে। কিছু স্কুল খোলা থাকলেও শিক্ষকদের দেখা পাইনি। তাঁদের অনুপস্থিতি নিয়ে সদুত্তরও পাইনি।”

তাঁর অভিযোগ, প্রথমে তাঁরা গোয়ালাডি প্রাইমারি স্কুলে গিয়ে দেখেন, ১১৬ জন পড়ুয়ার মধ্যে মাত্র ৭ জন উপস্থিত। চারজনের জায়গায় দু’জন মাত্র শিক্ষক রয়েছেন। একজন ছুটিতে থাকলেও অন্যজন কেন আসেননি তা সহ শিক্ষকরা জানাতে পারেননি। দুপুর প্রায় ১টায় তাঁরা যান চিরুহাতু প্রাইমারি স্কুলে। সেখানে দেখেন দরজায় তালা ঝুলছে। এর কারণ এলাকার বাসিন্দারাও জানাতে পারেননি। তাঁরা জানিয়েছেন, গত দু’দিন ধরে স্কুল বন্ধ। আদারডি স্কুলে গিয়ে তাঁরা দেখেন, ছাত্র ও শিক্ষকের উপস্থিতি বেশ কম। পাশের গ্রাম মাতকুমা প্রাইমারি স্কুলেও প্রায় একই ছবি। মুটুকুড়া প্রাইমারি স্কুল, মহুদা জুনিয়র স্কুলে গিয়েও তাঁরা দেখেন দরজায় তালা ঝুলছে। আবার মহুদা প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষক-ছাত্র দেখা গেলেও সেখানে এ দিন মিড-ডে মিল রান্না বন্ধ ছিল। এর কারণ হিসেবে শিক্ষকরা তাঁদের জানিয়েছেন, পড়িয়া কম থাকায় এ দিন রান্না হয়নি।

স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ ললিতবরণ কুমার বলেন, “আবার বাসুদেবপুর প্রাইমারি স্কুল ও বাসুদেবপুর জুনিয়র হাইস্কুলে পড়ুয়া ছিল, মিড-ডে মিল রান্নাও হয়। কিন্তু কোনও শিক্ষক ছিলেন না। খবর পেয়ে গ্রামেরই একজন পার্শশিক্ষক স্কুলে এসে জানান, অন্য শিক্ষকদের অনুপস্থিতি নিয়ে তিনি কিছু জানেন না। বেলা প্রায় আড়াইটায় পাশের গ্রাম পড়াডি প্রাইমারি স্কুলে গিয়ে দেখি তালা ঝুলছে।”

এ দিনই ব্লকের অন্য প্রান্তে বেড়িয়েছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শিখা কুমার। কেমন অভিজ্ঞতা তাঁর? শিখাদেবীর কথায়, “একের পর এক স্কুলে তালা ঝুলতে এবং একজন বা দু’জন শিক্ষক দেখতে হবে ভাবিনি। কিন্তু তাই দেখলাম। সর্বত্র যেন ছুটির মেজাজ।” তিনি জানিয়েছেন, বেলা সাড়ে ১১টায় শ্যামপুর প্রাইমারি স্কুলে গিয়ে দেখেন তালা ঝুলছে। উড়ুসাড়াম ও উকুমা প্রাইমারি স্কুলে গিয়ে দেখেন দু’জায়গাতেই ৪ জন শিক্ষকের মধ্যে ১ জন উপস্থিত। কেন তাঁরা আসেননি জানা যায়নি। মিড-ডে মিলও বন্ধ ছিল। আবার বিনদারু প্রাইমারি স্কুলে দু’জমের মধ্যে এক শিক্ষক থাকলেও কোনও ছাত্রকে দেখা যায়নি। নওয়াহাতু প্রাইমারি স্কুল বন্ধ ছিল। রোলা ১ নম্বর প্রাইমারি স্কুলে ৭ শিক্ষকের মধ্যে ১ জন হাজির ছিলেন। কোনও পড়ুয়াও ছিল না। সভাধিপতি জানান, ২-২০ থেকে বিকেল ৪টের মধ্যে খটঙ্গা, চামকাটা, বড় মেটালা, দামড়া, টাটুয়াড়া প্রাথমিক স্কুলে গিয়ে সর্বত্র দরজায় তালা দেখেন তাঁরা। আবার চিতমু স্কুলে হাজিরা খাতায় দু’জন শিক্ষকের স্বাক্ষর থাকলেও একজন শিক্ষককেই দেখতে পাওয়া গিয়েছে। পরিদর্শন শেষে সভাধিপতি বলেন, “ঝালদা ২ ব্লকের শিক্ষার এমনিতেই বেহাল অবস্থা। তারপরেও এই হাল দেখে আমরা হতাশ।”

সমস্ত ঘটনার কারণ জানতে চেয়ে ঝালদা ২ চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ। পুরো বিষয়টি তিনি ফোনে জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষকে জানিয়েছেন। তাঁকে এ নিয়ে রিপোর্টও পাঠানো হচ্ছে। ঝালদা ২ চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক রিয়াজ ইসরত সামসি বলেন, “এ দিন আমি কাজে বাইরে ছিলাম। আমি পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ বা সভাপতির সঙ্গে কথা বলব। এ দিন কেন এলাকার বিভিন্ন স্কুল বন্ধ ছিল তাও খতিয়ে দেখা হবে।” জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ সুষেণচন্দ্র মাঝি জানান, গাফিলতি প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ওই এলাকার প্রাইমারি শিক্ষকদের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে জেলা তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষা সেলের আহ্বায়ক সমীরণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “শুনেছি বৃহস্পতিবার ওই চক্রের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ছিল। সে জন্য প্রতিযোগিতার পরে একদিন স্কুলে ছুটি দেওয়া হতে পারে। কিন্তু সেই ছুটি অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের ঘোষণা করার কথা। বিনা কারণে স্কুল বন্ধ রাখা হলে তা সমর্থন করা যায় না।” আবার নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক বিশ্বনাথ মাহাতো বলেন, “আঞ্চলিক স্তরের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পরের দিন ছুটি থাকে না।” পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক সুধন্যা মাহাতোও জানান, অকারণে স্কুল বন্ধ রাখা হলে তা ঠিক হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kotshila school panchayat samiti
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE