Advertisement
E-Paper

নেতা কে? প্রশ্ন সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনে, ছাঁকনির দাবি ক্যাডারনীতিতে, দাবি ‘কাজের লোক’ যাচাইয়েরও

সিপিএমে এই প্রশ্ন উঠেছে, কেন এলাকার সাংগঠনিক কাজ এবং ফলাফল দেখে নেতা বাছাই হবে না? নেতৃত্বে যাওয়া এবং দিনের পর দিন নেতা থেকে যাওয়ার সূচক কী, তা-ও নির্দিষ্ট করার দাবি উঠেছে বলে খবর।

শোভন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৩:১৫
সিপিএমের রাজ্য সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত প্রতিনিধিরা।

সিপিএমের রাজ্য সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত প্রতিনিধিরা। —নিজস্ব চিত্র।

কেউ কেউ হঠাৎ নেতা হয়ে উঠছেন। আবার অনেকে এমন রয়েছেন, নিচুতলায় যোগ্যতার সঙ্গে কাজ করেও নেতৃত্বের স্তরে উন্নীত হতে পারছেন না। এ হেন দ্বন্দ্বমূলক ধন্দ নিয়েই সিপিএম রাজ্য সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে প্রশ্ন তুলল একাধিক জেলা। সিপিএম সূত্রে খবর, বীরভূমের এক প্রতিনিধি সরাসরি নেতৃত্ব চয়নে ছাঁকনি তৈরির দাবি তুলেছেন পার্টির কাছে। কলকাতার এক প্রতিনিধি রাজ্য কমিটির পেশ করা রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক প্রতিবেদনের উপর আলোচনা করতে গিয়ে দায়বদ্ধতা, গ্রহণযোগ্যতা এবং ফলিতস্তরের কাজের যথাযথ জরিপের দাবি তুলেছেন রাজ্য সম্মেলনের মঞ্চে। সার্বিক ভাবে পার্টির ‘ক্যাডার নীতি’ নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল রাজ্য সিপিএমে।

দলের প্রথম সারির নেতৃত্বের অনেকের বক্তব্য, রাজ্য পার্টিতে প্রজন্মের ফারাক তৈরি হয়েছে বহু বছর ধরে। এখন তা ঘোচাতে যে ভাবে খানিকটা ‘আগ্রাসী’ পদক্ষেপ করা হচ্ছে, তখন এই বিষয়টি আরও বেআব্রু হয়ে যাচ্ছে। এক নেতার কথায়, ‘‘বয়সের ফারাক ঘোচাতে হবে ঠিক। কিন্তু সেই কাজ করতে গিয়ে কোথাও কোথাও যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে অনেকেই হঠাৎ নেতা হয়ে উঠছেন। যাঁরা পরীক্ষিত, তাঁরা সুযোগ পাচ্ছেন না।’’

এ বার যে যে জেলা সম্মেলনে মতান্তর চূড়ান্ত হয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম উত্তর ২৪ পরগনা। সিপিএম সূত্রে খবর, উত্তর ২৪ পরগনারই এক প্রতিনিধি প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন দলের সর্বক্ষণের কর্মী (হোলটাইমার) সম্পর্কিত নীতি নিয়ে। প্রশ্ন উঠল, দলে কোনও অংশের হোলটাইমের গুরুত্ব বেশি? যিনি তরুণ বয়সে অন্য পেশায় না-গিয়ে পার্টির জন্য সবটা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন? না কি যিনি সারা জীবন বড় চাকরি করে, বিলাসে জীবন কাটিয়ে অবসরের পর ঔপচারিক হোলটাইমার হলেন তিনি? সূত্রের খবর, উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় এমন অনেকে রয়েছেন, যাঁরা জীবনের সায়াহ্নে পৌঁছে হোলটাইমার হয়ে সঙ্গে সঙ্গে নেতা হয়ে গিয়েছেন। অন্য দিকে ‘ক্লাসিক্যাল হোলটাইমার’-দের অনেকে তেমন গুরুত্বই পাননি।

সম্মেলনে এই প্রশ্নও উঠল, কেন এলাকার সাংগঠনিক কাজ এবং ফলাফল দেখে নেতা বাছাই হবে না? নেতৃত্বে যাওয়া বা দিনের পর দিন নেতৃত্বে থেকে যাওয়ার সূচক কী, তা-ও নির্দিষ্ট করার দাবি উঠেছে বলে খবর। নদিয়ার এক নেত্রীর কথায়, ‘‘আমাদের এমন নেতাও আছেন যিনি প্রায় সব কর্মসূচিতে গিয়ে পড়া মুখস্থ বলার মতো করে মার্ক্সকে সমাধিস্থ করার সময়ে ফ্রেডরিক এঙ্গেলসের বক্তৃতা গড়গড় করে বলে যান। কিন্তু নিজের বুথে হেরে যান। এটা কি কোনও কাজের কথা?’’

রাজ্য সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে প্রশ্ন উঠল রাজ্য কমিটির সদস্য তথা প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষকে নিয়েও। কয়েক মাস আগে সুশান্তের বিরুদ্ধে পার্টির কাছে ‘ঘনিষ্ঠতার পর প্রতারণা’র অভিযোগ করেন এক মহিলা। সেই সময়ে সুশান্ত ছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরে দলের জেলা সম্পাদক। পরবর্তীতে জেলা সম্পাদক পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দিয়ে ‘ছুটিতে’ পাঠায় দল। জেলা সম্মেলনে দেখা গিয়েছে তাঁকে কমিটিতেই রাখা হয়নি। সূত্রের খবর, ওই জেলারই এক প্রতিনিধি রাজ্য সম্মেলনে দাবি তুলেছেন, সুশান্তের বিষয়টি রাজ্য নেতৃত্ব স্পষ্ট করুক। না হলে কর্মীদের মধ্যে ধোঁয়াশা থাকছে।

এ সব প্রসঙ্গ ছাড়াও কংগ্রেস বা আইএসএফের সঙ্গে ভোটের আগের জোট নিয়েও প্রশ্ন, ধোঁয়াশার কথা আলোচিত হয়েছে প্রতিনিধিদের বক্তৃতায়। সূত্রের খবর, একাধিক জেলার প্রতিনিধি আইএসএফের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের বক্তব্য, নিচুতলায় বিষয়টিকে বোঝানোই যাচ্ছে না। ভোটের আগে আসন সমঝোতা বা জোট করা খানিকটা ‘চাপিয়ে দেওয়া’ হয়েছিল বলেও মতামত দিয়েছেন কেউ কেউ।

সোমবার রাজ্য সম্মলনের তৃতীয় দিন বিশেষ অধিবেশন বসবে। রাজ্য সম্পাদক সেলিম জানিয়েছেন, এই প্রথম এই ধরনের অধিবেশন। সূত্রের খবর, পরের বছর বাংলার বিধানসভা ভোটের লক্ষ্যে নির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা হবে সেখানে।

CPM
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy