বুধবার এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের সিনিয়র ডাক্তারেরাও ‘গণইস্তফা’র হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। — নিজস্ব চিত্র।
দাবি আদায়ে অনশনে বসেছেন জুনিয়র চিকিৎসক ফ্রন্টের প্রতিনিধিরা। তাঁদের সমর্থনে প্রতীকী অনশন শুরু করেছেন সিনিয়র চিকিৎসকেরাও। কিন্তু কোনও কিছুতেই সরকারের তরফে সদর্থক ভূমিকা দেখা না যাওয়ার অভিযোগে এ বার শুরু হয়েছে সিনিয়র চিকিৎসকদের ‘গণইস্তফা’। আরজি কর থেকে শুরু করে কলকাতা মেডিক্যাল, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ, ন্যাশনাল মেডিক্যাল, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল-সহ বিভিন্ন হাসপাতালে সিনিয়র চিকিৎসকেরা ‘গণইস্তফা’ দিতে শুরু করেছেন। তাঁদের দাবি, জুনিয়র ডাক্তারদের ন্যায্য দাবি মেনে নিক সরকার। কামারহাটি সাগর দত্ত মেডিক্যালের চিকিৎসকেরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় সরকার জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবি না মানলে তাঁরাও ‘গণইস্তফা’র পথে হাঁটবেন।
এ দিন ইএম বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরাও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, আগামী ১৪ তারিখ থেকে তাঁরাও জরুরি পরিষেবা ছাড়া অন্য কোনও পরিষেবা দেবেন না।
সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তা হলে কি এ বার থেকে সরকারি মেডিক্যাল কলেজে সিনিয়র চিকিৎসকদেরও আর পাওয়া যাবে না? যদি তা-ই হয় তা হলে সরকার কী পদক্ষেপ করবে? প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, সরকারি চাকরিতে কি এমন ভাবে ‘গণইস্তফা’ দেওয়া যায়? প্রশাসন সূত্রের খবর, সরকারি ভাবে তাদের কাছে কোনও ইস্তফাপত্র জমা পড়েনি। পড়লে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।
রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন সিনিয়র চিকিৎসকদের বড় অংশ জানাচ্ছেন, এমন ভাবে সরকারি চাকরিতে ‘গণইস্তফা’ হয় না। স্বাস্থ্য দফতরের মেডিক্যাল এডুকেশন সার্ভিসে চাকরি থেকে ইস্তফা দেওয়ারও নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। ‘গণইস্তফা’ দেওয়া মানে, কখনওই সেই মুহূর্ত বা পরের দিন থেকে ওই সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক আর কাজ করবেন না, সেটাও বলতে পারেন না। সূত্রের খবর, স্বাস্থ্য দফতর বছরখানেক আগে একটি নির্দেশিকা জারি করেছিল। কারণ, অনেক সময়েই দেখা যেত, কোনও এক জন চিকিৎসক ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দিয়ে আর পরের দিন থেকে কাজে আসতেন না। সেই প্রেক্ষিতে নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল, এমন ভাবে কেউ কোনও পদক্ষেপ করলে প্রয়োজনে চাকরি পরবর্তী সমস্ত বকেয়া আটকে যেতে পারে।
প্রাক্তন স্বাস্থ্য আধিকারিক ও সিনিয়র চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, তাঁদের বিভিন্ন পদে নিয়োগ করেন রাজ্যপাল। রাজ্যপালের হয়ে সেই কাজের দায়িত্বে থাকেন স্বাস্থ্যসচিব। আর, মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক-চিকিৎসকেরা যে হেতু প্রত্যেকেই স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তার অধীন, তাই ইস্তফা বা পদত্যাগপত্র সংশ্লিষ্ট কলেজের অধ্যক্ষের মাধ্যমে তাঁর কাছে পাঠাতে হয়। তবে সেটা কখনওই একটা চিঠির নীচে সবাই মিলে সই করে হয় না, হয় ব্যক্তিগত ভাবে। তা ছাড়া, সে ক্ষেত্রেও কিছু নিয়ম রয়েছে। যেমন, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে নিজের বর্তমান পদ, কোথায় পোস্টিং, চাকরিতে যোগ দেওয়ার তারিখ-সহ আরও তথ্য জানাতে হয়। কবে থেকে ওই চিকিৎসক চাকরি থেকে অব্যাহতি নিতে চাইছেন, সেটাও উল্লেখ করতে হয়। এবং তাতে অন্তত ৩০ দিনের সময়সীমা দিতে হয়। এই সব কিছুর সঙ্গে ওই ডাক্তারের শেষ তিন বছরের সম্পত্তির খতিয়ান জমা দিতে হয়। আরও কিছু তথ্যও জানতে চায় স্বাস্থ্য দফতর। তারও যথাযথ উত্তর দিতে হয়। স্বাস্থ্য কর্তারা জানাচ্ছেন, এর পরে ভিজিল্যান্সের ছাড়পত্র চায় দফতর। তা মেলার পরে সরকার সিদ্ধান্ত নেয় ইস্তফা গ্রহণ করা হবে কি না।
চিকিৎসকদের এই ‘গণইস্তফা’ কি তাই আদৌ বৈধ? ইস্তফা পত্রে সই করা সিনিয়র চিকিৎসকদের অনেকেই বলছেন, “আমরা কাজ বন্ধ করিনি। সরকারকে একটা বার্তা দিতে এই পদক্ষেপ। সাধারণ মানুষের এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy