Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

হস্টেলে তদন্তে পুলিশ- কর্তা, থামেনি রাজনীতি

রাইপুরের প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার কেন্দ্রীয় ছাত্রাবাসের সুপারের এ বার বদলির দাবিতে সরব হলেন তৃণমূলের একাংশ। হস্টেলের বর্তমান অবস্থার জন্য সুপারকে দায়ী করে রাইপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি জগবন্ধু মাহাতো শনিবার জেলা অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরে লিখিত ভাবে একটি আবেদনপত্র পাঠিয়েছেন। এ দিকে এই ঘটনার এতদিন পরে রবিবার হস্টেলে গিয়ে তদন্ত শুরু করলেন জেলা পুলিশের এক কর্তা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রাইপুর শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:১৯
Share: Save:

রাইপুরের প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার কেন্দ্রীয় ছাত্রাবাসের সুপারের এ বার বদলির দাবিতে সরব হলেন তৃণমূলের একাংশ। হস্টেলের বর্তমান অবস্থার জন্য সুপারকে দায়ী করে রাইপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি জগবন্ধু মাহাতো শনিবার জেলা অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরে লিখিত ভাবে একটি আবেদনপত্র পাঠিয়েছেন। এ দিকে এই ঘটনার এতদিন পরে রবিবার হস্টেলে গিয়ে তদন্ত শুরু করলেন জেলা পুলিশের এক কর্তা।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রাইপুরের এই হস্টেলকে ঘিরে বিতর্কের জল গড়াচ্ছে। চাপান উতোর শুরু হয়েছে তৃণমূলের যুযুধান দুই গোষ্ঠীর মধ্যে। গত ২২ অগস্ট ওই কেন্দ্রীয় ছাত্রী আবাসে নানা অব্যবস্থা অভিযোগ তুলে সুপারের সঙ্গে কথা বলতে যান তৃণমূল পরিচালিত রাইপুর পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ আশা মণ্ডল। অভিযোগ, ওই ছাত্রী আবাসের মধ্যেই তাঁকে আটকে রেখে সুপারের নেতৃত্বে হেনস্থা করা হয়েছিল। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে আশাদেবীকে উদ্ধার করে। পরে পুলিশের কাছে হস্টেল সুপার তাপসী দে-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন ওই কর্মাধ্যক্ষ। সুপার অবশ্য খাতড়া আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন। পরে রাইপুরের বিডিও দীপঙ্কর দাসও হস্টেল সুপারের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

এরই পাল্টা হিসেবে হস্টেল সুপারও বিডিও-র বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর ছাত্রীদের তরফে হস্টেলেরই এক আবাসিক ছাত্রী খাতড়া আদালতে পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তথা তৃণমূল নেতা শান্তিনাথ মণ্ডল, রাইপুর কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক টিএমসিপি নেতা চিরঞ্জিত মাহাতো, রাইপুরের বিডিও দীপঙ্কর দাস-সহ পাঁচজনের নামে একাধিক ধারায় অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনার মধ্যে শাসক দলের দুই গোষ্ঠী রাইপুর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি জগবন্ধু মাহাতো ও তৃণমূলের জেলা কমিটির সদস্য অনিল মাহাতোর বিরোধ প্রকাশ্যে এসে পড়ে। হস্টেল সুপার ও আবাসিকদের তৃণমূলেরই একটা অংশ মদত দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করাচ্ছে বলে দলের একাংশ দাবি করছেন। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অনিলবাবু।

হস্টেল নিয়ে নোংরা রাজনীতি বন্ধ করার দাবিতে আদিবাসীদের একটি সংগঠন শুক্রবার পথে নামে। শনিবার এই ছাত্রী আবাস পরিদর্শনে যান সিপিএমের রাইপুরের বিধায়ক উপেন কিস্কু ও রানিবাঁধের বিধায়ক দেবলিনা হেমব্রম-সহ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি। তা নিয়েও কটাক্ষ করেছেন জগবন্ধবাবু। তাঁর দাবি, “এর আগে হস্টেলে প্রবেশ করতে গিয়ে পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ-সহ জনপ্রতিনিধিদের এমনকী বিডিওকেও হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে। তাঁদের ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শনিবার ওই হস্টেলে সিপিএমের দুই বিধায়ক বিনা বাধাতেই ঢুকলেন এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা হস্টেলে কাটালেন!” তাঁর অভিযোগ, রাজনৈতিক কারণেই সুপার কর্মাধ্যক্ষকে হেনস্থা করেছিলেন। হস্টেলের সুষ্ঠু পরিবেশ ফেরাতে হলে ওই সুপারের বদলি দরকার বলে তিনি দাবি করেছেন। জেলা অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “নানা মহল থেকেই সুপারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। তাঁকে বদলির দাবিও তুলেছেন অনেকে। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।” হস্টেল সুপার তাপসী দে-কে ফোন করা হলে ব্যস্ত রয়েছেন বলে ফোনে কেটে দেন।

এ দিকে, সিপিএমের তরফে অবশ্য হস্টেলে বিশৃঙ্খলার জন্য তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বকেই দায়ী করা হয়েছে। উপেনবাবু বলেন, “তৃণমূলের গোষ্ঠী রাজনীতি ওই হস্টেলের পরিবেশ নষ্ট করে দিয়েছে। বর্তমানে যা চলছে তা মোটেই কাম্য নয়। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতেই ওই হস্টেলে গিয়ে সুপার ও আবাসিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা কিছু সমস্যার কথা আমাদের জানিয়েছেন।”

এ দিন বিকেলে ওই হস্টেলে যান ঘটনার তদন্তকারী অফিসার (আইও) খাতড়ার এসডিপিও কল্যাণ সিংহ রায়। তিনি সুপার ও কয়েকজন ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। নৈশপ্রহরীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেন বলে জানা গিয়েছে। যদিও এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি এসডিপিও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE