Advertisement
১৯ মে ২০২৪

সম্পত্তি বেহাতের নালিশ, অভিযুক্ত যুব নেতা

জালিয়াতি করে সম্পত্তি বেহাত করা হয়েছে বলে বাঁকুড়া সিজেএম আদালতে অভিযোগ করলেন এক অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষিকা। সেই অভিযোগে নাম জড়িয়েছে বাঁকুড়ার জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বাঁকুড়া শহরের স্কুলডাঙা এলাকার ওই বৃদ্ধা নমিতা ঘোষ শিবাজীবাবুর সঙ্গে তাঁরা স্ত্রী, বন্ধু-সহ ছ’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন। শুক্রবার সেই বাড়িতেই তিনি সাংবাদিকদের কাছে এই অভিযোগের কথা জানান। যদিও শিবাজীবাবুর দাবি, রীতিমতো আইন মেনে বৃদ্ধার ছেলে মোটা টাকা নিয়ে ওই সম্পত্তি তাঁর স্ত্রী ও এক বন্ধুর নামে বিক্রি করেছেন। জালিয়াতির অভিযোগ তিনি মানতে চাননি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৩২
Share: Save:

জালিয়াতি করে সম্পত্তি বেহাত করা হয়েছে বলে বাঁকুড়া সিজেএম আদালতে অভিযোগ করলেন এক অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষিকা। সেই অভিযোগে নাম জড়িয়েছে বাঁকুড়ার জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বাঁকুড়া শহরের স্কুলডাঙা এলাকার ওই বৃদ্ধা নমিতা ঘোষ শিবাজীবাবুর সঙ্গে তাঁরা স্ত্রী, বন্ধু-সহ ছ’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন। শুক্রবার সেই বাড়িতেই তিনি সাংবাদিকদের কাছে এই অভিযোগের কথা জানান। যদিও শিবাজীবাবুর দাবি, রীতিমতো আইন মেনে বৃদ্ধার ছেলে মোটা টাকা নিয়ে ওই সম্পত্তি তাঁর স্ত্রী ও এক বন্ধুর নামে বিক্রি করেছেন। জালিয়াতির অভিযোগ তিনি মানতে চাননি।

নমিতাদেবী প্রাক্তন স্কুল শিক্ষিকা। বাড়িতে তাঁর শয্যশায়ী স্বামী, বিধবা পুত্রবধূ ও নাতি রয়েছে। তিনি জানান, ১৯৯৯ সালে প্রায় সাড়ে চারকাঠা জমির উপরে এই বাড়িটি তাঁরা কিনেছিলেন। সম্পত্তির মালিকানা ছিল তাঁরই নামে। স্বামী ও একমাত্র ছেলেকে নিয়ে ওই বাড়িতে বসবাস শুরু করেছিলেন তিনি। পরে তাঁর ছেলের বিয়ে দেন। তাঁর ছেলে দীপঙ্কর ঘোষ ২০১৩ সালের জুলাই মাসে অসুস্থ হয়ে মারা যান। নমিতাদেবীর অভিযোগ, “গত বছর নভেম্বর মাসে হঠাৎ শিবাজী এসে দাবি করে এই বাড়ি তিনি কিনেছেন। তিনি আমাদের বাড়ি খালি করার নির্দেশ দেওয়ায় অবাক হয়ে যাই।” তিনি জানান, রেজিস্ট্রেশন অফিসে খোঁজ করে জানতে পারেন, ২০১২ সালের মার্চ মাসে বাড়িতে কমিশন বসিয়ে তিনি নাকি ছেলেকে ‘পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি’ দেন। তার ভিত্তিতেই তাঁর ছেলে ওই সম্পত্তি শিবাজীবাবুর স্ত্রী ও আর এক ব্যক্তির নামে লিখে দিয়েছেন। নমিতাদেবীর দাবি, “আমি কোনও দিনই কমিশন বসিয়ে ‘পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি’ ছেলেকে দিইনি। ওখানে যে সই রয়েছে, তাও আমার নয়। আঙুলের ছাপ অন্যের। ছেলের অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে শিবাজী চক্রান্ত করে আমার সম্পতি বেহাত করেছে।”

নভেম্বরেই নমিতাদেবী বাঁকুড়া সিভিল কোর্টে তাঁর সম্পত্তি অনৈতিক ভাবে নেওয়ার অভিযোগ করে বাড়িতে বসবাসের অনুমতি চান। এরই মধ্যে বাড়িটির পড়চা পরিবর্তনের জন্য বাঁকুড়া ১ ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর থেকে তাঁর কাছে নোটিসও এসেছে বলে জানিয়েছেন নমিতাদেবী। তাই বৃহস্পতিবার তিনি বাঁকুড়া সিজেএম আদালতে শিবাজীবাবুর সঙ্গে দলিলে নাম থাকা তাঁর স্ত্রী ও বন্ধু এবং পাওয়ার অফ অ্যাটর্নির কাগজে সই থাকা তৎকালীন জেলা অতিরিক্ত সাব রেজিস্ট্রার বংশীবদন সাহা-সহ ছ’জনের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ করেন। নমিতাদেবীর আইনজীবী অরূপ শীট বলেন, “বাড়ির মালিককে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে সম্পত্তি বেনাম করা হয়েছে। নমিতাদেবীর ছেলের অসুস্থতার সুযোগ নিয়েছেন অভিযুক্তেরা।”

অন্য দিকে, যাবতীয় অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন শিবাজীবাবু। উল্টে জমি মালিকের অনুপস্থিতিতে ভ্যালুয়েশন, রেজিস্ট্রেশন, পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি দেওয়া হয় কী করে সেই প্রশ্ন তুলছেন তিনি। শিবাজীবাবু দাবি করেছেন, “আমি ওই বাড়িটি কিনতে চাইনি। কিন্তু দীপঙ্করই আমাকে জানায়, ওর বাবা-মা অসুস্থ। তাই টাকার প্রয়োজন। শেষে আমার স্ত্রী ও এক বন্ধু ১৯ লক্ষ টাকায় বাড়িটি কেনে। তবে আমি দীপঙ্করকে বলেছিলাম যতদিন ওর মা-বাবা বাঁচবেন তাঁরা এই বাড়িতেই থাকবেন।” তাঁর আরও দাবি, সব ঘটনাই দীপঙ্করের পরিবার জানতেন। চুক্তিতে রাজি হওয়ার পরেই বাড়িতে কমিশন ডেকে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি দীপঙ্করের নামে করেন ওর মা।

তাহলে এখন এই সব কথা অস্বীকার করছেন কেন? শিবাজীবাবুর উত্তর, “কারও প্ররোচনায় এ সব করা হচ্ছে। আদালতে এই সব প্রমাণ করতে পারবেন না জেনেই এখন সাংবাদিকদের দিয়ে আমার নামে মিথ্যা কলঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ওই দম্পতির অসুস্থ জেনে খোঁজ নিতে গিয়েছিলাম। এখন বলা হচ্ছে আমি তাঁদের হুমকি দিতে গিয়েছিলাম। সব মিথ্যা। আদালতে সব কিছুর প্রমাণ দেব।” বাকি অভিযুক্তদের সঙ্গে চেষ্টা করে কথা বলা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Property bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE