E-Paper

হাতে ‘পরিকল্পিত খুন’-এর তথ্য! সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে দুই জুনিয়র ডাক্তারের দীর্ঘ ফোনালাপ সিবিআই-নজরে

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে চেস্ট মেডিসিন বিভাগের দুই জুনিয়র ডাক্তারের ৩০টিরও বেশি ফোনালাপ আপাতত চিকিৎসক খুনের তদন্তে সিবিআইয়ের ‘পাখির চোখ’।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৪ ০৭:২১
সন্দীপ ঘোষ।

সন্দীপ ঘোষ। —ফাইল চিত্র।

৮ অগস্ট দুপুরের পর থেকে ৯ অগস্ট মধ্য রাত। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে চেস্ট মেডিসিন বিভাগের দুই জুনিয়র ডাক্তারের ৩০টিরও বেশি ফোনালাপ আপাতত চিকিৎসক খুনের তদন্তে সিবিআইয়ের ‘পাখির চোখ’। এর মধ্যে তিন জনের কনফারেন্স কলও রয়েছে। রয়েছে ৯ অগস্ট দুপুর থেকে টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডলের সঙ্গেও একাধিক বার কথার রেকর্ড।

সিবিআইয়ের এক কর্তার দাবি, “ওই তরুণী চিকিৎসকের খুনের ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত বলে তদন্তের দ্বিতীয় ধাপ থেকে কিছু ইঙ্গিত মিলতে শুরু করেছিল। প্রাথমিক তদন্তের পরে সন্দীপ এবং তার ঘনিষ্ঠ দুই জুনিয়র চিকিৎসকের কল ডিটেলস হাতে এসেছিল। এর পরে সন্দীপ-অভিজিতের ফোন ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। সেই রিপোর্ট হাতে আসার পর তদন্তের অগ্রগতি হয়েছে।” সিবিআই সূত্রে দাবি, ওই দুই জুনিয়র চিকিৎসককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সিবিআই হেফাজতে থাকাকালীন সন্দীপের সঙ্গে তাঁদের মুখোমুখি বসিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

সিবিআইয়ের এক কর্তা এ-ও দাবি করেন, আচমকা ৭ অগস্ট ‘ডিউটি রস্টারে’ পরিবর্তন করা হয়েছিল। ৮ অগস্ট ওই দুই জুনিয়র চিকিৎসকের চেস্ট ডিপার্টমেন্টে ডিউটি ছিল না। ৭ আগস্ট সন্দীপের নির্দেশে ওই দু’জনকে ডিউটি দেওয়া হয়েছিল। ওই কর্তার দাবি, “গত মার্চ মাস থেকে চেস্ট ডিপার্টমেন্টের ‘ডিউটি রস্টার’ পরীক্ষা করা হয়েছে। আচমকা এমন ডিউটি বদলের আর কোনও নজির পাওয়া যায়নি।” এর পরে ফোনে কথোপকথনের বিবরণ তাতে আলাদা মাত্রা যোগ করেছে।

সিবিআইয়ের এক কর্তা দাবি করেন, “সন্দীপ-ঘনিষ্ঠ ওই দুই জুনিয়র চিকিৎসকের সঙ্গে নিহত চিকিৎসকের সম্পর্ক গত কয়েক মাস ধরে বিশেষ ভাল যাচ্ছিল না বলেও তথ্য পাওয়া গিয়েছে। মৃত চিকিৎসকের একাধিক সহপাঠী এবং হাসপাতালের কয়েক জন সিনিয়র চিকিৎসক এবং নার্সিং স্টাফদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তা জানা গিয়েছে।”

তদন্তকারী অফিসারদের সূত্রে দাবি, শুধু সন্দীপের সঙ্গে ৮ অগস্ট দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কথাবার্তাই নয়, তিন জনের মোবাইল ফোনে ভিডিয়ো ও স্টিল ফটোগ্রাফি আদানপ্রদান হয়েছিল বলে ফরেন্সিক রিপোর্টে স্পষ্ট হয়েছে। তবে কী ধরনের ছবি বা ভিডিয়ো পাঠানো হয়েছিল, সেই বিষয়ে মুখ খুলছেন না সিবিআই কর্তারা। সিবিআইয়ের এক কর্তার কথায়, ‘‘তদন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে। সাম্প্রতিক সব তথ্য সুপ্রিম কোর্টে স্টেটাস রিপোর্টে দেওয়া হয়েছে। ওই রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ করেছেন প্রধান বিচারপতি। এখন তদন্তের গতিপ্রকৃতি প্রকাশ্যে আনা সম্ভব নয়।’’

তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, ঘটনাস্থল থেকে নানা বায়োলজিক্যাল নমুনা উদ্ধারের ভিত্তিতে ধর্ষক হিসেবে সঞ্জয় রায়কে অভিযুক্ত করে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে ঠিকই, তবে ওই চিকিৎসককে ‘পরিকল্পিত ভাবে’ খুন করার একের পর এক সূত্রও হাতে এসেছে। যেগুলি তদন্ত করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে সন্দীপের মোবাইল ফোন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।

প্রাথমিক ভাবে সিবিআইয়ের তদন্তকারী দলের ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা সন্দীপ ও তাঁর দুই ঘনিষ্ঠ জুনিয়র চিকিৎসকের ফোনের খুঁটিনাটি যাচাই করেছিলেন। আদালতগ্রাহ্য প্রমাণ পেতে সন্দীপের মোবাইল ফোনটি ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। অভিজিতের ফোনটিও পাঠানো হয়েছিল।

শুক্রবারই শিয়ালদহ অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারকের আদালতে মামলার তদন্তকারী অফিসার লিখিত ভাবে দাবি করেন, পূর্ব পরিকল্পিত খুনের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সন্দীপ ও অভিজিতের মোবাইল থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ধার হয়েছে। প্রয়োজনে ফের তাঁদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করার প্রয়োজন পড়তে পারে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

RG Kar Medical College and Hospital Incident RG Kar Protest Junior Doctors CBI Investigation Sandip Ghosh

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy