Advertisement
E-Paper

বাধার রাজনীতিতেই কেন বিরোধীরা, প্রশ্ন

উন্নয়নের পথে এগোনোই সময়ের ধর্ম। কিন্তু রাজনীতির স্বার্থে বারবার রুদ্ধ করার চেষ্টা হয় উন্নয়নের গতি। ভাঙড়-কাণ্ডের জেরে বিরোধীদের হইচই দেখে এমনই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:১১

উন্নয়নের পথে এগোনোই সময়ের ধর্ম। কিন্তু রাজনীতির স্বার্থে বারবার রুদ্ধ করার চেষ্টা হয় উন্নয়নের গতি। ভাঙড়-কাণ্ডের জেরে বিরোধীদের হইচই দেখে এমনই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ।

ভাঙড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই তরুণের মৃত্যু হতেই বিপুল উৎসাহে আসরে নেমেছেন বিরোধী বাম ও কংগ্রেস নেতারা। তাঁরা এলাকায় দৌড়ে যাচ্ছেন, নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য দিচ্ছেন। তার চেয়েও বড় কথা, ভাঙড়ের মতো প্রতিবাদকে জেলায় জেলায় ছড়িয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন তাঁরা। সিপিএম নেতা গৌতম দেব বলেছেন, নবান্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্বস্তিতে আর বসতে দেওয়া হবে না! বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ঘোষণা করেছেন, ভাঙড়ই মমতার সরকারের ‘ওয়াটারলু’ হবে! এ সবই লোক ক্ষেপানোর ধ্বংসাত্মক রাজনীতি বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকদের একাংশ। তাঁদের মতে, বিরোধীরা এই পথে হাঁটলে রাজ্যের উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ ব্যাহত হবে। অথচ বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে গঠনমূলক রাজনীতি করার সুযোগ নেহাত কম নেই। কিন্তু সস্তা জনপ্রিয়তার লোভে বিরোধীরা সেই পথে হাঁটতে নারাজ!

বিরোধীদের রাজনীতি নেতিবাচক বলেই মনে করছে শাসক দলও। তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় যেমন অভিযোগ করেছেন, ‘‘ভাঙড়-কাণ্ড নিয়ে ওঁরা নতুন করে বাঁচার চেষ্টা করছেন। মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন। এত কথা বলতে হলে রাস্তায় নেমে দেখতে পারতেন! মমতা রাজ্যকে উঁচুতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। সেই সময়ে ওঁরা বিজেপি-র কায়দায় উস্কানি দিচ্ছেন!’’ তাঁর বক্তব্য, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের পর্বে যারা পুলিশ ও দলীয় বাহিনী দিয়ে কৃষকের প্রতিবাদ দমন করেছে, তাদের মুখে এখন মানুষের প্রতিবাদের কথা মানায় না!

স্বভাবতই এমন অভিযোগ মানতে রাজি নয় বিরোধীরা। এমনিতেই পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করেন, প্রথম সারির বিরোধী দলগুলি ‘নিষ্ক্রিয়’ ছিল বলেই সেই সুযোগে ভাঙড়ে রাজনৈতিক জমি বিস্তারের চেষ্টা করেছে ছোট ছোট কিছু বামপন্থী সংগঠন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু পড়ুয়া এবং এমনকী, মাওবাদীরাও! তা হলে এখন প্রতিবাদ করলে আবার ‘নেতিবাচক’ রাজনীতির অভিযোগ উঠছে কেন, পাল্টা প্রশ্ন বিরোধীদের। সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের কথায়, ‘‘নভেম্বর থেকে ভাঙড়ে সমস্যা চলছে। আমরা তো সেখানে যাইনি। সাধারণ মানুষের প্রতিবাদে প্রথমেই রাজনৈতিক রং লাগাতে চাইনি। কিন্তু পুলিশি অত্যাচার হলে যাব না?’’ উন্নয়নে বাধা দিতে ‘বহিরাগত’দের নিয়ে গোলমালের যে তত্ত্ব প্রশাসনের তরফে দেওয়া হচ্ছে, তার জবাবে সেলিমের পাল্টা মন্তব্য, ‘‘নন্দীগ্রামে যারা আন্দোলন করেছিল, তারা সবাই কি ঘরের জামাই, ঘরের বৌ ছিল? অন্যায় হলে প্রতিবাদ করতে কোথাও যাওয়া তো গণতান্ত্রিক অধিকার!’’

তৃণমূলের অতীতের দিকে নজর ঘুরিয়ে দিতে চেষ্টা করেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রও। সিঙ্গুরের দিকে ইঙ্গিত করে তাঁর এ দিনের বক্তব্য, ‘‘একটা প্রায় সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়া কারখানার শেড ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে পতিত জমি করে দেওয়ার নজির পৃথিবীর ইতিহাসে আছে? পিছনের দিকে হাঁটা আর কাকে বলে? কারা বলছে নেতিবাচক রাজনীতির কথা!’’ তাঁর আরও যুক্তি, ভাঙড়ে বিদ্যুতের সাবস্টেশন তৈরির কাজে বাধা দিতে তাঁরা মোটেও ঝাঁপিয়ে পড়েননি। তৃণমূল সরকারের জমি নীতির ফলে জমি-মাফিয়ারা ভাঙড়ের মতো সর্বত্রই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এবং তার জেরে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠছে। তাঁদের প্রতিবাদ এর বিরুদ্ধে। কেন কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন জমি অধিগ্রহণ আইন রাজ্য সরকার ভাঙড়ে মানেনি এবং কেন নিহতদের আরও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না, সেই প্রশ্নে এ দিনই ফরওয়ার্ড ব্লকের বিধায়ক আলি ইমরান রাম্‌জের নেতৃত্বে রাজভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন ১৮ জন যুব লিগ কর্মী।

বিরোধী দলনেতা মান্নানের বক্তব্য, ‘‘মমতা বিরোধী নেত্রী থাকার সময়ে পুলিশের গুলিতে কারও মৃত্যু হলে মৃতদেহ নিয়ে অবরোধ, মিছিল করতেন। কিন্তু এ বার দুই সংখ্যালঘু যুবকের মৃত্যু হওয়া সত্ত্বেও মমতা যাওয়া তো দূরের কথা, একটা শব্দ উচ্চারণ করলেন না! ওঁর পদত্যাগ দাবি করছি।’’ মান্নানের দাবি, কী দামে কৃষকেরা জমি বিক্রি করেছিল, কী দামে তা পাওয়ার গ্রিডকে বিক্রি করা হয়েছে, কে বা কারা ঠিকাদার হিসাবে কাজ করছিল, রাজ্য সরকারকে তা জানাতে হবে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর নির্দেশে শেখ নিজামুদ্দিন ১০ হাজার টাকা করে সাহায্য নিয়ে নিহত দু’জনের বাড়ি গিয়েছিলেন। একটি পরিবার অবশ্য সাহায্য নিতে চায়নি।

opposition politics
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy