Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

উপাচার্য-জটে রাজ্যকেই দুষছেন আচার্য

কলকাতা-সহ রাজ্যের ন’টি বিশ্ববিদ্যালয় এখন অস্থায়ী উপাচার্যদের হাতে আছে বলে শিক্ষামন্ত্রীই বিধানসভায় জানিয়েছেন। উচ্চশিক্ষার ওই সব প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে স্থায়ী নিয়োগ হচ্ছে না কেন, সেই প্রশ্ন তুলছে শিক্ষা শিবির। সরকারের তরফে তার সদুত্তর মেলেনি। তবে আচার্য-রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী উপাচার্য নিয়োগে গাফিলতির দায় সরকারের উপরেই চাপিয়ে দিচ্ছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৬ ০৩:৫৭
Share: Save:

কলকাতা-সহ রাজ্যের ন’টি বিশ্ববিদ্যালয় এখন অস্থায়ী উপাচার্যদের হাতে আছে বলে শিক্ষামন্ত্রীই বিধানসভায় জানিয়েছেন। উচ্চশিক্ষার ওই সব প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে স্থায়ী নিয়োগ হচ্ছে না কেন, সেই প্রশ্ন তুলছে শিক্ষা শিবির। সরকারের তরফে তার সদুত্তর মেলেনি। তবে আচার্য-রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী উপাচার্য নিয়োগে গাফিলতির দায় সরকারের উপরেই চাপিয়ে দিচ্ছেন।

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় গত বুধবার বিধানসভায় জানিয়েছিলেন, সার্চ কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধির নাম না-পাঠানোয় সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু শুক্রবার সায়েন্স সিটিতে একটি অনুষ্ঠানে আচার্য ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘উপাচার্য নিয়োগে সরকারের পক্ষ থেকেই প্রথমে উদ্যোগী হওয়ার কথা। কিন্তু আমার কাছে এই সংক্রান্ত কোনও কাগজপত্রই এসে পৌঁছয়নি। পৌঁছলে আমি বিষয়টি দেখব।’’

শিক্ষা শিবিরের একটি অংশের অনুযোগ, আচার্যের এই মন্তব্যে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে সরকারের অনীহার বিষয়টিই প্রকট হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী বুধবার বিধানসভায় জানিয়েছিলেন, ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ন’টিই চলছে স্থায়ী উপাচার্য ছাড়া। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিত্যদিনের কাজকর্ম চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কিন্তু এমন অবস্থা কেন?

পার্থবাবুর বক্তব্য, বেশ কয়েকটি নবগঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে স্ট্যাটিউট বা বিধি নেই। তাই স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগে দেরি হচ্ছে। কল্যাণীর মতো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় সার্চ কমিটিতে প্রতিনিধির নাম না-পাঠানোয় সমস্যায় পড়ছে শিক্ষা দফতর।

উচ্চশিক্ষা দফতরের বক্তব্য, নিয়ম অনুযায়ী নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম উপাচার্য নিয়োগ করে শিক্ষা দফতর। তার পরে বিধি তৈরি করে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ হয়। কিন্তু নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বিধি তৈরি না-হওয়ায় অস্থায়ী বা প্রথম উপাচার্যই দায়িত্বে রয়ে গিয়েছেন। বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক শিক্ষণ, শিক্ষা পরিকল্পনা ও প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়, সংস্কৃত কলেজ অ্যান্ড ইউনির্ভাসিটি এব‌ং রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও বিধি নেই। স্থায়ী উপাচার্যের মৃত্যুর পরে মৌলানা আবুল কালাম আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই পদ খালি। সর্বোপরি দীর্ঘদিন ধরে অস্থায়ী উপাচার্যের হাতে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। সুগত মারজিত এক বছর অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে কাজ চালিয়ে ১৪ জুলাই চলে যাচ্ছেন। ফের অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করা হয়েছে বিজ্ঞানের ডিন আশুতোষ ঘোষকে।

উচ্চশিক্ষার এই মাথাহীন অবস্থা কেন, তার সদুত্তর মিলছে না। শিক্ষামন্ত্রী স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগে টালবাহানার দায় চাপিয়ে দিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপরেই। বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতেই স্থায়ী উপাচার্যের নাম প্রস্তাব করা যাচ্ছে না বলে তাঁর অভিযোগ। আচার্য-রাজ্যপাল অবশ্য দায়ী করছেন সরকারেরই অনিচ্ছাকে। শুক্রবার তিনি জানান, নতুন স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের বিষয়টি এগোচ্ছে। এই বিষয়ে সরকারেরই উদ্যোগী হওয়ার কথা। কিন্তু সরকারের কাছ থেকে এই নিয়োগের ব্যাপারে বা সার্চ কমিটি নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও নথিই তাঁর দফতরে আসেনি।

আচার্য-রাজ্যপালের এ দিনের মন্তব্য উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে ধোঁয়াশাটাকেই ফের তুলে ধরল বলে শিক্ষা শিবিরের একাংশের অভিমত। ত্রিপাঠীর বক্তব্য সমর্থন করে শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবু বলেন, ‘‘আচার্য ঠিকই বলেছেন।’’ স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগে দেরির বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি জানান, যে-ন’টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী উপাচার্য আছেন, তার সাতটিই নতুন। নিয়ম অনুযায়ী সেই সব জায়গায় প্রথম উপাচার্যেরই থাকার কথা। বাকি রইল কলকাতা ও কল্যাণী। ‘‘এই দু’টি ক্ষেত্রে আমরা তো কিছুটা এগিয়েছি,’’ দাবি মন্ত্রীর। এগোনো বলতে তিনি কী বোঝাচ্ছেন, পার্থবাবু সেটা খোলসা করেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

University VC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE