Advertisement
E-Paper

প্রশ্নে ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীন পতঙ্গবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগে বিভিন্ন রাজ্য এই বছরের গোড়া থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে পরিসংখ্যান দিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুতে পশ্চিমবঙ্গের স্থান দেশের শীর্ষে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজ্যে মৃতের সংখ্যা ২৬। দ্বিতীয় ওডিশা। সেখানে মৃত ২৫ জন।

দেবদূত ঘোষঠাকুর

শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:১০
বিপদ: ভেঙে পড়া তোরণে জমছে জল, তাতে ডিম পাড়ছে মশা। মেদিনীপুর শহরে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

বিপদ: ভেঙে পড়া তোরণে জমছে জল, তাতে ডিম পাড়ছে মশা। মেদিনীপুর শহরে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

শুধু ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর সংখ্যার নিরিখে নয়, আক্রান্তদের মধ্যে মৃতের হারেও এ বছর দেশের অন্য সব রাজ্যকে টপকে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীন পতঙ্গবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগে বিভিন্ন রাজ্য এই বছরের গোড়া থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে পরিসংখ্যান দিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুতে পশ্চিমবঙ্গের স্থান দেশের শীর্ষে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজ্যে মৃতের সংখ্যা ২৬। দ্বিতীয় ওডিশা। সেখানে মৃত ২৫ জন।

পশ্চিমবঙ্গে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ১২,৫২৪ জন। তাঁদের মধ্যে ২৬ জন অর্থাৎ মোট আক্রান্তের ০.০২ শতাংশ মারা গিয়েছেন। ওডিশায় ২৫ জনের মৃত্যু হলেও সেখানে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩,২৩,৮০০ জন। অর্থাৎ মোট আক্রান্তের ০.০০৭৬ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক অফিসার বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে ম্যালেরিয়ার মৃত্যু-হার কেন এত বেশি, তা আমাদের ভাবাচ্ছে।’’

*কেন্দ্রীয় সরকারের পতঙ্গ বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের তথ্য (জানুয়ারি- সেপ্টেম্বর, ২০১৭)

স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সঙ্গে যুক্ত এক এন্টেমোলজিস্ট জানান, ম্যালেরিয়ার ওষুধ ঠিক ভাবে ব্যবহার না হলে অনেক সময়ে মৃত্যু-হার বাড়ে। বাংলায় তেমনটা হয়েছে কি না, দেখা দরকার। ম্যালেরিয়া বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দী মনে করেন, এখন ম্যালেরিয়ার যে সব ওষুধ রয়েছে তাতে মৃত্যু-হার অনেক কমে যাওয়ার কথা। একমাত্র ভুল রোগ নির্ণয় এবং ভুল ওষুধ প্রয়োগেই ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু হতে পারে। এমনটাই হচ্ছে এখানে।

অমিতাভবাবুর অভিজ্ঞতা, ‘‘বৃহস্পতিবারই আমার কাছে ম্যালেরিয়া থেকে সদ্য সেরে ওঠা এক রোগী এসেছিলেন। এখানে ডেঙ্গির ভিড় দেখে তিনি অন্যত্র চিকিৎসা করিয়েছিলেন। ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া হলে যে ইঞ্জেকশন দিনে দু’টো করে দিতে হয়, সেটা তাঁকে দেওয়া হয়েছে একটা করে। রোগীটি ভাল হয়েছেন ঠিকই। কিন্তু ওষুধের ডোজ সম্পূর্ণ না হলে পরবর্তী কালে তাঁর ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া হলে ওই ওষুধ আর কাজ না-ও করতে পারে।’’ এ ভাবেই ম্যালেরিয়ার অনেক ওষুধ এখন আর কাজ করছে না। এতে চিকিৎসা বিভ্রাট ঘটছে। রোগী মারাও যাচ্ছেন। পাশাপাশি, নার্সিংহোমে ভর্তি করিয়ে ভাইভ্যাক্সের অনেক রোগীকে ফ্যালসিপেরামের ইঞ্জেকশন দেওয়া হচ্ছে— এমন অভিযোগও পেয়েছেন অমিতাভবাবু। তিনি জানান, পরে ওই সব রোগীর ভাইভ্যাক্স সংক্রমণ হলে ক্লোরোকুইন আর কাজ করবে কি না তা নিয়েও কিন্তু সংশয় রয়েছে। কারণ, আগেই অনেক কড়া ওষুধ পড়ে গিয়েছে।

স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের এক প্রাক্তন অধিকর্তার মন্তব্য, ‘‘মাইক্রোস্কোপের তলায় স্লাইডে ম্যালেরিয়ার জীবাণু নিরীক্ষণ ঠিক ভাবে হচ্ছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। পরিপুষ্ট ফ্যালসিপেরামের জীবাণুকে মাইক্রোস্কোপে অনেকে ভাইভ্যাক্সের জীবাণু বলে গুলিয়ে ফেলেন।’’ অমিতাভবাবুর সংযোজন, ‘‘রক্তের নমুনায় ম্যালেরিয়ার জীবাণু নেই— এটা বলে দেওয়া সব থেকে কঠিন।’’ স্লাইডে ঠিক ভাবে ম্যালেরিয়ার জীবাণু নিরীক্ষণের লোক কমে যাচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি।

রাজ্যের এক স্বাস্থ্য-কর্তার অবশ্য দাবি, এ বছর রাজ্যে ম্যালেরিয়া-আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু কমেছে। তিনি বলেন, ‘‘গত বার রাজ্যে ম্যালেরিয়া হয়েছিল ৩৫ হাজারের বেশি মানুষের। মৃত্যু হয়েছিল ৫৯ জনের। ফ্যালসিপেরামে আক্রান্তের সংখ্যাও শতকরা ৫০ ভাগ কমেছে। এটাই আমাদের সাফল্য।’’

Malaria Treatment Hospitals ম্যালেরিয়া
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy