অনুষ্ঠান করতে গিয়ে মঞ্চের পেছনে কিছু ‘মদ্যপের অসভ্য’ আচরণে সঙ্গীতশিল্পী আকৃতি কক্কর আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন বলে ফেসবুকে লিখে জানিয়েছিলেন।
মঞ্চে উঠে মাইক হাতে নিয়ে অভিনেত্রী শুভশ্রী অভিযোগ করেছেন, তাঁর সঙ্গে অভব্য আচরণ করা হয়েছে। তিনি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত বলেও জানান। সপ্তাহের ব্যবধানে এই দুই ঘটনাই জলসার আসরের নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। নিরাপত্তা এবং নজরদারির বলয়ে থাকা বহিরাগত মহিলা শিল্পীদেরই যদি অভ্যবতার স্বীকার হওয়ার অভিযোগ ওঠে, প্রশ্ন উঠেছে তবে সাধারণ দর্শকদের নিরাপত্তা কোথায়?
গত ১০ ডিসেম্বর রাতে কোচবিহারের রাসমেলার সাংস্কৃতিক মঞ্চে অনুষ্ঠান করেন আকৃতি কক্কর। পরদিন নিজের ‘ফেসবুক’ স্ট্যাটাসে মদ্যপদের অভ্যবতার অভিযোগ লিখেছিলেন আকৃতি। গত শুক্রবার বিকেলে ভিড় ঠিলে ফালাকাটা কলেজের বার্ষিক সাধারণ অনুষ্ঠানের মঞ্চে উঠে শুভশ্রী অভিযোগ করেন, ‘‘আমার সঙ্গে যেটা হয়েছে, তা কোনও মেয়ের সঙ্গে করা উচিত নয়। আমার মানসিক অবস্থা ভাল নেই।’’
মঞ্চের বাদিকে হাত দিয়ে দেখিয়েও দেন কারা তাঁর সঙ্গে অভব্য আচরণ করেছেন। কোচবিহারের পরে ফালাকাটা পরপর এই দুই ঘটনাই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে জলসা অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা নিয়ে। আলিপুরদুয়ারে বর্তমানে উত্তরবঙ্গ উৎসব চলছে। সেখানেও বহিরাগত শিল্পীরা অনুষ্ঠান করতে আসছেন। কোনও ঝুঁকি না নিয়ে মেলায় নিরাপত্তা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জেলা পুলিশের দাবি।
শীতের মরশুমে কোচবিহার এবং ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকায় জলসার আসরের সংখ্যা বেড়ে যায়। সঙ্গে চলে গভীর রাত পর্যন্ত যাত্রার আসরও। গত শুক্রবার বিকেলে ফালাকাটার অনুষ্ঠানের পরে জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া বাহাদুর গ্রামে গভীর রাত পর্যন্ত যাত্রার মঞ্চেও সোহমের সঙ্গে শুভশ্রী উপস্থিত ছিলেন। শহর এবং শহরতলি তো বটেই গ্রামেও একদিনে একাধিক জলসা-যাত্রার আসর বসে শীতের সময়ে। বিভিন্ন কলেজের বার্ষিক অনুষ্ঠানও ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চলে। এ ছাড়াও বিভিন্ন মেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান তো রয়েইছে। এই সব অনুষ্ঠানের মঞ্চে এবং দর্শকাসনে মহিলাদের উপস্থিতিও যথেষ্ট। অভিযোগ, গ্রাম বা শহরতলির অধিকাংশ জলসারই কোনও পুলিশি অনুমতি থাকে না। সে কারণে ওই সব অনুষ্ঠানে পুলিশি নিরাপত্তাও থাকে না। পুলিশি নিরাপত্তা ছাড়াই শীতের রাতে ডুয়ার্সের বিভিন্ন গ্রামে জলসার আসরে তুমুল নাচগান চলে বলে অভিযোগ। সেই সব আসরে নেশাগ্রস্তদের দৌরাত্ম্যের অভিযোগও রয়েছে। বেশ কিছু অনুষ্ঠান মঞ্চের ধারে কাছে মদের আসর বসারও অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশের অবশ্য দাবি শীতের রাতে জলসার আসরের খবর থাকলে আগে থেকেই নিরাপত্তার আয়োজন করা হয়। বিনা অনুমতিতে অনুষ্ঠান চলছে খবর পেলে অভিযানও হয় বলে দাবি আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশের।
আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার আভারু রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘অনুমতি ছাড়া কোথাও জলসা করতে দেওয়া হয় না। জেলায় যত জলসা হয়, সবেতেই কড়া নজরদারি থাকে।’’ কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদবের কথায়, ‘‘শব্দবিধির জন্য গভীর রাতে অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হয় না। যে সব অনুষ্ঠানের আগাম খবর থাকে, সেখানে নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকে। ভিড় বেশি হলে বাড়তি বাহীনিও পাঠানো হয়।’’
পুলিসের নিরাপত্তার আশ্বাস দিলেও, কেন পরপর দু’বার শিল্পীদেরই হেনস্থা হতে হল?
পুলিশের একাংশের দাবি, দুই ক্ষেত্রেই উদ্যোক্তাদের সঙ্গে মিশে গিয়ে অভব্য আচরণ করার অভিযোগ উঠেছে। উদ্যোক্তাদের কেউ যদি নিজেই শিল্পীর সঙ্গে অপ্রীতিকর আচরণে জড়িয়ে পড়ে তবে কিছু করার নেই বলে পুলিশের পাল্টা দাবি। কেন এমন প্রবণতা বাড়ছে?
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ স্বস্তিশোভন চৌধুরীর ব্যাখ্যা, ‘‘এখন তো নেট খুললেই যৌনতা আর উগ্রতার ছড়াছড়ি। তার সঙ্গে একটা কুছ পরোয়া নেই গোছের পরিবেশও চারদিকে তৈরি হয়েছে। তার কারণেই যে সব নিষিদ্ধ বাসনা আগে শুধু মনের মধ্যেই থাকত, এখন সেগুলি প্রকাশ্যে চলে আসছে।’’
জলপাইগুড়ির একটি কলেজের অধ্যক্ষ শান্তি ছেত্রীর কথায়, ‘‘সকলেই উগ্র এমন নয়। তবে অনুষ্ঠানের ধরণ বদলেছে। এখন চটুলতাই সকলের পছন্দ। কিন্তু সমস্যা বাধাচ্ছে এক বা দু’জন বিকৃতমনস্ক। তারাই ভিড়ে গিয়ে এমন আচরণ করছে, যে অন্যরাও উৎসাহিত হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy