আত্মীয়-যোগের সুযোগে ‘অযোগ্য’ ভোটার থেকে যাবে না তো ভোটার তালিকায়— আপাতত এই প্রশ্নে প্রস্তুতি শুরু জাতীয় নির্বাচন কমিশনের অন্দরে। কারণ, ভোটারের অনুপস্থিতিতে তাঁর নিকটাত্মীয়ই এনুমারেশন গ্রহণ বা জমা করতে পারেন। সেই পদ্ধতির অপব্যবহার হলে এত ঝক্কি নিয়ে কোটি কোটি ভোটার যে প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছেন, তা বৃথা হয়ে যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, এনুমারেশন পর্ব শেষ হলেই ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসারদের (ইআরও) প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তাঁদের শংসাপত্র দিয়ে জানাতে হবে, তালিকায় কোনও মৃত ভোটারের নাম নেই। তালিকা তৈরির আগে স্থানীয় প্রশাসন থেকে মৃত্যুর সব শংসাপত্র সংগ্রহ করতে হবে। কারণ, তালিকায় ভোটারের অন্তর্ভুক্তি বা বাতিলের পুরো ভার থাকে ইআরও-দের উপর।
বিহার এসআইআর-এ (ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন) সুবিধাটি না থাকলেও, এ রাজ্যে ভোটারের অনুপস্থিতিতে তাঁর নিকটাত্মীয়কে এনুমারেশন ফর্ম ভর্তি বা জমা দেওয়ার সুবিধা দেওয়া হয়েছে। লক্ষ্য—যাঁরা কাজ বা অন্য কারণে অনুপস্থিত থাকবেন, তাঁদের হয়ে ফর্ম ভর্তি করতে পারবেন নিকটাত্মীয়ই। এতে সুবিধা হবে পরিযায়ী শ্রমিকদেরও।
কিন্তু মৃত ভোটারদের নাম এই সুযোগে রেখে দেওয়ার অসাধু চেষ্টা হবে না তো? কারণ, অনেক ক্ষেত্রে ভোটারের মৃত্যুর তথ্য পৌঁছত না কমিশনের কাছে। ফলে বছরের পর বছর ধরে অনেক মৃত ভোটারের নাম তালিকায় রয়ে গিয়েছে। এমন মৃত ভোটারদের নামের আড়ালে অবৈধ ভাবে ভোট হয়েই যায়। তাই সব মৃত ভোটারের নাম বাদ যাওয়া জরুরি।
ধরা যাক, ২০০২ সালের এসআইআরে নাম থাকা কোনও ব্যক্তির মৃত্যুর তথ্য নেই কমিশনের কাছে। ফলে এখনকার ভোটার তালিকায় সেই নাম থেকে গেলে তাঁরও এনুমারেশন ফর্ম পৌঁছবে সংশ্লিষ্ট ঠিকানায়। সংশ্লিষ্ট ফর্মটি ‘কোনও প্রভাবে’ ভর্তি করা হলে তা-ই গ্রহণ করবেন বিএলও। গত এসআইআরের সঙ্গে মিল থাকায় সেই নাম পৌঁছে যাবে খসড়া তালিকায়। তখন ইআরও যাচাইও করবেন না।
দুই, বৈবাহিক সূত্রে কারও ঠিকানা পরিবর্তন হতেই পারে। নতুন ঠিকানার ভোটার তালিকায় তাঁর নাম ওঠাই স্বাভাবিক। অনেক ক্ষেত্রেই বৈবাহিক কারণে মহিলা ভোটারের পদবি বদলে যায়। পুরনো ঠিকানাতেও তাঁর নাম থেকে গেলে দু’টি পৃথক ভোটার-পরিচয় তৈরি হয়। কমিশনের ভাষায় এমন ব্যক্তিদের ‘শিফটেড ভোটার’ (ঠিকানা বদলের অন্য ক্ষেত্রেও) বলা হয়। চলতি এসআইআরে এমন ব্যক্তিদের ইচ্ছানুসারে একটি ঠিকানায় নাম রেখে অপরটি বাদ দেওয়ার কথা। কিন্তু নিকটাত্মীয়ের ফর্ম-সুবিধার কারণে কোনও অসাধু প্রভাব কাজ করলে এই বাছাই ঠিক হবে তো?
তবে কমিশন সূত্রের ব্যাখ্যা, এখন মৃত্যুর তথ্য সরাসরি কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট বিভাগ (রেজিস্ট্রার জেনারেল অব ইন্ডিয়া) থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে। বছর দশেক আগে থেকেই মৃত্যুর তথ্য সেই মাধ্যমে জমা হচ্ছে। ফলে তেমন ভোটারদের চিহ্নিত করা সহজ। আবার জেলা প্রশাসনগুলি পুরসভা-পঞ্চায়েত থেকে মৃত্যুর সব শংসাপত্র সংগ্রহ করবে। পাশাপাশি, খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পরে সাধারণ মানুষ বা রাজনৈতিক দল যে কোনও আবেদন-অভিযোগ করতে পারেন। কোনও মৃত ভোটারের নাম সেখানে দেখা গেলে তাঁদের তা জানানোর কথা। সে ক্ষেত্রে যিনি ফর্ম ভর্তি করেছেন, তাঁকে আইনি সমস্যা পোহাতে হতে পারে। কারণ, এনুমারেশন ফর্মেই লেখা রয়েছে, আবেদনে থাকা কোনও বিবৃতি বা ঘোষণা অসত্য হলে জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী আবেদনকারীর জেল-জরিমানা হতে পারে।
ঠিকানা বদল করা ভোটারদের ক্ষেত্রেও ঠিক তথ্য দেওয়া বাধ্যতামূলক। তা ছাড়া, পদবি বদল হলেও ব্যক্তির মা-বাবার পরিচয় একই থাকবে। যা কমিশনের কাছে রয়েছে। এ ছাড়া আরও কিছু পদ্ধতি তৈরি হবে, যা ৪ ডিসেম্বরের পরে জানিয়ে দেওয়া হবে ইআরও-দের।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)