আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। —ফাইল চিত্র।
আর জি কর হাসপাতালের ঘটনাপ্রবাহের পরে চর্চায় ফিরেছে বিধানসভার স্ট্যান্ডিং কমিটি। প্রশ্ন উঠছে, স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিষেবা নিয়ে যে সব বিস্ফোরক তথ্য সামনে আসছে, কমিটির রিপোর্টে তার প্রতিফলন কোথায়? চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে চালু এই ‘রাজত্ব’ বিধায়কদের নিয়ে গঠিত কমিটির নজরে না-আসায় বিস্মিত সংশ্লিষ্ট মহলও।
এই মুহূর্তে বিধানসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য সংখ্যা ১৫। রীতি অনুযায়ী, এই কমিটিগুলিতে শাসক দলের বিধায়কেরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু প্রশাসনিক ত্রুটি-বিচ্যুতি সামনে আনার ক্ষেত্রে কি শাসকের প্রভাবই বাধা হচ্ছে? আর জি কর হাসপাতালে ভয়ঙ্কর এই ঘটনার পরে কমিটি এখনও সে ভাবে কোনও পদক্ষেপের কথা বলেনি। বিধানসভার সচিবালয় সূত্রে খবর, ওই ঘটনার পরে স্ট্যান্ডিং কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে দোষীদের শাস্তির দাবিতে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। তার বাইরে আর জি কর বা রাজ্যের অন্য কয়েকটি হাসপাতালের যে তথ্য সামনে এসেছে, তা নিয়ে এখনও কোনও আলোচনা হয়নি বলেই জানা গিয়েছে।
রাজ্য সরকারের সব দফতরের কাজকর্ম খতিয়ে দেখতে বিধায়কদের নিয়ে স্ট্যান্ডিং কমিটি রয়েছে। শাসক ও বিরোধী বিধায়কদের নিয়ে গঠিত সেই কমিটির কাজ কী? সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক ও চিকিৎসা-কর্মীদের নিরাপত্তা তো বটেই, সামগ্রিক অব্যবস্থার ছবি স্পষ্ট হওয়ার পরে সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন এই স্ট্যান্ডিং কমিটি রাজ্যের সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে সুবিধা-অসুবিধা খতিয়ে দেখতে পারে। এবং প্রয়োজনে দফতরের সর্বোচ্চ আমলাদের ডেকে যে কোনও বিষয়ে জবাবদিহিও চাইতে পারে। কিন্তু বিধায়কদের এই কমিটি কি তা করে? বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘কোনও দফতরের সমস্যা থাকলে কমিটিগুলি সরকারের নজরে আনতেই পারে। তারা স্বাধীন ভাবে কাজ করে। এই রিপোর্ট তো সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হয়।’’
সাম্প্রতিক অতীতে স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির কোনও পর্যবেক্ষণেই এই আঁচ পাওয়া যায়নি। রাজ্যে ২০২১ সালের নির্বাচনের পরে বিধানসভার গঠিত স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটি এখনও পর্যন্ত চারটি হাসপাতাল পরিদর্শন করেছে। কমিটির অন্যতম সদস্য, মুর্শিদাবাদের বিজেপি বিধায়ক গৌরীশঙ্কর ঘোষের কথায়, ‘‘প্রথম বারের বিধায়ক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ এই কমিটির সদস্য হয়ে ভেবেছিলাম, গঠনমূলক বহু বিষয় সরকারের নজরে আনা যাবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত আমার অভিজ্ঞতা একেবারে উল্টো!’’ বিধানসভার এই কমিটির চেয়ারম্যান তৃণমূল বিধায়ক তথা দলের চিকিৎসক সংগঠনের অন্যতম নেতা নির্মল মাজির সঙ্গে অবশ্য যোগাযোগ করা যায়নি। তৃণমূলের আরও তিন চিকিৎসক-বিধায়ক রয়েছেন এই কমিটিতে। তাঁদের এক জনও কমিটির কাজকর্ম নিয়ে হতাশা স্পষ্ট করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘নিয়মিত পরিদর্শন ও পর্যালোচনার মধ্যে থাকলে সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবায় অনেকটা বদল আনা সম্ভব। কিন্তু তা ঠিক করার দায়িত্বমূলত চেয়ারম্যানের।’’
সূত্রের খবর, পরিষেবা ও প্রশাসন সম্পর্কে তৃণমূলের চিকিৎসক বিধায়কেরা কিছু দিন আগে স্বাস্থ্য দফতরে বেশি কিছু প্রস্তাবও পাঠিয়েছিলেন। তবে সেই আলোচনা খুব বেশি এগোয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy