Advertisement
E-Paper

সচেতনতার বার্তা দিয়ে পুরস্কৃত ডাক্তার

হাসপাতালের চিকিত্‌সক হিসাবে তাঁর যা কর্তব্য, তা তিনি করেন তো বটেই। পাশাপাশি, কিছুটা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতো সামাজিক সচেতনার বার্তা পৌঁছে দেওয়াটাও তাঁর ব্রত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৪ ০১:১৯
নয়ন মুখোপাধ্যায়।

নয়ন মুখোপাধ্যায়।

হাসপাতালের চিকিত্‌সক হিসাবে তাঁর যা কর্তব্য, তা তিনি করেন তো বটেই। পাশাপাশি, কিছুটা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতো সামাজিক সচেতনার বার্তা পৌঁছে দেওয়াটাও তাঁর ব্রত। সাপে ছোবল মারলে ওঝার কাছে না নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে আনার কথা প্রচার করা থেকে শুরু করে ডাইনি প্রথার মতো কুসংস্কার দূর করার উদ্যোগ সবেতেই রয়েছেন তিনি।

পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের সেই চিকিত্‌সক নয়ন মুখোপাধ্যায়কে তাঁর এই কাজের স্বীকৃতি হিসাবে পুরস্কৃত করছে দিল্লির একটি বেসরকারি সংগঠন। খেলাধুলো, সমাজসেবা, শিল্পকলা-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যাঁরা ভাল কাজ করে যাচ্ছেন, তাঁদের পুরস্কৃত করে ‘ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশন্যাল ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি’ নামে ওই সংগঠনটি। সেপ্টেম্বর মাসে নয়াদিল্লিতে তাঁকে সম্মানিত করা হবে বলে সংস্থার তরফে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে শল্য চিকিত্‌সক নয়নবাবুকে।

নয়নবাবু বলেন, “সাপে কাটা রোগীকে যে প্রথমেই হাসপাতালে আনা উচিত, বহু মানুষ সেটা জানেন না। অন্ধ বিশ্বাসের তাড়নায় তাঁরা রোগীকে নিয়ে যান ওঝা বা গুণিনের কাছে। শেষে যখন রোগীকে হাসপাতালে আনা হয়, তখন আর কিছু করার থাকে না।” এ রকম একটি ঘটনার কথা তিনি নিজেই জানালেন। এক রাতে তিনি জরুরি বিভাগে ডিউটি করছিলেন। ভোররাতে সাপে কাটা এক রোগিণীকে নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে এলেন কয়েক জন। রোগিণীর মুখ দিয়ে তখন গ্যাঁজলা বেরোচ্ছে। মহিলাকে দ্রুত ওয়ার্ডে নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন ইঞ্জেকশন দিয়েও বাঁচানো গেল না। মৃতার আত্মীয়দের জিজ্ঞেস করে নয়নবাবু জানলেন, রোগিণীকে সাপে কেটেছিল আগের রাতে। কেন আগে আনা হয়নি, জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, আগে তাঁরা এক ওঝাকে ডেকেছিলেন। সারা রাত ঝাড়ফুঁক থেকে মন্ত্রপড়া করার পরে যখন রোগিণী মরমর, তখন তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।

নয়নবাবুর কথায়, “আমি খবর নিয়ে দেখলাম, একজন ওঝা ওই গ্রামেই থাকেন। অভিজ্ঞতায় দেখেছি বিষধর সাপে না ছোবল মারলে রোগীরা অনেক সময়েই বেঁচে যান। তাতে ওঝার কোনও কেরামতিই থাকে না। সমস্যা হয় বিষধর সাপে কাটলে।” নয়নবাবু তখন জেলা বিজ্ঞানমঞ্চের সম্পাদক। তিনি ঠিক করলেন, ওই গ্রামে গিয়ে ওঝাকে সকলের সামনে ডেকে কেন এই রোগিণী মারা গেলেন, তার কারণ জানতে চাইব। নয়নবাবুর প্রশ্নবাণের মুখে পড়ে সে দিন ওঝা নিজের হার স্বীকার করে গ্রামবাসীর কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়েছিলেন। নয়নবাবু বলেন, “এলাকার নামকরা ওঝা এ ভাবে ক্ষমা চাওয়ায় কাজ হয়েছিল। মানুষ বুঝেছিল, সাপে ছোবল মারলে হাসপাতালেই নিয়ে যাওয়া দরকার, ওঝার কাছে নয়।”

শুধু সাপে কাটার ক্ষেত্রে নয়, ডাইনি সন্দেহে কোনও মহিলাকে একঘরে করে রাখা বা গ্রামে কারও উপর অপদেবতা ভর করেছে, এমন কুসংস্কারের খবর পেলেও বিজ্ঞানমঞ্চের কর্মীদের নিয়ে সেখানে ছুটেছেন নয়নবাবু। দীর্ঘ দেড় দশক ধরে নিজের ডাক্তারি পেশার পাশাপাশি এ ভাবেই পুরুলিয়ার গাঁ-গঞ্জে নিরন্তর সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দেওয়ার কাজ নীরবে করে চলেছেন তিনি। আর তারই ফল, এই পুরস্কার। নয়নবাবুর কথায়, “আমার পাশে থেকে যাঁরা এই কাজ করে গিয়েছেন, এই সম্মান তাঁদের আরও অনুপ্রেরণা জোগাবে।”

nayan mukhopadhay purulia purulia sadar hospital doctor felicitation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy